|
|
|
|
অকাল নিম্নচাপে ডুবল ধান, ভাসল সব্জি |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
জমি থেকে সবে জল নামতে শুরু করেছিল। কিন্তু শুক্রবার থেকে দু’দিনের লাগামহীন বৃষ্টি ফের ডুবিয়ে দিল দক্ষিণবঙ্গের ধান-সব্জির খেত। ফুলে ওঠা নদীর জল আলপথ ডিঙিয়ে ভাসিয়ে দিল জমি। বর্ষা আনুষ্ঠানিক ভাবে বিদায় নিলেও তাই সব্জি চাষি থেকে মধ্যবিত্ত, সকলেই ভরাডুবির মুখে।
শনিবার রাজ্যের কৃষি প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেন, “সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে ইতিমধ্যেই দুই মেদিনীপুর, হাওড়া ও হুগলি জেলায় মোট ৮০ হাজার ৪০০ হেক্টর জমির চাষের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষির সংখ্যা ৪৭ লক্ষ ২ হাজার ১৩৩ জন।” ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা কৃষি দফতরের। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের বিনামূল্যে মিনিকিট, সার, বীজ দেওয়া হবে বলে বেচারাম আশ্বাস দিয়েছেন।
এ দিন সকালেই ফসল বাঁচাতে মাঠ থেকে জল বের করতে নেমে পড়েন। কিন্তু ক’দিন ধরে টানা রোদ না পেলে সব্জিগাছ বাঁচানো যাবে কি না তা নিয়ে বেশ সংশয় রয়েছে। বর্ধমানের সহকারী কৃষি অধিকর্তা পার্থ বসু বলেন, “টানা বৃষ্টিতে সব্জি চাষের বড় ক্ষতি হয়েছে। এরপর রোদ উঠলেই খেতে ‘গোড়াপচা’ রোগের সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে। তাতেও উৎপাদন মার খাবে।” |
কাটা আউশ ধান ডুবেছে জলে। ভাতারের ওরগ্রামে। ছবি: উদিত সিংহ। |
পাঁশকুড়ার মহতপুর গ্রামের চাষি গণেশ মাইতির আড়াই বিঘে জমির আমন ধান পেকে গিয়েছিল। তিনি বলেন, “তিন দিন পরেই ধান কাটব বলে ঠিক করেছিলাম। কিন্তু শুক্রবারের বৃষ্টিতে ধানের শিস অবধি ডুবে গিয়েছে।” ব্যাঙ্ক থেকে ৫৫ হাজার টাকা ঋণ করে এক বিঘে জমিতে চন্দ্রমল্লিকার চাষ করেছিলেন গণেশবাবু। তিনি বলেন, “আগের বৃষ্টিতেই প্রচুর গাছ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ৫ কাঠা জমির চারা টিকে ছিল। এ বার তা-ও ডুবে গিয়েছে।”
একই অবস্থা বাঁকুড়া, বর্ধমান, হুগলি, নদিয়া এবং বীরভূমেও। বাঁকুড়ার উপ-কৃষি অধিকর্তা অনন্তনারায়ণ হাজরা বলেন, “পুজো থেকে টানা বৃষ্টিতে এই জেলায় ৩১০০ হেক্টর জমির আউশ ও ৪৮০০ হেক্টর জমির আমন ধানের ক্ষতি হয়েছে।” উত্তর ২৪ পরগনায় আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকোলি, পালং শাক ওঠার কথা ছিল। কিন্তু তাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলায় ১৫ থেকে ২০ হাজার হেক্টর জমির অনেকখানিতে এ বার সব্জির চারা লাগানো যায়নি।
বনগাঁর নতুনগ্রামে প্রচুর সব্জি হয়। সেখানকার চাষিরা জানিয়েছেন, পটল, পেঁয়াজ, মুলো, ফুলকপি ও বাঁধাকপি যা লাগানো হয়েছিল সবই জলের তলায়। এখন বৃষ্টি থামলেও ডিসেম্বরের আগে আর তাঁরা চাষে নামছেন না। উত্তর ২৪ পরগনার জেলা উদ্যানপালন আধিকারিক দীপককুমার সারেঙ্গি বলেন, “জলে বীজতলা ডুবে গিয়েছে। মাঝারি বা উঁচু জমিতে যারা চারা রোপন করেছিলেন, তাঁরা প্রচণ্ড ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।”
পশ্চিম মেদিনীপুর থেকেও ঢ্যাঁড়শ, বেগুন, করলা, ঝিঙে, পটল, পালং শাক, লঙ্কা-সহ সব সব্জিরই কমবেশি ক্ষতির খবর মিলেছে। পরপর তিন থেকে চার বার সব্জির চারা বোনার পরেও তা নষ্ট হওয়ায় চাষিদের মাথায় হাত পড়েছে। ঘাটালের খড়কুশমার শেখ আলম, কুড়শির হারাধন পাল, দাসপুরের কুলটিকরির অপর্ণা জানার আক্ষেপ, “এ বার সব্জি ঘরেই তুলতে পারলাম না। বৃষ্টি ও বন্যায় জমিতেই প্রায় সব সব্জি পচতে বসেছে। শীতের মরসুমে নতুন করে চাষ করার মতো ইচ্ছে বা টাকা নেই।”
ক্ষতির মুখে পড়েছেন পান চাষিরাও। তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের ডুমরা গ্রামের ফেলুরাম জানা বলেন, “৫ কাঠা জমিতে বাংলা ও সাঁচি পান করেছি। কিন্তু বৃষ্টিতে বরোজে জল জমে পান গাছ লাল হয়ে মরে যাচ্ছে।” উদ্যানপালন ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা আধিকারিক স্বপনকুমার শীট বলেন, “চলতি বৃষ্টিতে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।” ক্ষতি হয়েছে ডেবরা, নারায়ণগড় ও দাসপুরে ফুল চাষেও।
বারবার নিম্নচাপ ফিরে আসায় রবিচাষও পিছিয়ে যেতে বসেছে। নদিয়ার সহকারি কৃষি অধিকর্তা ভাস্কর দত্ত বলেন, “বৃষ্টির কারণে ডালশস্য এবং তৈলবীজের চাষ এখনও পর্যন্ত শুরুই করা যায়নি। ক্ষতিগ্রস্ত শীতকালীন শাক সব্জির চাষও। বৃষ্টির কারণে মাটির যা অবস্থা তাতে বৃষ্টি থামার পরেও রবিশস্য চাষের ‘জো’ (উপযুক্ত সময়) আসতে কমপক্ষে দশ দিন লাগবে।”
এই সঙ্কট থেকে রাজ্য বেরোবে কী করে, কর্তাদের কাছে এখনও তার কোনও সদুত্তর নেই। |
|
|
|
|
|