|
|
|
|
ইমতিয়াজের বাড়িতে লাদেন নিয়ে বই |
প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায় • রাঁচি |
পাড়ায় ধর্মপ্রাণ হিসেবে পরিচিত ছিল বছর পঁচিশের ওই যুবক। গোলমালের ধারেকাছে থাকত না। তার ঘর থেকেই কি না উদ্ধার হল ওসামা বিন লাদেনের ছবি দেওয়া বই!
নিয়ম মেনে যাকে ‘নমাজ’ পড়তে দেখতেন রাঁচির ধুরুয়া এলাকার সিঠিও বস্তির পড়শিরা, সেই ইমতিয়াজ আনসারির ‘জেহাদি’ পরিচয় জেনে তাঁরা হতভম্ভ। সকলের প্রশ্ন, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডার মজলিসে যে হাজির থাকত না, তার সঙ্গে কী করে মুজাহিদিনদের ‘সখ্যতা’ তৈরি হল?
একই জবাব খুঁজছে পুলিশও।
রবিবার দুপুরে পটনায় ধারাবাহিক বিস্ফোরণে নাম জড়িয়েছে ইমতিয়াজের। পটনা স্টেশন চত্বরে বিস্ফোরণের পরই তাকে গ্রেফতার করা হয়। একই ঘটনায় ইমতিয়াজের ভাইপো তৌফিকেরও খোঁজ চলছে। সিঠিও বস্তিতে পাশাপাশি বাড়িতেই থাকে কাকা-ভাইপো। পুলিশি টহলদারিতে আতঙ্ক ছড়িয়েছে সেই মহল্লায়।
রবিবারই ইমতিয়াজের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রেসার-কুকার বোমা তৈরির সরঞ্জাম, ওসামা বিন লাদেনের ছবি দেওয়া বই, কয়েকটি সিডি (উর্দু ক্যাপশন-সহ), জেহাদি নথি।
পুলিশের মুখপাত্র সত্যনারায়ণ প্রধান বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে ইমতিয়াজের যোগাযোগ রয়েছে। মহম্মদ তহসিন আখতার নামে বিহারের সমস্তিপুরের এক জঙ্গিনেতার নেতৃত্বে ইমতিয়াজ এবং আরও চারজন পটনার নানা জায়গায় বোমা রেখেছিল। ধুরুয়ার ওই এলাকায় অল্পবয়সী ছেলেদের মধ্যেও জেহাদি মতবাদ ছড়ানোর চেষ্টা করছিল ইমতিয়াজ।” |
 |
রাঁচিতে ইমতিয়াজ আনসারির বাড়ি থেকে উদ্ধার
হওয়া লাদেনের বই ও জিনিসপত্র। ছবি: প্রশান্ত মিত্র। |
রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার বলেন, “কী ভাবে জঙ্গিদের সঙ্গে তার যোগাযোগ হল তা জানতে রাঁচির সিটি এসপিকে পটনায় পাঠানো হয়েছে। বিহার পুলিশ এখন ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।”
ইমতিয়াজের সঙ্গে গতকালের ধারাবাহিক বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার ভাইপো তৌফিক আনসারিরও।
তাদের সঙ্গে ছিল নমান, হায়দর এবং এনুল আনসারি। ইমতিয়াজ ছাড়া প্রত্যেকেই নাবালক। পুলিশ জানিয়েছে, পটনার রেল স্টেশনে বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে এনুলের। নমান, তৌফিকের খোঁজ চলছে।
ধুরুয়া থানার কাছে রাঁচি-কাররা রোড ধরে কিছুটা এগোলেই বাঁ দিকে লাল মাটির কাঁচা রাস্তা এগোচ্ছে সিঠিও বস্তির দিকে। নামেই বস্তি। আসলে গ্রাম। অধিকাংশ বাসিন্দাই সংখ্যালঘু। সরু গলির একপাশে সবুজ রং-এর দোতলা বাড়ি ইম তিয়াজদের। পঁয়ত্রিশটি ঘর। বাড়ির একতলায় মুদির দোকান। সেখানেই বসেছিলেন ইমতিয়াজের বাবা কামালুদ্দিন আনসারি।
তিনি বললেন, “পরিবারের দু’জনের বিয়ে ছিল। জানতাম ছেলে সেখানেই গিয়েছে। কাল রাতে বাড়িতে পুলিশ এসে বলল ইমতিয়াজকে না কি গ্রেফতার করা হয়েছে। কোথা থেকে কী হল আমি বুঝতেই পারছি না।” প্রতিবেশীরা জানালেন, কামালুদ্দিন একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন। অবসরের পর মুদির দোকান করেন।
ইমতিয়াজের চার ভাই চাকরি করেন। ম্যাট্রিক পাশ করে হায়ার সেকেন্ডারি পড়ছিল ইমতিয়াজ। ব্যবসাও শুরু করেছিল। লাভ না-হওয়ায় চাকরির খোঁজ শুরু করে। টাকার জন্যই সে জঙ্গিদলে ‘নাম’ লিখিয়েছে বলে মনে করছেন গ্রামের লোকজন।
ধর্মভীরু ওই যুবকের এই পরিণতিতে হতাশ গোটা সিঠিও বস্তি। |
|
|
 |
|
|