নিকুঞ্জ ভিলা
রাত বারোটায় নিকুঞ্জ ভিলার অন্দরে ঢুকে পড়ল মিস্টার এক্স। দোতলা বাড়ির নীচ তলায় ড্রয়িংরুম। তার ডানে বাঁয়ে ছ’খানা ঘর। সদর দরজার পাশ থেকেই সিঁড়ি দোতলায় উঠে গিয়েছে। পিছন দিকে রান্নাঘর বাথরুম। ভেতরে ঢুকে ঘুরঘুট্টি অন্ধকারের মধ্যে কিছুক্ষণ দাঁড়াল মিস্টার এক্স। ওর নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের কোনও শব্দ নেই। দু’চোখের কোটরে নাইট ভিশন ক্যামেরা লাগানো থাকায় অন্ধকারেও সব দেখতে পাচ্ছে। কানের ভেতরে এমন শব্দগ্রাহক যন্ত্র ফিট করা আছে যে পিন পড়লেও শুনতে পাবে।
নিকুঞ্জ ভিলার উল্টো দিকে জাতীয় সড়কের ধার ঘেঁসেই রায় ম্যানসন। রায় ম্যানসনে বসে বিজ্ঞানী মহানন্দবাবু বাসু হাজরাকে বললেন, ‘আমার রিমোট সিস্টেমের রেঞ্জ দুশো মিটার। এ বার ল্যাপটপটাকে অন করে দিচ্ছি। এর পর মিস্টার এক্স ওর দু’চোখ দিয়ে যা দেখবে ল্যাপটপে আপনিও তা দেখতে পাবেন। কী ভূত, কেমন ভূত, কী তার কর্মকাণ্ড, সবটাই জানা যাবে এ বার!’
ল্যাপটপট অন করতেই পর্দায় নিকুঞ্জ ভিলার ড্রয়িংরুমটা পরিষ্কার ভেসে উঠল। অন্ধকারে মিস্টার এক্সের চোখ ঘুরছে। সেই মতো ল্যাপটপে দেখতে দেখতে উদ্বিগ্ন বাসু হাজরা বললেন, ‘আমার কিন্তু খুব টেনশন হচ্ছে। ভূতের পাল্লায় পড়ে মিস্টার এক্সের যদি কোনও ক্ষতি হয়! এমন মহার্ঘ জিনিস...!’ মহানন্দবাবু হাসলেন একটু, ‘কিছুই হবে না। খুব শক্তপোক্ত ভাবে তৈরি করা হয়েছে মিস্টার এক্সকে। সুতরাং ডোন্ট ওরি।’
মিস্টার এক্স একটা রোবট। জামাপ্যান্ট টুপির নীচে অবিকল এক মানুষ যেন! বিগত একটা বছরে ভূতের ভয়ে নিকুঞ্জ ভিলায় দু’জন হার্ট ফেল করে মারা গিয়েছে। ভয়ে অজ্ঞান হয়েছে অনেকে। শেষমেশ এমন হয়েছে বাড়িটায় আর কেউ বাস করতেই চাইছে না। এমনকী ভুতুড়ে বাড়ির তকমা পাওয়া ওই ভিলার আশেপাশে কেউ ভিড়ছেও না সন্ধ্যার পর। বছর দুয়েক আগে তিরিশ লক্ষ টাকা দিয়ে কুবের সিংহ নামের এক প্রমোটারের কাছ থেকে বাড়িটা কিনেছিলেন বাসু হাজরা। বাড়িটা কেনার পর মাস এগারো কোনও সমস্যাই ছিল না। কিন্তু তার পরেই শুরু হল...!
ছবি: সুমন চৌধুরী
ল্যাপটপের পর্দায় চোখ রেখে মহানন্দবাবু বাসু হাজরাকে বললেন, ‘ভূত না হাতি! কিছুই তো দেখছি না। এত আয়োজন জলে যাবে না তো, বাসুবাবু?’
আতঙ্কে দু’জন মারা গেল, ডজনখানেক ভিরমি খেল, সব কি এমনি এমনি! না না, আসবে, ঠিক আসবে! বলেই মুখটাকে পাংশু করলেন বাসু হাজরা, ‘আপনি ফেল করলে বাড়িটা বেচেই দেব। ফালতু টেনশন কাঁহাতক আর সহ্য হয়!’
মহানন্দবাবুর বিদ্রুপের হাসি, ‘কে কিনবে আপনার এই ভুতুড়ে বাড়ি?’
