|
|
|
|
ইয়াসিন ভটকলের উত্তরসূরির হাত ধরেই বিস্ফোরণ পটনায় |
সুরবেক বিশ্বাস • কলকাতা |
ইয়াসিন ভটকল ধরা পড়ার দু’মাসের মধ্যেই ভারতে তাদের নতুন নেতা তুলে আনল ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন (আইএম)। পটনায় ধারাবাহিক বিস্ফোরণের তদন্তে নেমে এমনটাই দাবি করছেন গোয়েন্দারা।
গোয়েন্দাদের বক্তব্য, আইএমের নতুন ‘অপারেশনাল চিফ’, ইয়াসিন ভটকলের এই উত্তরসূরির নাম তেহসিন আখতার। ইয়াসিনের গড়া আইএমের দ্বারভাঙা ‘মডিউল’ বা গোষ্ঠীর একেবারে গোড়ার দিকের সদস্যদের অন্যতম সে। পরবর্তী সময়ে ইয়াসিনের ছায়াসঙ্গী হয়ে গিয়েছিল বছর তেইশের ওই যুবক। সেই অর্থে ইয়াসিনেরই হাতে তৈরি সে। বছর দেড়েক আগেই জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) তাকে ধরার জন্য ১০ লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে।
রবিবার পটনায় নরেন্দ্র মোদীর সভাস্থলের কাছে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের মূল চক্রী হিসেবে গোয়েন্দাদের কাছে উঠে এসেছে তেহসিন ওরফে মনুর নাম। অগস্ট মাসে প্রথমে আবদুল করিম ওরফে টুন্ডা ও তার পর ইয়াসিন ভটকল দু’সপ্তাহেরও কম সময়ের ব্যবধানে দুই জঙ্গি চাঁই ধরা পড়ার পরে পুলিশ ও গোয়েন্দাকর্তাদের একাংশ ভেবেছিলেন, দেশ এ বার বেশ কিছু কাল সন্ত্রাসবাদী হানার কবল থেকে রক্ষা পাবে। কিন্তু পটনার ধারাবাহিক বিস্ফোরণ তাঁদের ওই ধারণায় বড় ধাক্কা দিয়েছে বলে গোয়েন্দারাই এখন মেনে নিচ্ছেন। |
|
সোমবার পটনা জংশন স্টেশনে ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য
নমুনা সংগ্রহ এনএসজি কম্যান্ডোর। ছবি: পিটিআই। |
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইনটেলিজেন্স ব্যুরো-র এক কর্তার কথায়, “আইএমের রিজার্ভ বেঞ্চও যে যথেষ্ট শক্তিশালী, সেটা পটনার ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। ইয়াসিন ভটকল ধরা পড়ার পরেও তারা অবলীলায় রবিবার দিনেদুপুরে পটনায় ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ঘটাতে পেরেছে। মাথায় রাখতে হবে, মোদীর সভার জন্য পটনা শহরে রবিবার কিন্তু সাধারণ দিনের তুলনায় নিরাপত্তা বেশি ছিল।”
শুধু তা-ই নয়, তদন্তকারীরা জেনেছেন, পটনায় ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে তেহসিনের নিজের হাতে গড়া আইএমের সম্পূর্ণ নতুন একটি মডিউল বা গোষ্ঠী। গোয়েন্দাদের দাবি, রাঁচির বাসিন্দা ইমতিয়াজ আনসারি ওই গোষ্ঠীরই সদস্য এবং তার সঙ্গে আরও অন্তত ১০-১১ জন ছিল। তারাই তেহসিনের নির্দেশ ও পরিকল্পনা মতো আইইডি রাখা থেকে টাইমার ডিভাইস দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটানো যাবতীয় কাজ করেছে। গোয়েন্দাদের বক্তব্য, বিহারের সমস্তিপুর জেলার মনিয়ারপুর গ্রামের বাসিন্দা, কম্পিউটার ব্যবহারে পারদর্শী তেহসিন এই নতুন মডিউলের পুরোটাই তৈরি করেছে ঝাড়খণ্ডের যুবকদের নিয়ে। ঠিক যেমন কর্নাটকের ভটকলের বাসিন্দা ইয়াসিন বিহারের দ্বারভাঙা জেলার যুবকদের নিয়ে তৈরি করেছিল দ্বারভাঙা মডিউল।
