ডোমজুড়-জগৎবল্লভপুর
বাস নেই, ঝুঁকি সত্ত্বেও ভরসা ভ্যানো
প্তমীর আনন্দের রাত এক মুহূর্তে বিষাদসিন্ধু হয়ে গিয়েছিল মাকড়দহের বাসিন্দাদের কাছে।
রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ হাওড়া-আমতা রোডে ডোমজুড়গামী বাসের সঙ্গে মাকড়দহের দিকে যাওয়া একটি মোটরভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে মৃত্যু হয় এক শিশু-সহ ছ’জনের।
এর পরে পেরিয়ে গিয়েছে প্রায় দু’সপ্তাহ। কিন্তু অবৈধ হওয়া সত্ত্বেও ওই রাস্তা দিয়ে দিব্যি চলাচল করছে মোটরভ্যান ওরফে ভ্যানো। পুলিশ-প্রশাসন না হয় চোখ বুজে রয়েছে, বিপজ্জনক জেনেও এলাকার মানুষ তাতে উঠছেন কেন?
উত্তরটা সহজ।
ডোমজুড় থানা এলাকায় এমন কিছু জায়গা রয়েছে যেখানে বাস চলে না। চলে না অটো কিংবা ট্রেকার। যাতায়াতের জন্য ভরসা ব্যক্তিগত মোটরবাইক কিংবা সাইকেল। যাঁদের তা নেই, তাঁদের একমাত্র সম্বল তিন চাকার ভ্যানো। ঝালোয়াড়বেড়, বেগড়ি, ধুলোগোড়, জয়চণ্ডীতলার মতো বেশ কিছু এলাকাতেও একই অবস্থা। আবার এমন কিছু রুট রয়েছে, যেখানে নাম-কা-ওয়াস্তে বাস-ট্রেকার চললেও তাদের দেখা মেলা মুশকিল। ডোমজুড় থেকে জগদীশপুর কিংবা মাকড়দহ থেকে আন্দুল অনেক যাত্রীই তাই ঝুঁকি নিয়ে মোটরভ্যানে উঠতে বাধ্য হন।
শুধু ডোমজুড়ই নয়, ভ্যানোয় চেপে যাতায়াত করতে বাধ্য হন জগৎবল্লভপুরের মানুষও। সেখানকার সৌমদীপ টাটের ক্ষোভ, “মুন্সিরহাট থেকে হুগলির ফুরফুরা শরিফ যেতে কোনও বাসরুট নেই। বড়গাছিয়া থেকে উদয়নারায়ণপুর যাওয়ারও বাস নেই বললেই চলে। কিছু ছোট গাড়ি চলে। তাতে বাদুড়ঝোলা ভিড়। ফলে মানুষ বাধ্য হয় ভ্যানোয় চড়তে। মাঝে মাঝে দুর্ঘটনাও ঘটে।” জগৎবল্লভপুর ব্লকের শঙ্করহাটি ২ পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য সৈফুদ্দিন দেওয়ান বলেন, “বর্তমানে হাওড়া থেকে আমতা পর্যন্ত ৩-৪টি বেসরকারি বাস চলে। কালীপুজোর পরে একটি কমে যাবে বলে শুনেছি। তবে কিছু নতুন রুট তৈরির বিষয়ে কথাবার্তা চলছে।”
বাগনানের কাছে মুম্বই রোডে দাপিয়ে চলেছে ভ্যানো। ছবি: সুব্রত জানা।
শুধু যাত্রী পরিবহণই নয়, বহু ক্ষেত্রে পণ্য পরিবহণেরও গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ভ্যানো। পণ্য পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, একই জিনিস ছোট লরি কিংবা অন্য কোনও গাড়িতে করে পাঠাতে যত টাকা খরচ হয়, ভ্যানোয় পাঠাতে খরচ হয় তার অনেক কম। মুন্সিরহাটের শুভাশিস রায় বলেন, “পণ্য পরিবহণের প্রধান মাধ্যমগুলির তুলনায় মোটরভ্যানের ভাড়া কম। প্রত্যন্ত গ্রামের যে কোনও এলাকায় ঢুকে যেতেও পারে। তবে দূষণ ছড়ায়। দুর্ঘটনাপ্রবণও বটে। সরকার যদি এই যান বৈধ করতে চায়, তা হলে এ দিকগুলি ভাবা উচিত।”
