বৃষ্টিতে ভাসল গোবরডাঙা, ত্রাণ শিবিরে ঠাঁই দুর্গত
বেহাল নিকাশি ব্যবস্থা এবং যমুনা নদীর সংস্কার না হওয়ায় কয়েক দিনের লাগাতার বৃষ্টিতে এ বারও জলমগ্ন হল গোবরডাঙা পুরসভার প্রায় ১১টি ওয়ার্ড। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশ কিছু বাড়ি। ঘর ছেড়ে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন বহু মানুষ। বিভিন্ন ওয়ার্ডে কোথাও এক ফুট, কোথাও বা তিন ফুট জল দাঁড়িয়ে। সেই জলে পা ডুবিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। কবে, ওই নদী এবং এলাকার নালা ও খাল সংস্কার হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগীরা।
সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশ্বাস, “যমুনা সংস্কারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বৃষ্টি থামলে নদী থেকে পলি তুলে পূর্ণাঙ্গ সংস্কার করা হবে।” উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সভাধিপতি রহিমা মণ্ডল বলেন, “শীঘ্রই যমুনা নদীর অবস্থা পরিদর্শনে যাব। চেষ্টা করব ১০০ দিনের কাজের মাধ্যমে তা সংস্কার করানোর। না হলে জেলাশাসকের সঙ্গে আলোচনা করে অন্য ব্যবস্থা করা হবে।”
বহু দিন হল মজে গিয়েছে যমুনা। আগে বর্ষার জমা জল বিভিন্ন নিকাশি নালা ও খাল হয়ে যমুনা হয়ে বেরিয়ে যেত। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরেই পাল্টে গিয়েছে পরিস্থিতি। বৃষ্টি বেশি হলেই বিভিন্ন ওয়ার্ড জলমগ্ন হওয়াটাই ভবিতব্য বলে ধরে নিয়েছেন বাসিন্দারা। তাই বর্ষার মরসুম শুরু হলেই তাঁদের আতঙ্কও শুরু হয়। কেননা, ঘর ছেড়ে তখন তাঁদের আশ্রয় নিতে হয় ত্রাণ শিবিরে।
৮ নম্বর ওয়ার্ডের সুভাষপল্লির মাঠপাড়ায় শান্তনু হালদারের তোলা ছবি।
এ বছর দুর্গাপুজো পর্যন্ত পরিস্থিতির অবনতি না হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিলেন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বৃদ্ধা চারুবালা বড়াল এবং তাঁর মতো অনেকেই। তাঁরা ভেবেছিলেন, এ বার হয়তো ত্রাণ শিবিরে যেতে হবে না। কিন্তু গত ক’দিনের বৃষ্টি তাঁদের জন্য ফের দুর্ভোগ ডেকে আনল। চারুবালাদেবীর মতো ১, ২, ৩, ৪, ৯-সহ পুরসভার অন্তত ১১টি ওয়ার্ডের প্রায় ৫০টি পরিবারকে আশ্রয় নিতে হয়েছে সুভাষ বিদ্যামন্দির জিএসএফপি স্কুলের ত্রাণ শিবিরে।
চারুবালাদেবী বলেন, “লাঠি ছাড়া চলতে পারি না। ঘর ছেড়ে ত্রাণ শিবিরে আসতে খুবই কষ্ট হয়। যমুনা নদীতে যখন স্রোত ছিল, তখন বানভাসি হতে হত না।” ওই ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়া সুকুমার দাসের কথায়, “এখন বৃষ্টির জমা জল বেরিয়ে যাওয়া দূরের কথা, উল্টে যমুনার জল উপচে লোকালয়ে ঢুকছে। চার দিন হয়ে গেল ত্রাণ শিবিরে এসেছি। ত্রাণ মেলেনি। যমুনা নদী এবং কঙ্কনা বাওড় ও রত্না খালের পূর্ণাঙ্গ সংস্কার প্রয়োজন। না হলে সমস্যা মিটবে না।”
গোবরডাঙা পুরসভা তৃণমূলের দখলে। স্থানীয় তৃণমূল নেতারা রবিবার জলমগ্ন এলাকা ঘুরে দেখেন। দলের জেলা পর্যবেক্ষক তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “সরকারি তরফে জেলায় রবিবার থেকেই দুর্গতদের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।” পুরপ্রধান সুভাষ দত্ত বলেন, “যমুনার পাড়ে থাকা কয়েকটি পঞ্চায়েতের প্রতিনিধি এবং পুরসভার তরফে যৌথ ভাবে সেচমন্ত্রীর কাছে যমুনা সংস্কারের আবেদন করা হয়েছে। মন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।” পুরসভার উন্নয়ন কমিটির চেয়ারম্যান শঙ্কর দত্ত বলেন, “পুরসভার প্রায় ১০ হাজার মানুষ জলমগ্ন হয়েছে পড়েছেন। সম্পূর্ণ বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এক হাজারেরও বেশি বাড়ি। সাহায্যের জন্য জেলাশাসকের কাছে আবেদন করা হয়েছে। দুর্গতদের ত্রিপল, চিঁড়ে, গুড় দেওয়া হচ্ছে।” স্থানীয় পাকাঘাট কলোনি, মিলন কলোনি, যমুনা কলোনি, পিলখানা, নেতাজিনগর, গান্ধর্বপাড়া, এলাকার মানুষ জলবন্দি। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কয়েক বছর আগে যমুনা থেকে দু’বার পলি তোলা হলেও তার সুফল মেলেনি। পলি বৃষ্টিতে ফের নদীতে মিশে যায়। তা ছাড়া, অবৈধ ভাবে নদী ঘিরে বাগদা চাষের জন্যও স্রোত স্বাভাবিক গতি হারাচ্ছে।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.