বিহার পুলিশের বারণ ঠেলেই সভায় যান মোদী
বিবার দুপুর বারোটা বেজে গিয়েছে তখন। বেসরকারি বিমানে নরেন্দ্র মোদী এসে সবেমাত্র নেমেছেন পটনায়। বিহার পুলিশের এক উচ্চপদস্থ অফিসার প্রায় হাঁফাতে হাঁফাতে এলেন মোদীর কাছে। বিহার সরকারের পক্ষ থেকে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীকে বলে পাঠানো হয়েছে: “সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে পটনা স্টেশনে এবং তার পর ১২টা ৫ মিনিটে গাঁধী ময়দানে আর একটা বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে। গাঁধী ময়দানে আরও বোমা থাকতে পারে। আপনি আজ জনসভা করবেন না।”
নরেন্দ্র মোদী কিন্তু কিছুতেই সভা বাতিল করতে রাজি নন। বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে বসে শুরু হল রীতিমতো টানাপোড়েন। এক দিকে মোদী, অন্য দিকে বিহার প্রশাসনের কর্তারা। মোদী বললেন, “একটা রফা হতে পারে। আমার ১২টায় রওনা হওয়ার কথা ছিল। তার জায়গায় পৌনে একটা নাগাদ বিমানবন্দর থেকে রওনা দিচ্ছি।” বিহার পুলিশের কর্তারা মোদীকে বলছিলেন, মঞ্চে টাইমবোমা থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে সময় বদলে দিলে টাইমবোমার হাত থেকে বাঁচা যাবে, এটাই ছিল মোদীর যুক্তি।
আজ সকালে একান্ত আলোচনায় মোদী ঘটনাটি জানিয়ে বললেন, “বিহার পুলিশের আগেই গুজরাতের গোয়েন্দা পুলিশ আমাকে খবর দিয়ে দিয়েছিল। কতগুলি বিস্ফোরণ হয়েছে, কখন হয়েছে সবই আমি জেনে গিয়েছিলাম। কিন্তু জনসভা বাতিলের প্রস্তাবে রাজি হইনি।” কেন?
দু’মাস আগে থেকে ঠিক করা কর্মসূচি। কাতারে কাতারে মানুষ গাঁধী ময়দানে এসে গিয়েছেন। “ওই পরিস্থিতিতে যদি সেখানে না যেতাম, কর্মীরা অশান্ত হয়ে উঠতে পারতেন। তা হলেই বরং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেত। মারদাঙ্গা, হিংসার সম্ভাবনা বেড়ে যেত।”
মোদী জানান, বিমানবন্দরে বিহার প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলার পরেই তিনি রাজনাথ সিংহ, রাজীবপ্রতাপ রুডি, অরুণ জেটলিদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেন, জনসভায় কোনও নেতা বিস্ফোরণ নিয়ে একটি কথাও বলবেন না। যদিও মোদী তখন জানতে পেরে গিয়েছেন, বিস্ফোরণের নেপথ্যে রয়েছে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন। এমনকী ধৃত ব্যক্তির নাম যে ইমতিয়াজ আনসারি, সেটাও তাঁর জানা হয়ে গিয়েছিল। এ-ও জানা ছিল যে, একেবারে মঞ্চের নীচেও একটা বোমা রাখা ছিল। কিন্তু মোদীরা সকলে কথা বলে স্থির করেন যে, এমন কিছু তাঁরা বলবেন না, যাতে বিজেপি কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে সংঘর্ষে নেমে পড়েন। মোদী বলেন, “গত কালের ঘটনার পর বিজেপি নেতারা একজোট ছিলেন। পরিণত মনস্কতার পরিচয় দিয়েছেন। আমি এটা দেখে অভিভূত যে, বিস্ফোরণ সত্ত্বেও বিজেপি কর্মীরা গাঁধী ময়দান ছেড়ে পালাননি।”
মোদী জানান, কে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে সেই নামটা পর্যন্ত গুজরাতের গোয়েন্দারাই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা কর্মীদের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে জানিয়ে দেন। তবে বিহার পুলিশের কর্তারা ইচ্ছা করেই তা সংবাদমাধ্যমকে জানাননি। এই পরিস্থিতিতে মোদী আজও বিজেপি-র রাজ্য নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন, এমন কিছু বলবেন না, যাতে বিস্ফোরণের বিষয়টিকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে বিজেপি-কে কেউ ফের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারে।
গুজরাতে তৃতীয় বার জয় পাওয়ার পরে যখন থেকে দিল্লির মসনদ দখলের দৌড়ে নেমেছেন মোদী, সাম্প্রদায়িক ভাবমূর্তি ঝেড়ে ফেলে নিজেকে বিকাশপুরুষ হিসেবে তুলে ধরাই তাঁর পাখির চোখ। অন্য দিকে বিরোধীদের লক্ষ্য হল, ক্রমাগত মোদীর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা গুজরাত দাঙ্গা তথা সাম্প্রদায়িক রাজনীতির অনুষঙ্গটি জিইয়ে রাখা। সম্প্রতি এনডিএ ছেড়ে বেরনো নীতীশ কুমারও সেই পথেরই পথিক। সেই সূত্রেই নীতীশ প্রশাসনের এক মন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আর পি এন সিংহ, উভয়েই গত কালের ধারাবাহিক বিস্ফোরণের পিছনে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের সম্ভাবনার কথা তুলেছিলেন। তার প্রতিবাদে বিজেপির কিছু রাজ্য নেতা ইসলামি মৌলবাদের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার পরিকল্পনাও নিয়েছিলেন। কিন্তু মোদী এবং জেটলিই তাঁদের নিরস্ত করেন।
ফল? বিরোধীদের আশায় জল ঢেলে গাঁধী ময়দান থেকে এমন কোনও মন্তব্যই ছুটে এল না, যাকে উস্কানিমূলক আখ্যা দেওয়া যায়। মোদী নিজে তাঁর বক্তৃতায় শুধুমাত্র উন্নয়ন এবং রাজনৈতিক সুবিধাবাদকে হাতিয়ার করেই দুরমুশ করলেন নীতীশকে। এমনকী এ দিন ফোনে তিনি এই প্রতিবেদককে এ কথাও বলেন যে, নীতীশের কিন্তু এগিয়ে এসে দু’টো ঘটনার প্রশংসা করা উচিত। এক, বোমা ফাটার পরেও কর্মীদের একটা বিরাট অংশ মাঠ ছেড়ে নড়েননি। আর দুই, অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে এই বিস্ফোরণ নিয়ে কোনও রাজনৈতিক তরজা শুরু করা হয়নি। শান্তি-সম্প্রীতি বজায় রাখতেই যে কাল তিনি ময়দানে হাজির হয়েছিলেন, সেটাও স্পষ্ট করে বললেন।
পটনার ঘটনায় যে আখেরের মোদীরই ফায়দা হল, সে আশঙ্কা কালই প্রকাশ করেছিল কংগ্রেস। আজ সেটাই আরও এক ধাপ বাড়িয়ে দিলেন মোদী।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.