|
|
|
|
উত্তরের চিঠি
|
|
উন্নয়নের আবেদন |
সারা পশ্চিমবাংলার ১৭টি জেলার মধ্যে সবচেয়ে অবহেলিত ও বঞ্চিত দক্ষিণ দিনাজপুর। তিন দিক বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেরা এই জেলার অবহেলার চূড়ান্ত নিদর্শন ভারতীয় রেল ব্যবস্থা। বালুরঘাট, গঙ্গারামপুর, বুনিয়াদপুর ও দৌলতপুর রেল স্টেশনের অবস্থা খুবই শোচনীয় এবং এই স্টেশনগুলির দীর্ঘদিন উন্নয়ন হয়নি। নেই কোনও সিগন্যালিং ব্যবস্থা। আট বছর ধরে ঝুঁকি নিয়ে রেল সফর করতে হচ্ছে রাজ্যের সীমান্তবর্তী একটি জেলার ১৭ লক্ষ মানুষকে। ২০০৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর বালুরঘাটে ট্রেন চালু হয়। সেই থেকে রেল পুলিশের আওতার বাইরে রেখে দিব্যি বালুরঘাট থেকে মালদহ ৮৬ কিমি দীর্ঘ রেলপথে ট্রেন চালাচ্ছেন উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেল কর্তৃপক্ষ। রেল দফতর সূত্রে জানা গেছে বালুরঘাট থেকে হিলি পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারণ হলেই একলাখি-বালুরঘাট লাইনে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিং চালু হবে। জিআরপি-র অন্তর্ভুক্তির জন্য বোর্ডে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে বালুরঘাট থেকে সপ্তাহে ছয় দিন ভোর সাড়ে ৫টায় চলে বালুরঘাট-কলকাতা ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস। রোজ চলে ভায়া মালদহ হয়ে কাটিহার পর্যন্ত ডি এম ইউ ট্রেন এবং জলপাইগুড়ি ইন্টারসিটি। বিকেলে গৌড় লিঙ্ক।
দক্ষিণ দিনাজপুরে রেল পরিষেবার উন্নতির দাবিতে সরব হয়েছেন বিভিন্ন সংস্থা, সংগঠন ও ব্যবসায়ী সমিতি। জেলায় রেল চালু হওয়ার পরে কয়েক বছর কেটে গেলেও জেলার রেল পরিষেবার বাস্তব কোনও উন্নয়ন হয়নি। একটি মাত্র ছোট ওয়েটিং রুম ছাড়া বালুরঘাট স্টেশনে যাত্রীদের বসার ব্যবস্থা করে দেওয়ার সৌজন্য দেখাননি উত্তর পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ। এই জেলায় নর্থ ফ্রন্টিয়ার রেলওয়ের কাটিয়ার-মালদহ-বালুরঘাট রুটে ডেমু ট্রেনের পরিষেব তলানিতে। ট্রেনের সারা শরীর বিবর্ণ এবং সঙ্গে সঙ্গে-এর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নিত্য দিন ভোগাচ্ছে যাত্রীকে। ডেমু ট্রেনের অধিকাংশ টয়লেট দুর্গন্ধে ভরা জলে ভরে থাকে। টয়লেটের অরুচিকর দৃশ্য ঘেন্নায় বমি চলে আসতে পারে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন ডেমু ট্রেনের চালক, গার্ডদের বক্তব্য, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিক বার জানিয়েও ফল হয়নি। যাত্রীদের অভিযোগ ও ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় চালক, গার্ডদের এমনকী টিকিট পরিক্ষকদের। বালুরঘাট থেকে একটি ইঞ্জিনে একাধিক ট্রেন চালানো হচ্ছে। শিয়ালদহ স্টেশন থেকে রাতে রওনা দিয়ে সকালে মালদহে পৌঁছানোর পর যে ইঞ্জিন লিঙ্ক ট্রেনের বগিগুলি মালদহ থেকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে বালুরঘাটে সেখানে পৌঁছেই তাকে ছুটতে হচ্ছে নিউ জলপাইগুড়িতে ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস হয়ে। সেখান থেকে নাম বদলে যাচ্ছে আলিপুরদুয়ার। পর দিন আলিপুরদুয়ার থেকে নিউ জলপাইগুড়ি। তার পর ইন্টারসিটি হয়ে বালুরঘাট। বালুরঘাটে এসেও তার ছুটি নেই। কারণ সেখানে তার জন্য অপেক্ষা করে আছে গৌড় লিঙ্ক। তাকে নিয়ে মালদহ পৌঁছে তবে ছুটি ইঞ্জিনের। এই অবস্থায় রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীর সদিচ্ছার অপেক্ষায় রয়েছেন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাবাসী।
