ভোট মিটেছে প্রায় তিন মাস আগে। কিন্তু এখনও বোর্ড গঠন হয়নি জামুরিয়া পরাশিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে। ফলে, সমস্যায় গ্রামবাসীরা।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে এই পঞ্চায়েতটি ছিল সিপিএমের দখলে। সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই পঞ্চায়েত দখল করে তৃণমূল। তারা পায় ৪টি আসন, সিপিএম পায় ৩টি। কিন্তু তৃণমূলের সদস্যরা দুটি গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে যাওয়ায় আটকে আছে প্রধান নির্বাচন ও উপ-সমিতি গঠন। তৃণমূল সূত্রে খবর, ওই পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য সন্তোষ বাউড়ি, রাজমুনি যাদব বর্তমানে জামুড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য উদীপ সিংহের অনুগামী। অন্য দুই সদস্য লক্ষ্মীনারায়ণ মণ্ডল ও সান্ত্বনা বাউড়ি স্থানীয় তৃণমূল নেতা কল্যাণ ঘোষের অনুগামী। বোর্ড গঠনের দিন রাজমুনি যাদব সন্তোষবাবুর এবং সান্ত্বনাদেবী লক্ষ্মীনারায়ণবাবুর নাম প্রস্তাব করেন। দ্বিতীয় দিন সান্ত্বনাদেবী লক্ষ্মীনারায়ণের নাম প্রস্তাব করলেও অন্য দু’জন তাঁদের সর্মথন করেননি। ফলে স্থগিত হয়ে যায় বোর্ড গঠন।
নির্বাচিত কোনও প্রধান না থাকায় এলাকায় লাটে উঠেছে পরিষেবা। একশো দিনের কাজ ছাড়া কিছুই প্রায় হচ্ছে না বলে অভিযোগ। পরাশিয়ার বাসিন্দা, বিপিএল তালিকাভুক্ত মমতা বাউড়ি জানান, দু’সপ্তাহেরও বেশি বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তাঁর অভিযোগ, “নতুন প্রধান হয়নি। ফলে বিপিএল শংসাপত্রও মিলছে না। কেউ মানতেই চাইছিলেন না, এখনও বোর্ড গঠন হয়নি। শেষে আগের প্রধানের দেওয়া শংসাপত্রেই কাজ হয়।” গ্রামবাসীদের আবাসিক শংসাপত্র পেতে প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে যেতে হচ্ছে জামুরিয়ার ব্লক দফতরে।
সিপিএমের অজয় জোনাল কমিটির সম্পাদক মনোজ দত্ত বলেন, “রাস্তা সংস্কার, ইন্দিরা আবাস, নিকাশি জনিত সব কাজই আটকে আছে। শাসক দলের নেতাদের নিজেদের ঝগড়ার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। যদিও তাঁদের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের তাতে কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই।”
পঞ্চায়েতের দখল নিয়ে এই দ্বন্দ্বের কারণ কী? তৃণমূলের একট সূত্রের দাবি, মূলত এলাকায় কয়লার পরিবহণের জন্য লোডিংয়ের দায়িত্ব নিয়ে এই কোন্দল। কল্যাণ ঘোষের গোষ্ঠী লোক লাগিয়ে গাড়িতে কয়লা বোঝাইয়ের পক্ষপাতি। উদীপ সিংহের অনুগামীরা আবার সে কাজ করতে চান যন্ত্রের মাধ্যমে। দু’পক্ষই মনে করছে, এ ব্যাপারে প্রভাব বজায় রাখতে গেলে প্রধান পদটি জরুরি। তাই প্রধানের প্রশ্নে কেউ এক ইঞ্চিও জমি ছাড়তে নারাজ। স্থানীয় বাসিন্দাদের একংশের আবার দাবি, এলাকায় অবৈধ কয়লা কারবারের উপরে নিয়ন্ত্রণ কায়েমও এই গোলমালের পিছনে একটি কারণ।
কল্যাণবাবুর বক্তব্য, “কোলিয়ারিতে স্থানীয় বাসিন্দাদের দিয়ে কয়লা বোঝাইয়ের দাবিতে আমরা পঞ্চায়েত নির্বাচনের ছ’মাস আগে থেকে লড়াই করছি। বিষয়টি দলের উচ্চ নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে।” তাঁর দাবি, দলের মধ্যেই দু’রকম আন্দোলনের জেরে পরাশিয়ায় কয়লা বোঝাই বন্ধ রয়েছে। তৃণমূল নেতা উদীপ সিংহ শুধু বলেন, “যা জানানোর উচ্চ নেতৃত্বকে লিখিত ভাবে জানিয়েছি।” অবৈধ কয়লা কারবারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দ্বন্দ্বের কথা অবশ্য কোনও পক্ষই মানতে চায়নি।
তৃণমূলের জামুড়িয়া ২ ব্লক সভাপতি তথা জেলা পরিষদ সদস্য তাপস চক্রবর্তীর আশ্বাস, “উচ্চ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা হয়েছে। শীঘ্রই ওই পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন করা হবে।” জামুড়িয়ার বিডিও বুদ্ধদেব পান বলেন, “আমরা ব্লক অফিস থেকে প্রায় সব পরিষেবা দেওয়ারই চেষ্টা করছি।” |