গোয়েন্দাদের একাংশের বক্তব্য, আইএমের কতগুলো মডিউল যে ইতিমধ্যেই এই ভাবে তলে তলে তৈরি হয়ে যে কোনও মুহূর্তে আঘাত হানার জন্য প্রস্তুত রয়েছে, এখন সেই ব্যাপারে অনুসন্ধান চালাতে হবে। একটা সময়ে গোয়েন্দাকর্তাদের কারও কারও ধারণা ছিল, দ্বারভাঙা মডিউল ভেঙে দিয়ে আইএম-কে কোনঠাসা করা গিয়েছে। কিন্তু এখন তাঁরা মনে করছেন, তাঁদের আন্দাজের চেয়েও অনেক বেশি শাখা-প্রশাখা ছড়িয়েছে আইএম। আরও বড় মাপে বিশ্ব জুড়ে যেটা করেছে আল কায়দা।
আইবি-র এক অফিসার বলেন, “ইয়াসিন গ্রেফতার হওয়ার পর সফল ভাবে শুধু ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ঘটানোই নয়, প্রচুর পরিমাণে বিস্ফোরক নিয়ে আসার ক্ষেত্রেও তেহসিন আখতারের তরুণ তুর্কিরা সফল। এর আগে বিস্ফোরক সরবরাহের ক্ষেত্রে ইয়াসিনই প্রধান ভূমিকা নিত। দেখা যাচ্ছে, ইয়াসিন ধরা পড়ার পরেও আইএমের ওই কাজে ভাটা পড়েনি।”
কিন্তু পটনায় রবিবার হওয়া সাতটি বিস্ফোরণে প্রতিটি ক্ষেত্রেই কম মাত্রার (লো ইনটেনসিটি) বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছে। এটা কি সংগঠনে ইয়াসিনের মতো অভিজ্ঞ কারও অনুপস্থিতি ও বর্তমান দুর্বলতার দিকেই ইঙ্গিত করছে না?
তদন্তকারীরা মনে করছেন, কম মাত্রার বিস্ফোরক ব্যবহার করাটা এখন আইএমের বৈশিষ্ট্য। জুলাই মাসে বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণেও কম মাত্রার বিস্ফোরক ব্যবহার করে পর পর ন’টি বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল। তখন কিন্তু ইয়াসিন ধরা পড়েনি। গোয়েন্দারা মনে করেন, ইয়াসিনের নির্দেশে বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল তেহসিন আখতার।
তদন্তকারী এক অফিসারের বক্তব্য, “পটনায় আইএম আট জায়গায় বিস্ফোরক রেখেছিল। বিস্ফোরণ হয়েছে সাত জায়গায়। প্রতিটি ক্ষেত্রে অন্তত আধ কিলো বিস্ফোরক ছিল। বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক হাতে না থাকলে এতগুলো জায়গায় এই ভাবে বিস্ফোরক রাখার ঝুঁকি কেউ নেয় না।” কিন্তু আটটি জায়গায় বোমা না রেখে দু’-একটি জায়গায় বেশি বিস্ফোরক দিয়ে তৈরি আইইডি রেখে বিস্ফোরণ ঘটালে তার প্রভাব তো অনেক বেশি হতে পারত! ওই অফিসার বলেন, “যত বেশি জায়গায় বিস্ফোরক রাখা হবে, পুলিশের পক্ষে উদ্ধার করা তত সমস্যার। কিছু উদ্ধার হলেও কয়েকটি তো ফাটবেই।”
গোয়েন্দারা জেনেছেন, তেহসিন আখতারকে হাতেকলমে এই সব কাজ শিখিয়েছিল ইয়াসিন ভটকল। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনেছেন গোয়েন্দারা। তা হল, ইয়াসিন ভটকল নয়, তেহসিনকে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনে এনেছিল কাতিল আহমেদ সিদ্দিকি। দ্বারভাঙা মডিউলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য কাতিলকে গ্রেফতার করেছিল দিল্লি পুলিশের স্পেশ্যাল সেল। পরে পুণের ইয়েরওয়াড়া জেলে অন্য বন্দিদের হাতে কাতিল খুন হয়। |
|
|
|
|
|