— আর কেউ না কিনুক কুবের সিংহ বোধ হয় কিনবে। তবে তিরিশ লাখের বাড়ির দর দিয়েছে মাত্র পনেরো লাখ!
— বেচে আবার কিনবে, তাও আবার ভূতের বাড়ি, ইন্টারেস্টিং! গম্ভীর হয়ে গেলেন মহানন্দবাবু, ‘নিকুঞ্জ ভিলার ব্যাপারে আমি কিছু খবর সংগ্রহ করেছি বাসুবাবু। বছর সাতেক আগে এই ভিলায় আর এক বার ভূতের উপদ্রব ঘটেছিল। সেই সময় তৎকালীন মালিক বাড়িটা নাকি কুবের সিংহকে জলের দরে বেচে দেন। এর পর যত দিন কুবের সিংহ মালিক ছিল তত দিন আর কোনও উৎপাত হয়নি। কিন্তু আপনি বাড়িটা কিনতেই আবার সেই উৎপাত!
বাসু হাজরা কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তেই ল্যাপটপের পর্দায় এক ভয়ালদর্শন আগন্তুকের আবির্ভাব ঘটল। ডান দিকের শেষের ঘরটা থেকে বেরিয়ে এসেছে সেই মূর্তিমান। কালো রঙের লম্বা একটা আলখাল্লায় নিজেকে ঢেকে রেখেছে। ক্ষতবিক্ষত বিভৎস মুখ। ভাঁটার মতো হিংস্র দুটো চোখ ঠিকরে যেন বাইরে বেরিয়ে আসতে চাইছে। মুখের বাইরে বেরিয়ে আছে বড় বড় দু’খানা শ্বদন্ত। আর ওর মুখ থেকে বেরিয়ে আসা হাড়হিম করা একটা আওয়াজ।
মহানন্দবাবুর রিমোটের কারসাজিতে এক পা দু’পা করে সে আগন্তুকের দিকে এগিয়ে যেতে থাকল। ভয় পাওয়ার বদলে মিস্টার এক্সকে এগিয়ে আসতে দেখে কেমন যেন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল আগন্তুক। হঠাৎ করে হাড়হিম করা আওয়াজটা থামিয়ে পিছোতে থাকল সে। শেষটায় এমন হল যে উপায়ন্তর না দেখে যেই ঘর থেকে বেরিয়েছিল সেই ঘরেই ঢুকে পড়ল আবার। খানিকবাদে মিস্টার এক্সও সেই ঘরে প্রবেশ করল। প্রবেশ করে দেখল কেউ নেই।
মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই বাসুবাবুকে সঙ্গে নিয়ে নিকুঞ্জ ভিলায় ঢুকে পড়লেন মহানন্দবাবু। আগন্তুক যে ঘরে ঢুকে ভ্যানিশ হয়ে গিয়েছে সেই ঘরে ঢুকে ঢাউস এক আলমারির সামনে চলে এলেন। মিস্টার এক্সের শব্দগ্রাহক যন্ত্রে ধাতব একটা দরজা বন্ধের আওয়াজ ধরা পড়েছে। তাই হাতল ধরে টান মারলেন আলমারির পাল্লার। পাল্লা খুলে যেতেই দেখলেন আলমারির নীচের দিকে এক গোপন সুড়ঙ্গ! বাসুবাবুর হাতে তিন ব্যাটারির টর্চ। সেটা নিয়ে সুড়ঙ্গে আলো ফেলতেই দেখলেন সেই কালো আলখাল্লাটার খানিকটা দেখা যাচ্ছে। এর পর সুড়ঙ্গে নেমে আলখাল্লাটা তুলতে গিয়ে আরও দুটো জিনিস আবিষ্কার করলেন। একটা মুখোশ আর একখানা মোবাইল!
আলখাল্লা, মুখোশ, মোবাইল পেয়ে কিছুটা যেন দিশাহারা মহানন্দবাবু। একটু পরে সুড়ঙ্গের বাইরে এসে মোবাইলটা অন করতেই মুডটা অবশ্য বদলে গেল তার। উল্লাসে বললেন, ‘অপারেশন সাকসেসফুল বাসুবাবু। শুনলে চমকেই উঠবেন, ভূতের সাজে থাকা মানুষটা আর কেউ নয়, নিকুঞ্জ ভিলার ভূতপূর্ব মালিক কুবের সিংহ!’


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.