নদিয়া
খরচ হয়নি, ফিরছে সর্বশিক্ষার বরাদ্দ অর্থ
স্কুলে ঘরের অভাব। কোথাও পড়ুয়াদের বসতে হচ্ছে ঠাসাঠাসি করে। কোথাও আবার ঘরের অভাবে ক্লাস বসছে একেবারে গাছতলাতেই।
অথচ ঘর তৈরির বরাদ্দ অর্থ এসে পড়ে রয়েছে। নদিয়ার বহু স্কুলেই সর্বশিক্ষা মিশনের ওই টাকা খরচ করতে পারেনি। পড়ে রয়েছে প্রায় ১৮ কোটি টাকা। টাকা খরচ করতে না পারায় এ বার সর্বশিক্ষার বরাদ্দ সেই অর্থই এ বার ফিরে যাচ্ছে।
ফলে কোপে পড়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ ও জেলার অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকরা। বিষয়টি নিয়ে জেলা স্কুল প্রশাসনের কর্তারা সর্বশিক্ষা মিশন কর্তৃপক্ষ ও জেলার স্কুল পরিদর্শকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। স্কুল কর্তৃপক্ষের হাত থেকে ওই বিরাট অঙ্কের টাকা ফিরিয়ে নেওয়া এবং সেই টাকা কী ভাবে ব্যবহার করা হতে পারে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনাও হয়েছে।
কিন্তু কেন স্কুলের বাড়তি ঘর তৈরি করা গেল না? জেলার বেশ কয়েকটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা জানান, স্কুলে জায়গার অভাব কিংবা গ্রাম শিক্ষা কমিটির সঙ্গে মতানৈক্যের কারণে খরচ করা যায়নি সর্বশিক্ষা মিশনের টাকা।
জেলাশাসক পি বি সালিম বলেন, ‘‘প্রায় ১৮ কোটি টাকা খরচ না হয়ে স্কুলগুলির হাতে পড়ে আছে। অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকদের বলা হয়েছে দ্রুত সেই টাকা উদ্ধার করতে। এই কাজে গাফিলতি করলে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ জেলাশাসক জানান, ১১ জন অবর বিদ্যালয় পরিদর্শককে ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করা হয়েছে। তাঁদের আরও কিছু দিন সময় দেওয়া হচ্ছে। তার পরেও যদি এই কাজে ব্যর্থ হন তাহলে তাঁদেরকে শো-কজ করা হবে।
জেলা প্রশাসনের এই চাপে দিশেহারা অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকরা। জেলার স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) তাপসী দে বলেন, ‘‘টাকা উদ্ধারের দায়িত্ব অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকদের। যেমন করেই হোক তাঁদের সেই টাকা উদ্ধার করতে হবে।” জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৭-০৮ বর্ষ থেকে সর্বশিক্ষা মিশন জেলার স্কুলগুলির হাতে অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ ও প্রধান শিক্ষকের ঘর তৈরির জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা তুলে দিয়েছে। কিন্তু জেলার সিংহভাগ স্কুল কর্তৃপক্ষই স্কুলঘর তৈরি না করে সেই টাকা ফেলে রেখেছে। বিষয়টি নজরে আসতেই চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায় প্রশাসনের কর্তাদের। স্কুলগুলির হাতে কোটি কোটি টাকা পড়ে রয়েছে। কিন্তু সেই টাকা দিয়ে এই মুহূর্তে আর ঘর তৈরিও সম্ভব নয়। কারণ খরচ বাড়ার পাশাপাশি ঘর প্রতি সর্বশিক্ষা মিশনের বরাদ্দও অনেকটাই বেড়েছে। যেমন ২০০৭-০৮ বর্ষে প্রতিটি অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ তৈরি করার জন্য বরাদ্দ ছিল ১ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা। ২০১২-১৩ বর্ষে সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লক্ষ ১৪ হাজার টাকা। ফলে পুরোনো টাকায় এই মহূর্তে ঘর তৈরি সম্ভব নয়।
কিন্তু স্কুলগুলিই বা টাকাগুলো খরচ না করে ফেলে রাখল কেন? জেলার এক অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক বলেন, “একটা বিরাট অংশের স্কুল কর্তৃপক্ষের গড়িমসিই এর অন্যতম কারণ। তবে অনেক সময় ঘর তৈরির ক্ষেত্রেও স্কুলের প্রধানশিক্ষক ও গ্রাম শিক্ষা কমিটির মধ্যে মতানৈক্যের অভাব দেখা যায়।’’
জেলার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি অর্চনা ঘোষ সরকার বলেন, ‘‘জায়গার অভাব বা গ্রামশিক্ষা কমিটির অসহযোগিতা, এ সব আসলে অজুহাত। আসল কারণটা হল স্কুল কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছার অভাব।’’
নাকাশিপাড়ার কাঁচকুলি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক মোসাকরিম সেখ বলেন, “স্কুলে ১৭ শতক জমি রয়েছে। দোতলা ঘর ও শৌচাগার বাদে যেটুকু জমি রয়েছে সেখানে স্কুলের প্রার্থনা হয়। ফলে ঘর করার মতো কোনও জায়গা নেই। আর সেই কারণেই টাকা পেয়েও খরচ করতে পারিনি।”
স্কুলগুলির কাছ থেকে উদ্ধার করা ওই টাকা দিয়ে কী হবে? জেলাশাসক বলেন, ‘‘এমন বহু স্কুল আছে যাদের এখনও অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ প্রয়োজন এবং তাঁরা উদ্যোগীও বটে। তাঁরা চাইলে শ্রেণিকক্ষ তৈরির জন্য তাদের এখান থেকে টাকা দেওয়া হবে।” জেলার ৩৭টি চক্রের মধ্যে এই মুহূর্তে অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের সংখ্যা মাত্র ১৯ জন। বেশিরভাগ পরিদর্শককেই একাধিক দায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে। ফলে দৈনন্দিন সেই অতিরিক্ত কাজ সামলে টাকা উদ্ধারের কাজ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা। ফলে টাকা খরচ করতে না পারার যন্ত্রণাটাও যে কিছু কম নয় সেটা স্কুল কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন ওই পরিদর্শকরাও।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.