মাছ চাষের মিনিকিট দিচ্ছে সরকার, দ্বিধায় চাষিরা
ঝুঁকি নিয়ে আলু ও ধান চাষ করেন চাষিরা। অথচ, বাড়ির সামনে পড়ে থাকা পুকুর নিয়ে কোনও ভাবনা-চিন্তা নেই। সেখানে যে অনায়াসে মাছ চাষ করে উপার্জন সম্ভবতা ভাবেন না কেউ। তাই লাভজনক হওয়া সত্ত্বেও মাছ চাষ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি এ রাজ্যে। ভিন্ রাজ্য থেকে আসছে মাছ। এই ছবি বদলাতে এ বার উদ্যোগী হয়েছে মৎস্য দফতর। বাড়ির পুকুরেই বাণিজ্যিক ভাবে মাছ চাষে উৎসাহ দিতে বেশ কিছু পদক্ষেপ করছে তারা।
মৎস্য বিভাগের পশ্চিম মেদিনীপুর আঞ্চলিক দফতরের উপ-অধিকর্তা উৎপল শর জানান, দফতর থেকে জেলার প্রতি ব্লকে ৭৫ জন চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কিছু চাষিকে নিখরচায় মিনিকিটও দেবে। রাজ্যের অন্য জেলাতেও প্রশিক্ষণ ও মিনিকিট দেওয়া হবে।
কিন্তু একবার মিনিকিট দিয়ে কী মাছ চাষের উন্নতি ঘটানো সম্ভব?
চন্দ্রকোনার মাছ চাষি রবীন্দ্রনাথ পাত্রের কথায়, “নিখরচায় মিনিকিট দিলে তো ভালই। তবে মাছের রোগ হলে কী করব, কোথায় ভাল চারাপোনা পাব, দ্রুত মাছ বাড়াতে হলে কী করতে হবে, জল শোধনের সহজ উপায় কী এই সব ব্যাপারে তথ্য ও পরামর্শ দিয়ে নিয়মিত সাহায্য করতে হবে। নতুবা আমাদের মতো কম পড়াশোনা জানা চাষিদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়।” তাঁর বক্তব্য, “মাছ চাষ খুবই লাভজনক। ৫০ হাজার টাকা খরচ করে বছরে দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত রোজগার করা যায়। কিন্তু মাঝে মধ্যে এমন সমস্যা আসে যে, উৎসাহ হারিয়ে ফেলি।”
মেদিনীপুরের মাছ চাষি শেখ আকবর বললেন, “শহর থেকে কিছুটা দূরের একটি গ্রামে পুকুর লিজে নিয়ে মাছ চাষ করেছিলাম। পুকুরে প্রায় দেড় লক্ষ টাকার মাছ ছিল। এক রাতে সব চুরি হয়ে গেল। আর নতুন করে মাছ ছাড়িনি। দুঃসময়ে যদি সরকার পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য করত, নিদেনপক্ষে কী করণীয় জানাত, তা হলে আবারও একবার চেষ্টা করতাম।” বস্তুত, প্রশাসনিক উদাসীনতার কারণেই এত দিন মাছ চাষে উৎসাহিত করা যায়নি চাষিদের। প্রতি ব্লকে মাত্র এক জন করে ফিশারি এক্সটেনশন অফিসার রয়েছেন। অধিকাংশ সময়ই ব্লকের অন্য বিভাগের দায়িত্ব সামলাতে হয় তাঁদের। যথারীতি তাঁদের কাছে গেলে অর্ধেক সময় দেখা মেলে না। দেখা মিললেও কাজ হয় না। উৎপলবাবুর অবশ্য দাবি, “মাছ চাষিদের বিভিন্ন সরঞ্জাম দেওয়ার পাশাপাশি এ বার থেকে আমরাও নিয়মিত যোগাযোগ রাখব।”
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় বছরে মাছের চাহিদা ৫৮ হাজার মেট্রিক টন। আর উৎপাদন হয় ৪৯ হাজার মেট্রিক টন। অর্থাৎ চাহিদার সঙ্গে জোগানের ফারাক ৯ হাজার মেট্রিক টন! পাশাপাশি জেলায় জলাশয় ২৩ হাজার হেক্টর। কিন্তু মাছ চাষ হয় মাত্র ১৬ হাজার হেক্টর জলে।
পুকুর রয়েছে, চাহিদা রয়েছে। তবু কেন চাষিরা মাছ চাষ করেন না?
রাজ্যে মাছ উৎপাদন
বিশ্বে এক জন বছরে গড়ে ১৮.৫ কেজি মাছ খান।
এ রাজ্যের মানুষ বছরে গড়ে ৯ কেজি মাছ খান।
দাসপুরের দেবকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “লাভ যেমন আছে, তেমন ঝক্কিও রয়েছে। মাছের বীজ নিয়ে আসা, চারাপোনা তৈরি করা, তারপর বড় পুকুরে গিয়ে ছাড়া, নিয়মিত জেলে ডেকে জাল দেওয়াআরও কত কী। তা ছাড়া রয়েছে নানা রোগ, চুরির ভয়। বন্যা হলে পুকুর ভেসে যাবে। তখন কী করব?” কিন্তু অন্য চাষেও তো ঝক্কি রয়েছে। গড়বেতার পুকুর মালিক দেবাশিস সাঁতরার কথায়, “ওটাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। তাই ঝক্কি মনে হয় না।”
মাছ চাষেও যাতে ঝক্কি না লাগে, তার জন্য সম্প্রতি উদ্যোগী হয়েছে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারি ও অ্যাকোয়াকালচার বিভাগ। মাছ চাষ সম্পর্কিত একটি ওয়েবসাইট তৈরি করার পরিকল্পনা নিয়েছে তারা। কেন্দ্রীয় সরকারের ডিপার্টমেন্ট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির অর্থানুকূল্যে তৈরি হবে ওই ওয়েবসাইট। রাজ্যের কোথায় কত পুকুর রয়েছে, কী কী ধরনের মাছ চাষ হয়, কোন মাছ চাষে কত লাভসব তথ্য থাকবে সেখানে। ১৫ দিন ছাড়া ওয়েবসাইট ‘আপডেট’ করা হবে।
বিভাগের শিক্ষক বিধান পাত্র বলেন, “নিয়মিত চাষিদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ গড়ে তুলতে হবে। আমাদের রাজ্যে এখনও তা হয়ে ওঠেনি। ওয়েবসাইটে আমরা চেষ্টা করব তথ্যের পাশাপাশি পরামর্শেরও একটি জায়গা রাখতে। যেখানে চাষিরা তাঁদের সমস্যার কথা জানাবেন, বিশেষজ্ঞেরা তার উত্তর দেবেন।”
মৎস্য দফতরের উদ্যোগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চেষ্টা বাস্তবায়িত হলে এ রাজ্যে মাছ চাষের জগতে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলেই সকলের আশা।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.