|
|
|
|
পুরভোটের মুখে চাপানউতোর |
নিয়োগ অবৈধ, চুক্তি খারিজ ৮ জন সহায়িকার |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
কেউ আড়াই বছর কাজ করেছেন। কেউ বা তিন বছর। এতদিন চুক্তিমতো ভাতাও পেয়েছেন। হঠাত্ তাঁরা জানলেন, তাঁদের নিয়োগটাই অবৈধ। তাই রাজ্য সরকার চুক্তি পুনর্নবীকরণ করেনি। এর ফলে কাজ হারিয়েছেন শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের ৮ জন সহায়িকা। পুরভোটের মুখে মেদিনীপুরে এমন ঘটনায় শোরগোল পড়েছে। শহরের একমাত্র পরিদর্শকেরও কাজ গিয়েছে।
এই ৯ জন মহিলাই কাজ ফেরত চেয়ে পুর-কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হয়েছেন। কাজহারাদের মধ্যে রয়েছেন মিতালি পাল, ঝুমা মাইতি, সেতারা বেগম। ঝুমাদেবীদের বক্তব্য, “আমরা প্রায় তিন বছর কাজ করছি। হঠাত্ করে কাজ চলে গেলে পরিবার সমস্যায় পড়বে। পুর-দফতরের কাছে একটাই আর্জি, বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে দেখা হোক।” একমাত্র সহায়িকা ছন্দা চৌধুরীর কথায়, “আমি ২০০৫ সাল থেকে কাজ করছি। কয়েক দিন আগে জানতে পারলাম, আর কাজ নেই। পুর-দফতর বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে দেখলে ভাল হয়।” মেদিনীপুর পুরসভার এক্সিকিউটিভ অফিসার মৃগাঙ্ক বাগ অবশ্য বলেন, “রাজ্য থেকে চুক্তিপত্র পুনর্নবীকরণ করা হয়নি। এ ক্ষেত্রে তো আমাদের কিছু করার নেই।”
নিয়মানুযায়ী, শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের সহায়িকা পদে আবেদন করতে হলে বয়স হতে হয় ৪০ বছরের বেশি এবং ৬০ বছরের কম। শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা মাধ্যমিক বা তার সমতুল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। মেদিনীপুর শহরে মোট ১৫টি শিশুশিক্ষা কেন্দ্র রয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে ৪ জন করে সহায়িকা ছিলেন। শহরে মোট সহায়িকা ছিলেন ৬০ জন। আর একজন পরিদর্শক। পরিদর্শক পদে আবেদন করতে হলে বয়স হতে হয় ৬০-এর বেশি। সহায়িকাদের কেউ ২০০৯ সালে কাজ পান। কেউ ২০১০ সালে। এত দিন দিব্যি চলছিল। বছর বছর চুক্তিপত্রের পুনর্নবীকরণ হয়েছে। সহায়িকারা ভাতাও পেয়েছেন। ঝোলা থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়ল পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর।
চলতি বছরের জুলাই মাসে মেদিনীপুর পুরবোর্ডের মেয়াদ ফুরোয়। ভোট না হওয়ায় পুরসভার প্রশাসক নিযুক্ত হন মহকুমাশাসক (সদর) অমিতাভ দত্ত। এখন তিনিই পুরসভার সব কাজ পরিচালনা করছেন। জানা গিয়েছে, সহায়িকাদের সঙ্গে ২০১৩ সালের মার্চ পর্যন্ত চুক্তি ছিল। এরপর চুক্তি পুনর্নবীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেয়ে পাঠায় পুর-দফতর। এরপরই গলদ ধরা পড়ে। পুর-দফতর দেখে, ৬০ জন সহায়িকার মধ্যে ৮ জনের নিয়োগ হয়েছে বিধি ভেঙে। এঁদের কারও বয়স ৪০ বছরের বেশি নয়। পরিদর্শককে যখন নিয়োগ করা হয়, তাঁর বয়সও ৬০ বছরের বেশি ছিল না। পরিদর্শক-সহ ৯ জনের চুক্তিপত্র তাই পুনর্নবীকরণ করা হয়নি।
কিন্তু এতদিন পরে বিষয়টি জানা গেল কেন? পুরসভাই বা বিধি ভেঙে এঁদের নিয়োগ করেছিল কেন? বিদায়ী পুরপ্রধান প্রণব বসুর দাবি, “আগে এই সার্কুলার ছিল না। এখন যে সার্কুলার এসেছে, তাতে বলা হয়েছে, সহায়িকা পদে আবেদন করতে হলে বয়স হতে হবে ৪০-এর বেশি। এ নিয়ে পুরবোর্ডের আমলে কোনও জটিলতা দেখা দেয়নি। পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরই জটিলতা দেখা দেয়।” বিভিন্ন মহলের অবশ্য অভিযোগ, বিদায়ী পুরবোর্ড তথ্য গোপন করেছিল। না হলে আগেই এই গলদ পুর-দফতরের নজরে আসত। বছর বছর চুক্তি পুনর্নবীকরণ হত না। এ নিয়ে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে তৃণমূল প্রভাবিত এক কর্মচারী সংগঠন। সংগঠনের নেতা সুব্রত সরকারের কথায়, “চাকরি নিয়ে ছেলেখেলা? এ সব আমরা মানব না। ওই ৮ জন সহায়িকা এবং পরিদর্শক চলতি বছরে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কাজ করেছেন। চলতি মাসেও কাজ করেছেন। এই সব মাসের ভাতা কে দেবে?” শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে সহায়িকা নিয়োগ নিয়ে তদন্তেরও দাবি করেছে ওই সংগঠন। |
|
|
|
|
|