জয়দীপ গুহ। বালুরঘাট
|
সাফল্যের পরেই বিপদ তাই প্রয়োজন সংরক্ষণ |
‘পায়ের তলায় সর্ষে’ নিয়ে বাঙালি সেই কবেই রওনা দিয়েছে জানা কিংবা অজানার উদ্দেশ্যে। ‘জানতে জানতে চেনা’ আর ‘চিনতে চিনতে জানা’য় বিশ্বভ্রমণিক বাঙালির জুড়ি মেলা ভার। শুধু পশ্চিমবঙ্গ কিংবা ভারতে নয় সমগ্র পৃথিবীই বাঙালির ‘ফুটপ্রিন্ট’-এর সঙ্গে পরিচিত। তা সে সুইত্জারল্যান্ড হোক, টেমরে পাড় বা মাসাইমারার জঙ্গল। বাঙালির সেই ঝাঁক এখন অন্য কিছু ভুলিয়া/ দেখা হয় নাই দুই চক্ষু মেলিয়া বোধদয়ে ডুয়ার্সের দিকে দিয়েছে প্রকাণ্ড এক লাফ। এ ক্ষেত্রে প্রাচ্যের পদাঙ্ক অনুসরণ করে পাশ্চাত্যেও পিছিয়ে নেই। বিদেশিদের কাছে দার্জিলিং তো ছিলই আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসাবে, এখন তার প্রায়োরিটি লিস্টে ঢুকে পড়েছে মোহময়ী ডুয়ার্স। তার রূপ, রস সৌরভে এখন নতুন জানালা খুলে গিয়েছে অর্থনীতির। অর্থনীতির একটা নিজস্ব ডায়নামিক্স আছে। সম্পদের কাযর্কারিতা তত্ত্বে মিশে থাকে অর্থাগমের হদিস। সে দিক থেকে ডুয়ার্স এখন ‘হট অ্যান্ড হ্যাপেনিং’। পর্যটনে যাদের ‘পর্যটক’ বলে তাদের ডেস্টিনেশন হিসাবে জলদাপাড়া, গরুমারা, বক্সা, জয়ন্তী ছিলই। ছিল কুঞ্জনগর, চালসা, মেটেলি, সামসিং। ধীরে ধীরে যুক্ত হয়েছে ধুপঝোরা, গরুবাথান, চিলাপাতারা। আর এখন তাতেও হচ্ছে না। পর্যটকদের চাহিদায় ‘স্থিতিস্থাপকতা’ আনতে নতুন নতুন স্পট যুক্ত হচ্ছে। বোদাগঞ্জ, রামসাই, গাজোলড়োবা, ঝান্ডি, বিধাননগর, ঘুট্টিমারিতে হচ্ছে রিসর্ট কিংবা ইকো-কটেজ। মানুষ খুঁজছে অ্যাডভেঞ্চার, খুঁজছে নতুনত্ব, খুঁজছে নির্জনতা। তার জন্য তারা খরচের কথা জাস্ট পরোয়া করছেন না। তাই ব্যবসা-বাণিজ্য, কর্মসংস্থানের পালে হাওয়া লাগতে শুরু করেছে। ফাঁকা, নির্জন জায়গা ভরে যাচ্ছে মানুষের ভিড়ে। জঙ্গলের নিস্তব্ধতায় বাজছে কোলাহলের বাজনা। বাড়ছে আবর্জনা। বাড়ছে প্রকৃতি-পরিবেশের নিয়মকে তোয়াক্কা না করার শিভালরি। বাড়ছে দূষণ। বাড়ছে পরিবেশ অবক্ষয়। প্রকৃতির অনন্য উপাদান, বিবিধ জীবন বৈচিত্রের বাসবাসযোগ্য পরিবেশ হচ্ছে বিপন্ন। ইকোলজিকাল ট্যুরিজমের নামে মুখ্য ও মোক্ষ হচ্ছে ‘বিজনেস ট্যুরিজম’।
যে রিসর্টগুলো গজিয়ে উঠছে, তা কি পরিবেশের সংরক্ষণের বার্তা ছড়াচ্ছে? প্রশাসন দেখতে তো! চোখ খুলে না চোখ বুজে! প্রশাসনও কি পরিবেশ-বান্ধব না পরিবেশ-নিরক্ষর? নাকি অর্থোপার্জনের খোলা হাওয়ায় গা ভাসিয়েছেন, দিচ্ছেন প্রকৃতি হরণ করবার ‘নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা’! বুঝতে হবে সুস্থ থাকতে হলে, নিজে ভাল থেকে সন্তানকে ‘দুধে ভাতে’ রাখতে গেলে প্রকৃতি-পরিবেশকে মাথায় করে রাখতে হবে। নইলে বন্ধ হয়ে যাবে উন্নতির পথ। নানা পর্যটন সম্ভাবনা উত্তরবঙ্গের নিজস্ব অর্জন, ডুয়ার্সকে প্রকৃতি দেবীর দান। তাই পর্যটন এবং পর্যটক ‘সুস্বাগতম’ কিন্তু পরিবেশ, যা আমাদের ‘Existance’-এর ভয়ঙ্কর বার্তা মনে করিয়ে দেয় তাকে ভুলে থাকা! নৈব নৈব চ।
তুহিনশুভ্র মণ্ডল, বালুরঘাট |
|
|
|
|
|