সাতসকালে বাজারের থলে হাতে মাছওয়ালার সঙ্গে দরাদরি। পাশের ক্রেতার নজর পড়ার আগেই টাটকা মাছটা বাগিয়ে নেওয়া। তারপর নাক চাপা দিয়ে মাছের জল ও আঁশে পিচ্ছিল পথ পেরিয়ে থলে হাতে হনহনিয়ে বাড়িমুখো। নিত্য দিনের এই ঝক্কি থেকে বাঁচতে শহুরে ক্রেতারা এ বার ইন্টারনেটে মাছ কেনার দিকে ঝুঁকছেন। আর সেই দৌড়ে নেমেছে কলকাতাও।
মাউসের ক্লিকে বা মোবাইলের বোতাম টিপেই মাছ বাছাই ও কেনাকাটা সেরে ফেলতে শুরু করেছেন শহুরে ক্রেতারা। নেট-মাছ বাজারে দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই এগিয়ে। মৎস্যপ্রিয় বাঙালিও এ বার পা রাখছে সেখানে। পরিসংখ্যান বলছে, গত তিন বছর ধরে বার্ষিক ২০% হারে বাড়ছে এ রাজ্যের ক্রেতা সংখ্যা।
তবে ক্রেতা বাড়লেও বাজারের সংখ্যা বাড়ছে না। কলকাতায় অনলাইন মাছের বাজার এখনও সর্বসাকুল্যে একটি। ২০০৯-এ চালু হয় মাই লোকাল বাজার ডট কম। মুদিখানার যাবতীয় জিনিসপত্রের পাশাপাশি সব্জি, মাছ- মাংস দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার অনলাইন ব্যবস্থা। সংস্থার প্রধান সন্দীপ সেনগুপ্তের দাবি, লাফিয়ে বাড়ছে ক্রেতাসংখ্যা। চাহিদা রয়েছে শহরতলি ও মফস্সলেও। এমনকী এই সুযোগ নিচ্ছেন প্রবাসী বাঙালিরাও। তিনি বলেন, “ভিন্ রাজ্যে বা বিদেশে থাকেন যাঁরা, তাঁরা অনলাইনে অর্ডার দিচ্ছেন কলকাতার বাসিন্দা বয়স্ক বাবা-মায়ের জন্য রুই বা ইলিশ মাছ।”
অবশ্য সন্দীপবাবুর মতে, অন্যান্য জিনিস বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার সঙ্গে টাটকা মাছ সরবরাহ করার ফারাক রয়েছে। সময় মতো না-পৌঁছতে পারলে গুণগত মান ধরে রাখা সম্ভব নয় বলেই তাঁর দাবি। নিজস্ব বন্টন ব্যবস্থা না-থাকলে এই কাজ সহজ নয়। সে কারণেই ব্যবসায় নামার ভরসা করতে পারেন না অনেকে।
সময়ের মধ্যে টাটকা জিনিস সরবরাহ করাই যে এই ব্যবসার মূল চ্যালেঞ্জ, তা জানিয়েছেন অন্য অনলাইন মৎস্য বিক্রেতারাও। সি টু হোম-এর মুখপাত্রের দাবি, কেরল থেকে মাছ সংগ্রহ করা হয়। তা সংরক্ষণ করার জন্য পরিকাঠামো তৈরি করতে হয়েছে। কারণ সংরক্ষণই এই ব্যবসা সম্প্রসারণের চাবিকাঠি । সেই সূত্রেই কেরলের মাছ দিল্লি, বেঙ্গালুরুতে পাঠিয়ে নিয়মিত ক্রেতার সংখ্যা ১০০০ ছাড়িয়েছে বলে সি টু হোম-এর দাবি।
পাশাপাশি ক্রেতাদের বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে অনলাইন মাছের বাজার। যেমন মুম্বইয়ের ফ্রেশ ফিশ ইন্ডিয়া দিচ্ছে পণ্য বদলে নেওয়ার সুবিধা। ক্রেতার পছন্দ না-হলে জিনিস ফিরিয়ে নেবে তারা। তার বদলে নতুন করে পৌঁছে দেওয়া হবে অন্য মাছ। এই সংস্থা অবশ্য মূলত সামুদ্রিক মাছ ও খাবার সরবরাহ করে। |