মোটরভ্যান চালকদের সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত হুগলির সিঙ্গুর, সীতাপুর, হাওড়ার জগৎবল্লভপুর-সহ বেশ কিছু এলাকায় ভ্যানো তৈরি হয়। দাম ৩৫ থেকে ৪৫ হাজার টাকার মধ্যে। কিন্তু বিপদটা হল, এই গাড়ির গিয়ার নেই। ব্রেক থাকে নীচে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গাড়ি চালানো হয় কাটা তেল, এমনকী কেরোসিনেও। ফলে দূষণ অনিবার্য। ডোমজুড়ের বিডিও তন্ময় কর বলেন, “সমস্যাটা জানি। কিন্তু নতুন রুট চালুর জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের থেকে কোনও লিখিত আবেদন পাইনি। যদি পাই, সেটি সমীক্ষা করার জন্য জেলা পরিবহণ দফতরে পাঠিয়ে দেব।”
যে জায়গাগুলিতে অন্য কোনও পরিবহণ নেই, সেখানে বিকল্প ব্যবস্থা কেন করছে না জেলা পরিবহণ দফতর? জেলায় বেশ কিছু নতুন রাস্তা তৈরি হয়েছে। কিন্তু তাতে বাস চলে না। ভ্যানোই হয়ে উঠেছে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম। হাওড়া জেলা পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, নতুন বাস রুট খোলার ক্ষেত্রে প্রথমে জনপ্রতিনিধি, ও স্থানীয় প্রশাসনিক আধিকারিকদের সুপারিশ প্রয়োজন। তা পেলে তবেই পরিবহণ দফতর সমীক্ষা করে দেখে, সেই রুট চালু করা সম্ভব কি না। সাম্প্রতিক কালে সেই রকম কোনও সুপারিশ আসেনি।
জেলা পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে নতুন বাস রুটের বিষয়ে কোনও আবেদন পাইনি। এটা সত্যি যে, বেশ কিছু রুটে বাসের সংখ্যা কমে গিয়েছে। হাওড়া-ডোমজুড়গামী ৬৩ রুট-সহ বেশ কিছু রুটে বাসের বয়স ১৫ বছরের বেশি হয়ে যাওয়ার কারণে বেশ কিছু বাস বসে গিয়েছে। এই সমস্যা মেটাতে আমরা খুব কম সময়ে বাসের নতুন পারমিট দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।”
ডোমজুড়ের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “আমার বিধানসভা কেন্দ্রের বেশ কিছু এলাকায় বাস রুট নেই। তাই মানুষ ঝুঁকি নিয়ে মোটরভ্যানে চড়ছেন।’’ তাঁর দাবি, “এই সব সমস্যা বাম সরকারের রেখে যাওয়া। আমরা নতুন রুট চালু করার চেষ্টা করছি। তা নিয়ে বৈঠকও হয়েছে।” জগৎবল্লভপুরের বিধায়ক আবুল কাশেম মোল্লা বলেন, “ডোমজুড় ৫৭ নম্বর বাসস্ট্যান্ড থেকে জগদীশপুর হয়ে কলকাতা যাওয়ার একটি রুট তৈরির চিন্তাভাবনা চলছে। সেটি হলে ডোমজুড় থেকে নারনা ও জগদীশপুর যাওয়ার সমস্যা মিটবে। বাসের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়েও চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।”
তত দিন হয়তো ভ্যানোই থেকে যাবে এক মাত্র ভরসার যান।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.