মিটারের মধ্যে বসানো বিশেষ একটি যন্ত্র। সেই যন্ত্রই কমিয়ে দেয় মিটারের গতি। ফলে, যে বিল আসার কথা ছিল, এসেছে তার অনেক কম।
এমন পদ্ধতিতে মিটারে কারচুপি করে বিদ্যুত্ চুরির অভিযোগ উঠল কুলটিতে। পুলিশর কাছে দু’জন গ্রাহকের বিরুদ্ধে এ ব্যাপারে অভিযোগ করেছে রাজ্য বিদ্যুত্ বণ্টন সংস্থার বরাকর শাখা। সংস্থার আসানসোল ডিভিশনের প্রধান মিতেশ দাশগুপ্ত জানান, ওই গ্রাহকদের পাঁচ লক্ষ টাকারও বেশি জরিমানা করা হয়েছে।
মিতেশবাবু জানান, কুলটির নিউ রোড মোড় এলাকার জি টি রোডের পাশে শুভাশিস চট্টোপাধ্যায়ের একটি মিষ্টির দোকান ও একটি রেস্টুরেন্ট আছে। মিষ্টির দোকানের বিদ্যুতের মিটারটি শুভাশিসবাবুর নামে ও রেস্টুরেন্টের বিদ্যুত্ মিটারটি তাঁর স্ত্রী মিতালিদেবীর নামে রয়েছে। বিদ্যুত্ বণ্টন সংস্থার বরাকর শাখার আধিকারিকেরা জানান, অনেক দিন ধরে খবর পাচ্ছিলেন, এই দু’টি মিটারে কারচুপি করে বিদ্যুত্ চুরি হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বরাকর শাখার প্রধান স্বরাজ দাসের নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ দল ওই দোকানে যায়। স্বরাজবাবু বলেন, “মিটার পরীক্ষা করেই বুঝতে পারি, একটি বিশেষ যন্ত্র বসিয়ে কারচুপি করা হয়েছে।” পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে দোকানের মিটারগুলি বিদ্যুত্ দফতরের আধিকারিকেরা খুলে আনেন। দোকানের বিদ্যুত্ সংযোগ ছিন্ন করা হয়। স্বরাজবাবু জানান, ওই দুই গ্রাহকের সঙ্গে চেষ্টা করেও তাঁরা তাঁরা যোগাযোগ করতে পারেননি। এর পরেই দু’জনের শুভাশিসবাবু ও মিতালিদেবীর বিরুদ্ধে পাঁচ লক্ষ টাকার বেশি জরিমানা ধার্য করে চিঠি পাঠানো হয়। স্বরাজবাবু বলেন, “এই টাকা জমা না দিলে পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করবে।” কুলটির পুলিশ জানায়, দুই গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা হচ্ছে।
কী ভাবে এই দু’টি মিটারে কারচুপি হয়েছে, সে প্রশ্নে স্বরাজবাবু জানান, মিটারে একটি বিশেষ রেসিসট্যান্স যন্ত্র প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। এই যন্ত্রটি মিটারের গতি অনেক কমিয়ে দেয়। ফলে, বিদ্যুত্ খরচের হিসেব কম হয়। শুভাশিসবাবু ও মিতালিদেবীর নামে নেওয়া এই মিটার দু’টি থেকে এই যন্ত্র দু’টি পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি করেছেন স্বরাজবাবু। তিনি আরও জানান, এই যন্ত্র মিটারে লাগানো বেশ জটিল। ওই দুই গ্রাহক কী ভাবে সেগুলি লাগিয়েছিলেন, তা এখনও পরিষ্কার নয়। ওই দোকান দু’টিতে সাতটি ফ্রিজ, একাধিক ইনডাকশন কুকার, শীতাতপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র, পর্যাপ্ত আলো ব্যবহার করেও প্রতি তিন মাসে এক হাজার টাকার কম বিদ্যুতের বিল হত।
স্বরাজবাবু জানান, তাঁরা গোপন সূত্রে খবর পেয়েছেন, ইদানীং এ ধরনের কারচুপিতে জড়িত একটি দল মহকুমার নানা প্রান্তে গ্রাহকদের থেকে মোটা টাকা নিয়ে এই অপকর্ম করছে। আশপাশের প্রায় সাড়ে তিনশো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে এই যন্ত্র লাগানো হয়েছে বলে অনুমান করেছেন বিদ্যুত্ বণ্টন সংস্থার আধিকারিকেরা। এই চক্রটির খোঁজ চলছে বলে জানান স্বরাজবাবু। |