শেষ মুহূর্তে কোনও পরিবর্তন না হলে, এ বার প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রধান অতিথি হতে চলেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। চিনের সঙ্গে ভারতের নরম-গরম সম্পর্কের প্রেক্ষিতে, এই বিষয়টি কূটনৈতিক ভাবে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
সদ্য চিন সফর করে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। আগামী মাসে শ্রীলঙ্কা সফরের পরই তাঁর বিদেশ যাত্রা শেষ। এ বার বিদেশনীতি রূপায়ণের প্রশ্নেও আসবে যতি। লোকসভা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি শুরু হয়ে যাবে দেশে।
কূটনৈতিক সূত্রে খবর, এই প্রেক্ষিতে ভোটে যাওয়ার আগে জাপানের সঙ্গে সখ্যের ছবিটিকে দৃঢ় করে এশিয়ার দেশগুলিকে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক বার্তা দিতে চাইছে মনমোহন সরকার। ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনের জুজুকে তোয়াক্কা না করে জাপানের সঙ্গে অক্ষকে মজবুত করতে চায়। শিনজো আবেকে আমন্ত্রণের পিছনে সেটাই নয়াদিল্লির উদ্দেশ্য। নভেম্বর মাসের শেষে সাত দিনের ভারত সফরে আসছেন জাপানের সম্রাট আকিহিতো-ও। জাপানি মন্ত্রিসভা জানিয়েছে, ভারতের সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক জোরদার করতে এই সফরকেও কাজে লাগানো হবে।
সম্প্রতি চিনের বাড়াবাড়ির বিরুদ্ধে কার্যত জেহাদ ঘোষণা করেছেন আবে। একটি মার্কিন সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, চিনের বাড়াবাড়ি রুখতে এশিয়ার অন্য দেশগুলিকে আরও সক্রিয় হতে হবে। সেনকাকু দ্বীপ নিয়ে প্রবল বিরোধিতা রয়েছে চিন ও জাপানের মধ্যে। আবের বক্তব্য, “আইনের পথে না গিয়ে সামরিক শক্তির সাহায্যে চিন গোটা অঞ্চলের স্থিতাবস্থা বদলে দিতে চাইছে।” বেজিংও চুপ করে বসে নেই। তাদের বক্তব্য, চিনা স্বয়ংক্রিয় বোমারু বিমান টোকিও গুলি করে নামিয়ে দিয়েছে। চিনা বিদেশ মন্ত্রকের মতে, ঘটনাটি ‘যুদ্ধের সামিল।”
ঠিক এই সময়েই আবেকে বিশেষ সম্মান দিতে চাইছে ভারত। লাদাখে চিনা সেনার অনুপ্রবেশ-সহ বেশ কয়েকটি ঘটনায় চলতি বছরে ধাক্কা খেয়েছে ভারত-চিন সম্পর্ক। জাপানের সঙ্গে সখ্য চিনকে চাপে রাখবে বলে আশা নয়াদিল্লির। আবার জাপানও চায়, নয়াদিল্লির সাহায্যে এশিয়ায় ভারসাম্য রক্ষা করতে। ভারতই প্রথম রাষ্ট্র যাকে একটি বিশেষ ধরনের যুদ্ধজাহাজ বিক্রি করছে টোকিও। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রফতানির ক্ষেত্রে অত্যন্ত সাবধানী টোকিও। তাই নয়াদিল্লিকে ক্ষেপণাস্ত্র ও যুদ্ধজাহাজ বিক্রি জাপানি কূটনীতিতেও মাইলফলক বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। চিনকে রুখতে দক্ষিণ কোরিয়া ও মঙ্গোলিয়ার মতো দেশগুলির সঙ্গেও নিরাপত্তা যোগাযোগ বাড়াচ্ছে ভারত। সাউথ ব্লক সূত্রে খবর, প্রজাতন্ত্র দিবসে জাপানি প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ এই সার্বিক পরিকল্পনারই অঙ্গ। |