সন্ত্রাস নিয়ে ওবামার প্রশ্নের মুখে শরিফ
মুম্বই হামলার বিচার যে তাঁর দেশে দীর্ঘসূত্রতার শিকার আজ আমেরিকার চাপে তা মেনে নিতে বাধ্য হলেন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। সে দিনই প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ কড়া ভাষায় জানিয়ে দিলেন, নিয়ন্ত্রণরেখায় সংঘর্ষ বন্ধের ক্ষেত্রে শরিফের ভূমিকায় তিনি হতাশ।
পাকিস্তানে মুম্বই হামলার বিচার নিয়ে সে দেশের সরকার যে গড়িমসি করছে তা দীর্ঘ দিন ধরেই বলছে নয়াদিল্লি। হাফিজ সঈদের নেতৃত্বে লস্কর-ই-তইবার মতো সংগঠনের কার্যকলাপও যে এখনও অবাধে চলছে তাও বহু বার বিশ্বকে জানিয়েছে ভারত। আজ খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সেই বিষয় নিয়ে শরিফকে প্রশ্ন করা বড় সাফল্য বলেই মনে করছে নয়াদিল্লি।
আজ ওয়াশিংটনে ওবামার সঙ্গে বৈঠকের পরে শরিফই জানান, “২০০৮ সালে হওয়া মুম্বই হামলার বিচার কেন এখনও শুরু হয়নি তা নিয়ে জানতে চান ওবামা। সন্ত্রাসে মদত দেওয়ার ক্ষেত্রে হাফিজ সঈদের ভূমিকার কথাও জানতে চেয়েছেন তিনি।” শরিফের দাবি, কাশ্মীর নিয়েও আলোচনা হয়েছে। তবে তার বিযয়বস্তু নিয়ে মুখ খুলতে চাননি তিনি।
তবে শরিফ যতই স্বীকারোক্তি করুন, তাতে সীমান্তের পরিস্থিতি বদলাচ্ছে না। সংঘর্ষবিরতি ভাঙার পাশাপাশি মঙ্গলবার পাক সেনার বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে ভারতের একটি গ্রামে নির্মাণকাজ বন্ধ করানোর অভিযোগও উঠেছে। ফলে, চাপ কমাতে রাজি নয় সাউথ ব্লক। আজ চিন থেকে ফেরার পথে প্রধানমন্ত্রী সাফ জানিয়েছেন, “সীমান্তে সংঘর্ষ বন্ধের প্রশ্নে পাক প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা মোটেই সন্তোষজনক নয়। নিউ ইয়র্কে শরিফের সঙ্গে বৈঠকে সীমান্তে শান্তিরক্ষার প্রশ্নে সমঝোতা হয়েছিল। কিন্তু, তাতে পরিস্থিতি বদলায়নি।
কিন্তু আজ হঠাৎ ওবামার সঙ্গে বৈঠকের পরে মুম্বই হামলা ও হাফিজ সঈদ নিয়ে মার্কিন চাপের কথা মেনে নিলেন কেন শরিফ?
বিদেশ মন্ত্রকের কর্তাদের মতে, পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিই শরিফের স্বীকারোক্তির অন্যতম কারণ। মে মাসে ক্ষমতায় আসার পর চেষ্টা করেও সন্ত্রাস দমনে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। উপরন্তু তিনি ভারতের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রাখার চেষ্টা করছেন। কিন্তু, পাক সেনা ও কট্টরপন্থীদের বড় অংশ তা চায় না। তাই আজ শরিফ নয়াদিল্লি তথা বিশ্বকে বোঝাতে চেয়েছেন, তিনি মুম্বই হামলার দ্রুত বিচার শুরু করতে বদ্ধপরিকর। হাফিজ সঈদ-সহ জঙ্গিদেরও দমন করতে চান। আবার পাকিস্তানে কট্টরপন্থীদের জানিয়ে দিয়েছেন, আমেরিকা তাদের উপরে কড়া নজর রেখেছে।
শরিফের স্বীকারোক্তিকে স্বাগত জানালেও আপাতত ধীরে চলো নীতি নিয়ে চলতে চাইছে কেন্দ্র। তাদের বক্তব্য, পাকিস্তানে শরিফের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, পাকিস্তানের মধ্যে রয়েছে একাধিক পাকিস্তান। পাক সেনাবাহিনীর সঙ্গে জঙ্গিদের গভীর যোগ রয়েছে বলে মনে করে নয়াদিল্লি।
সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীরে একাধিক অনুপ্রবেশের ঘটনায় জঙ্গিদের সঙ্গে পাক সেনাও ভারতে ঢুকেছিল বলে দাবি করেছে ভারতীয় সেনা ও গোয়েন্দাবাহিনী। তাই পাক সেনাবাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করা শরিফের পক্ষে আদৌ সম্ভব কি না তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তাই শরিফ যা-ই বলুন, এখনই জঙ্গি হানা ও সংঘর্ষবিরতি ভাঙা বন্ধ হবে বলে মনে করে না ভারত।
কেন্দ্রের মতে, শরিফের বক্তব্যকে আগ বাড়িয়ে স্বাগত জানালে বিজেপির সমালোচনার মুখে পড়ার সম্ভবনা রয়েছে। তাছাড়া সামনে নির্বাচন। এই পরিস্থিতিতে ধীরে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ। বরং, লোকসভা নির্বাচনের আগে শেষ ছ’মাসে যদি সীমান্তে পরিস্থিতির উন্নতি হয় সে ক্ষেত্রে মনমোহন সরকারের কৃতিত্বের বিষয়টি নিয়ে প্রচারে নামতে পারবে দল।
তবে পাক রাজনীতিতে শরিফ আরও বেশি বেকায়দায় পড়তে চলেছেন বলে ধারণা অনেকের। কারণ, আজ পাকিস্তানে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে মার্কিন ড্রোন বিমানের হানা সংক্রান্ত বেশ কিছু নথি প্রকাশ করেছে একটি মার্কিন সংবাদপত্র। ওই নথি অনুযায়ী, ড্রোন হামলায় সম্মতি দিয়েছিল পাকিস্তান। ড্রোন হানায় জঙ্গিদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও নিহত হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে সরব পাকিস্তানের নানা শিবির। ক্ষমতায় আসার পরে মার্কিন সরকারকে বুঝিয়ে এই হামলা থামানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন শরিফ। ড্রোন সংক্রান্ত সমঝোতা শরিফ জমানার আগে হয়ে থাকলেও এখন তা তাঁকে অস্বস্তিতে ফেলবে বলেই মনে করা হচ্ছে। আজ অবশ্য পাক বিদেশ মন্ত্রক এক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, আগের সরকারের আমলে কী সমঝোতা হয়েছিল তা তাদের জানা নেই। তবে শরিফ সরকার এই হামলার বিরোধিতা করবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.