সম্পাদকীয় ২...
ভাবমূর্তি
দেশে জনচক্ষে পুলিশের ভাবমূর্তি কী রূপ, তাহা লইয়া বিতর্কের অবকাশ কম। কালক্রমে পুলিশ প্রশাসনের গতিপ্রকৃতিতে হয়তো কিছু কিছু পরিবর্তন ঘটিয়াছে, কিন্তু তাহাতে এই ভাবমূর্তি বিশেষ পালটায় নাই। পুলিশ মানেই ভয়ংকর কিছু, পুলিশ নিরীহ সাধারণ মানুষদের অভিযোগ লইতে চাহে না, জনসাধারণকে খামখা নির্যাতন করে, সমাজবিরোধীদের সহিত ওঠা-বসা করে, প্রতিবাদীদের দিকে লাঠি-সঙ্গিন উঁচাইয়া তাড়া করে ইহাই আজও বহুলপ্রচলিত ধারণা। ধারণাটি যে সম্পূর্ণ বিনা কারণে গড়িয়া উঠিয়াছে, এমন নহে। নিশ্চয় তাহার কিছু ভিত্তি আছে, মানুষের অভিজ্ঞতালব্ধ তিক্ততা আছে। আবার এই ধারণাটির মধ্যেই আইনরক্ষকদের সম্যক পরিচয় নিহিত আছে, ইহা বলিলেও হয়তো সত্যের অপলাপ করা হয়। পুলিশ অনেক সময়েই নাগরিকবান্ধব আচরণও করিয়া থাকে। কিন্তু ভাবমূর্তি বা ধারণার সহিত লড়াই করা সহজ কাজ নহে। সে জন্য দীর্ঘ প্রচেষ্টা প্রয়োজনীয়।
পুলিশকে নাগরিক-বান্ধব করিয়া তোলার পথে প্রথম পদক্ষেপই হওয়া উচিত তাহার সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণার অপনোদন। পুলিশের মানসিকতা পরিবর্তন না হইলে তাহা সম্ভব নয়। সম্প্রতি কলিকাতা পুলিশের সহকারী কমিশনার ও ইন্সপেক্টরদের লইয়া অনুষ্ঠিত একটি প্রশিক্ষণ শিবিরে এই মানসিকতা পরিবর্তনের উপরেই জোর দেওয়া হইয়াছে। জনসাধারণের সহিত ভাল ব্যবহার করা, অভিযোগকারীর কথা মন দিয়া, সহানুভূতি সহকারে শোনা, আচার-আচরণে নম্র, বিনয়ী, সহমর্মী হওয়া, ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা সহকারে সমস্যার মোকাবিলা করা এই সবই পুলিশের নাগরিক-বান্ধব হওয়ার টোটকা। পুলিশকে কেবল এইগুলি নিয়মিত অনুশীলন করিয়া যাইতে হইবে। দুষ্কৃতীদের প্রতি নির্মম হওয়া এবং নিরীহ মানুষের প্রতি সহৃদয় মৈত্রীর হাত বাড়াইয়া দেওয়ার অভ্যাসও পুলিশকে আয়ত্ত করিতে হইবে। জনসাধারণ যেন পুলিশের কাছে তাঁহাদের অভিযোগ অকপটে জানাইতে ভরসা পান, দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে তাঁহাদের অভিযোগ যেন পত্রপাঠ দুষ্কৃতীদের কানেই পৌঁছাইয়া না যায়, ইহা নিশ্চিত করাও পুলিশের কাজ। দুষ্কৃতীদের বিনাশ এবং সাধুদের পরিত্রাণই উর্দিধারী আইনরক্ষকদেরও ধর্ম হওয়া উচিত, তাহার বিপরীতটা নয়।
পুলিশকে জনসাধারণের বন্ধু করিয়া তোলার এমন প্রয়াস আগেও হইয়াছে। বিশেষত পূর্ববর্তী জমানায় এই মর্মে নানা উদ্যোগও গৃহীত হয়। কিন্তু বিভিন্ন ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা দেখাইয়া দেয়, আইনের শাসন বলিতে পুলিশ ঠিক কী বুঝে। মনে পড়ে, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে একাধিক বার ভর্ত্‌সনা করিতে হইয়াছে, গরিব মানুষ অভিযোগ জানাইতে গেলে পুলিশ কেন তাঁহাদের তাড়াইয়া দেয়, আর সম্পন্ন কেতাদুরস্ত অভিযোগকারীকে দেখিলেই চেয়ার ছাড়িয়া ‘আসুন-বসুন’ করে। কেন করে, তাহা মন্ত্রী বা রাজনীতিকদের না জানিবার কথা নয়। রাজপুরুষদের সমীহ করা এবং ‘রাস্তার লোকেদের’ তুচ্ছ করাই তাহাদের শেখানো হইয়াছে। পুলিশকে শাসক রাজনৈতিক দলের হুকুমবরদার করিয়া রাখার সংস্কৃতি তাহার নিরপেক্ষতাকেও ধ্বংস করিয়াছে। তবে রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট না হইলেও চলে, এমন ক্ষেত্রেও পুলিশ যে শিষ্টের পালন ও দুষ্টের দমনে তত আগ্রহী নয়, ইহাই এখনও রাজ্যের আমজনতার অভিজ্ঞতা। পুলিশের মানসিকতা পাল্টাইবার উদ্যোগ তাই স্বাগত।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.