‘আশিতে আসিও না’-র সেই গানটা গাইবেনই গাইবেন রুমা গুহঠাকুরতার কন্যা শ্রমণা চক্রবর্তী। ‘তুমি আকাশ এখন যদি হতে...’! রোম্যান্টিক মান্নার
সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় রুমা গেয়েছিলেন, ‘তুমি ময়দা এখন, যদি হতে জলখাবারে লুচি বেলতাম’।
মান্না দে-কে শেষ দেখা দেখতে না-পাওয়ার দুঃখটা কলকাতা বা বাংলার একার নয়! এ শহর থেকে প্রায় ১৯০০ কিলোমিটার দূরের বেঙ্গালুরুর অনেকেও শেষযাত্রায় থাকতে পারেননি। কাজের দিনে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রিয় শিল্পীর শেষকৃত্য চুকে যাওয়ার দুঃখটা তাঁদেরও কষ্ট দিচ্ছে।
মান্নার স্নেহভাজন বিশ্বাস দম্পতির মধ্যে অলোক বিশ্বাস সে-দিন শহরেই ছিলেন না। তাঁর স্ত্রী অরুন্ধতী অবশ্য গিয়েছিলেন। শ্রমণাও রবীন্দ্র কলাক্ষেত্রে ‘মান্নাজেঠু’কে দেখতে গিয়েছিলেন। বেঙ্গালুরুতে বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট রুনু রায়, উজ্জয়িনী চৌধুরী, মালা রায়েরা শ্মশানে গলা মেলান ‘আগুনের পরশমণি’তে।
রুনু বলছিলেন, “যাঁরা সে-দিন ছিলেন, ছিলেন না সবাইকে নিয়েই ৯ নভেম্বর (শনিবার) আমরা অ্যাসোসিয়েশনের প্রেক্ষাগৃহে জড়ো হব।” আর ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার কর্ণধার অলোক-অরুন্ধতীর ঘোষণা, ইন্দিরানগর সঙ্গীতসভায় ৮ ডিসেম্বর পূর্ণাঙ্গ ভাবে হবে মান্না-স্মরণের আয়োজন। মান্নার শিষ্য মুম্বইয়ের সূর্য মুখোপাধ্যায়, বিভিন্ন ফাংশনে তাঁর সহযোগী শিল্পী দিব্যা রাঘবন, অর্চনা উডুপারাই আসবেন। কর্নাটকের সংস্কৃতি জগতের বিশিষ্টরা অনেকেই বেঙ্গালুরুতে মান্নার নামে কোনও স্থায়ী স্মারক বা প্রতিষ্ঠান তৈরির কথা ভাবছেন। এ বিষয়ে কর্নাটক সরকারকে নির্দিষ্ট প্রস্তাব দেওয়া হবে বলে ঠিক হয়েছে।
প্রায় ৬০ বছর মুম্বইয়ে কাটিয়ে প্রধানত মেয়ের কাছাকাছি থাকবেন বলেই ১৩ বছর আগে বেঙ্গালুরুতে থাকতে গিয়েছিলেন মান্না। মান্নার ‘জোহরাজবি’ সুলোচনা ওরফে সুলুও বেঙ্গালুরুর মেয়ে। জীবনের শেষ অধ্যায়টিতে অশীতিপর তারকা-শিল্পী সাধারণ নাগরিকের মতোই বাঁচতে ভালবাসতেন। অটোয় ঘুরে কত্তা-গিন্নিতে দক্ষিণ ভারতীয় থালি চাখতেন। পাঁচ টাকার সফ্টি আইসক্রিমের লোভে গাড়ি নিয়ে বেরোতেন। গভীর মনোযোগ দিয়ে সেরা মাছ-মাংসের খোঁজ করতেন। বিশ্বাস দম্পতি বলছিলেন, “আমরা তিরিশ বছর বেঙ্গালুরু আছি ঠিকই! বিটিএম লেআউটে সেরা খাসির মাংসের দোকানটা কিন্তু আমাদের মান্নাদা-ই চিনিয়েছিলেন।”
বড়সড় অনুষ্ঠান ছাড়াও বাঙালিদের আবদারে মান্না সাড়া দিয়েছেন বারবার। ক’বছর আগে চাঁদসেরি হোটেলের বিজয়া সম্মিলনী-র আড্ডায় নিজেই হাজির হয়েছিলেন গানের ডায়েরি হাতে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনীদের অনুষ্ঠান বা তরুণ আইটি পেশাদারদের সরস্বতী পুজোও মান্নাকে পেয়েছে।
সে বার আলসুর লেকের কাছে বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশনের ভবনে কী একটা প্রদর্শনীর ফিতে কাটতে এসেও তুমুল বকাবকি! ‘এ কী কাণ্ড, আমার জন্য একটা হারমোনিয়ামও রাখনি!’ অলোকের কথায়, “আমাদের আড্ডা বা ছোটখাটো আসরের জন্য ওঁকে টাকার কথা বলতে গেলে বোধহয় আমায় দু’ঘা কষিয়ে দিতেন!” কাবেরীতে মিশে গিয়েছে গঙ্গাপারের শিল্পীর চিভাভস্ম। টুকরো স্মৃতির কোলাজে আইটি-নগরী এখন মান্না দে-ময়। |