নিকাশি সংস্কার না করার মাসুল গুনল সল্টলেক
হাসপাতালের কাছে একটি গালিপিটের ঢাকনা খুলতেই বেরিয়ে এল স্তূপীকৃত ইট, ভাঙা চেয়ারের টুকরো, রাশি রাশি প্লাস্টিক। তাজ্জব সকলে। শনিবার সকাল থেকে সল্টলেকে পাম্প চালিয়েও কাজ হচ্ছিল না। কিছুতেই সরছিল না জমা জল। খবর আসে, বিধাননগর মহকুমা হাসপাতাল জলে থইথই। কারণ অনুসন্ধানে যান বিধায়ক তথা সল্টলেক পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্ত, মহকুমাশাসক সঞ্জয়কুমার দাস, চেয়ারম্যান পারিষদ দেবাশিস জানা, কাউন্সিলর তুলসী সিংহরায়-সহ ইঞ্জিনিয়ার ও আধিকারিকবর্গ। অভিযাত এলাকা হওয়া সত্ত্বেও যততত্র আবর্জনা ফেলায় সাধারণ মানুষের সচেতনতার এমন অভাব যে তাঁরা নিজেরাই দুর্ভোগে পড়ছেন, তার হাতেগরম উদাহরণ দেখলেন প্রশাসনিক কর্তারা।
ভাসাভাসি পথে ভরসা ভ্যানরিকশা। শনিবার সেক্টর ৫-এ। ছবি: শৌভিক দে।
সব্যসাচীবাবু অবশ্য বলেন, “শুধু বৃষ্টির জলে নয়, এক দিকে গঙ্গার জল ব্যাক ফ্লো করেছে, তেমনই নিকাশির নোংরা জলে ভেসেছে এলাকা। দীর্ঘ দিন ধরে নিকাশির সংস্কার হয়নি। সচেতনতারও চূড়ান্ত অভাব আছে। এ সব নিয়েই পরিকল্পনার প্রয়োজন।” বাসিন্দাদের পাল্টা দাবি, সল্টলেকের ড্রেনেজ ও স্যুয়ারেজ ব্যবস্থার দীর্ঘ দিন সংস্কার হয় না। পাম্পগুলির অবস্থা খারাপ। উপরন্তু খাল সংস্কার হয়নি।
এ দিনের বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয় পাঁচ নম্বর সেক্টর। উইপ্রো মোড়, কলেজ মোড়-সহ সর্বত্র জলমগ্ন। দুর্ভোগে পড়েন আইটি-কর্মীরা। হাতে গোনা রিকশা, অটোর ভাড়া ছিল আকাশ ছোঁয়া। ইন্টারভিউ দিতে পাঁচ নম্বর সেক্টরে গিয়েছিলেন নিমতাবাসী মধুরিমা দত্ত। তাঁর অভিযোগ, কোনও গাড়ি মেলেনি। শেষে তিনি রিকশায় একশো টাকা ভাড়া দিয়ে যান। তা-ও সময়ে পৌঁছতে না পারায় ইন্টারভিউ দিতেই পারেননি বলে তাঁর অভিযোগ।
বেলার দিকে বৃষ্টি কমলেও জল সরেনি। পাঁচ নম্বর সেক্টরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নবদিগন্ত শিল্পনগরী কর্তৃপক্ষের আধিকারিকেরা পথে নেমে পড়েন। সব ক’টি পাম্প চালিয়েও দেখা গেল জল সরছে না। দেখা যায়, ইস্টার্ন ড্রেনেজ চ্যানেল পরিপূর্ণ হয়ে জল ব্যাক ফ্লো করছে। সমস্যার কথা স্বীকার করে নবদিগন্তের কার্যনির্বাহী আধিকারিক বদ্রিনারায়ণ কর বলেন, “পাম্প চালিয়েও কাজ হয়নি।” এক দিকে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পতালুক এবং অন্য দিকে সল্টলেকের ২ ও ৩ নম্বর সেক্টর, বিশেষত ডিএল, ইই ব্লক থেকে এফডি, জিডি ব্লকের একাধিক এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। তৃণমূলের সাংসদ দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বাড়িতে জল ঢুকেছিল। চেয়ারপার্সনকে ফোনে পেলাম না, পরে সব্যসাচীকে সমস্যার কথা জানাই। নদী-নালা ভরে গিয়েছে। জল কোথায় নামবে?”
সিডি ব্লক, করুণাময়ী মোড়, অফিসপাড়া-সহ কমবেশি সর্বত্র জলমগ্ন হয়ে পড়ে। অফিসপাড়ায় নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, যানবাহন কম ছিল। নোংরা জলের মধ্যে দিয়েই হেঁটে যেতে হয় তাঁদের। সল্টলেক পুর-প্রশাসনের অবশ্য দাবি, বৃষ্টি কমার পরে তিন ঘণ্টার মধ্যে তাঁরা জল সরিয়ে ফেলেছেন।
স্থানীয় প্রশাসনের একটি অংশের মতে, সল্টলেকে জল নামানোর জন্য রয়েছে দু’দিকে দু’টি খাল। কেষ্টপুর ও ইস্টার্ন ড্রেনেজ চ্যানেল। কিন্তু ওই দু’টি খাল ভরে গিয়েছে। এ ছাড়া, সল্টলেক পুর-এলাকার নিকাশি ব্যবস্থাও পুরনো। সমস্যার কথা কার্যত স্বীকার করে বিধাননগর পুর-চেয়ারম্যান পারিষদ দেবাশিস জানা বলেন, “পাম্পগুলির সংস্কার নয়, পুরোপুরি নতুন করে তৈরি করতে একটি প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে বাসিন্দাদের সচেতনতার অভাবে সমস্যা আরও বাড়ছে।” কিন্তু ইস্টার্ন ড্রেনেজ চ্যানেলের কারণে জল জমার কথা স্বীকার করেননি নগরোন্নয়ন দফতরের সচিব দেবাশিস সেন। তাঁর দাবি, “ইঞ্জিনিয়ারেরা গিয়ে দেখেন চ্যানেলে ভালই কাজ হচ্ছিল। নাগাড়ে বৃষ্টির কারণেই এই সমস্যা। বর্ষার আগেই খাল সংস্কার হয়েছে।” যদিও স্থানীয় বাসিন্দা থেকে প্রশাসনের এক অংশের দাবি, এক বছর আগে ড্রেজিং হয়েছিল খালে। কিন্তু সম্প্রতি হয়নি। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম আশ্বাস দেন, “দ্রুত ওই খাল সংস্কার হবে, যাতে এমন সমস্যার পুনরাবৃত্তি না হয়।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.