|
|
|
|
মেরে ফেলতে পারে আমাকেও, বললেন রাহুল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
যাবতীয় দ্বিধার অবসান ঘটিয়ে আজ হর্ষবর্ধনকেই দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে দলের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী মনোনীত করল বিজেপি।
মতবিরোধ চলছিল বেশ কয়েক দিন ধরেই। মূল লড়াইটি ছিল বিজেপি নেতা বিজয় গয়াল ও হর্ষবর্ধনের মধ্যে। এমনকী তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী না করা হলে দলের মধ্যে বিদ্রোহ ঘটাবেন বলেও প্রচ্ছন্ন হুমকি দিয়ে রেখেছিলেন গয়াল। কিন্তু এক দিকে সঙ্ঘ পরিবারের তাঁর নামে আপত্তি ও অন্য দিকে শীলা দীক্ষিতের বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো হেভিওয়েট ভাবমূর্তি না থাকায় আজ শেষ পর্যন্ত গয়ালের নাম খারিজ করে দেয় বিজেপির সংসদীয় বোর্ড। যদিও বাজপেয়ী জমানায় প্রতিমন্ত্রী থাকা গয়ালকে দলের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, কেন্দ্রে বিজেপির সরকার এলে তাঁকে মন্ত্রিপদ দেওয়া হবে।
দিল্লি বিধানসভার নির্বাচন হতে আর বাকি মাত্র পাঁচ সপ্তাহ। কিন্তু দুই শিবিরের দ্বন্দ্বে দলের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী কে হবেন, তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না দল। দিল্লিতে সাংগাঠনিক ভাবে গয়ালের শক্তি বেশি। কিন্তু তাঁর ভাবমূর্তি স্বচ্ছ নয়, এই যুক্তিতেই শেষে বাজিমাৎ করেন পেশায় চিকিৎসক হর্ষবর্ধন। তাঁর সমর্থনে এগিয়ে আসেন অরুণ জেটলি, নীতিন গডকড়ী-সহ সঙ্ঘ পরিবারও। সভাপতি রাজনাথ সিংহের যুক্তি ছিল, দিল্লির নির্বাচনে সংগঠনে ভালই দখল রয়েছে গয়ালের। তাঁকে চটালে নির্বাচনে আগে দল ভেঙে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। গয়ালেরও যুক্তি ছিল, তিনি এতদিন ধরে সংগঠন তৈরি করেছেন। লটারি বা বিদ্যুতের বাড়তি দামের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে জনমত গড়েছেন। হর্ষবর্ধনকে তুলে ধরলে কি বাড়তি শক্তি পাবে বিজেপি? |
|
আলোয়ারের জনসভায়। ছবি: পিটিআই। |
এর আগে বলেছিলেন মায়ের কষ্টের কথা। খাদ্য সুরক্ষা বিল পাশের সময়ে সংসদে থাকতে না পেরে কতটা দুঃখ পেয়েছিলেন সনিয়া গাঁধী। আজ বললেন, ঘৃণার রাজনীতির জন্যই এক দিন প্রাণ দিতে হয়েছিল তাঁর বাবা ও ঠাকুরমাকে। তার পরেই মন্তব্য, “হতে পারে, আমাকেও মেরে ফেলবে। আমি তার পরোয়া করি না।”
আজ রাজস্থানের চুরুতে এক জনসভায় এ ভাবেই ফের আবেগে ফেটে পড়লেন রাহুল গাঁধী।
তাঁর এই কথা নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনীতির সব স্তরে। প্রশ্ন উঠেছে, কেন এ ভাবে বললেন রাহুল?
কংগ্রেসের একটি অংশের বক্তব্য, এর মাধ্যমে দু’টি পাখি মারতে চাইলেন রাহুল। এক দিকে, তাঁর পরিবার যে আত্মত্যাগ করেছে, সেটা মনে করিয়ে বিজেপির সমালোচনার জবাব দেওয়ার চেষ্টা করলেন। অনেকের মতে, পরিবারতন্ত্র নিয়ে যখন রাহুলকে বিঁধছেন নরেন্দ্র মোদী, রাজপুত্র ও সোনার চামচের কথা বলে কটাক্ষ করছেন, তখন গাঁধী পরিবারের তরুণ প্রজন্মও ঘুরিয়ে জবাব দিতে ছাড়ছেন না। অন্য দিকে, ঘৃণার রাজনীতির প্রসঙ্গ তুলে সুকৌশলে তার সঙ্গে জুড়ে দিলেন বিজেপিকে। বললেন, “ঘৃণার রাজনীতি করছে বিজেপি। রাজ্যে রাজ্যে সাম্প্রদায়িকতার আগুন ছড়াচ্ছে।”
পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোট এবং আসন্ন লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে গত কয়েক দিন ধরে রাহুল বলছিলেন মূলত গ্রাম ও গরিব মানুষের জন্য ইউপিএ-র কাজের কথা। যেমন, খাদ্য সুরক্ষা বিল এবং রোজগার গ্যারান্টি প্রকল্প। সে প্রসঙ্গ আজও ছিল। কিন্তু তার থেকেও বেশি করে উঠে এসেছে ঘৃণার রাজনীতির কথা। হঠাৎ কেন এই সুরবদল কংগ্রেসের সহ-সভাপতির?
রাহুলের ঘনিষ্ঠ সূত্রে বলা হচ্ছে, এই পরিবর্তনের কারণটা একেবারেই বিজেপি এবং নরেন্দ্র মোদী কেন্দ্রিক। মোদী সর্বত্র জনসভায় উন্নয়ন ও সম্প্রীতির কথা বলে নিজের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি তৈরির চেষ্টা করছেন, আর তাঁর সৈনিকরা উত্তরপ্রদেশ-সহ গোটা হিন্দিবলয়ের স্থানীয় রাজনীতিতে হিন্দুত্বের বীজ বুনে চলেছেন। জেলায় জেলায় ছোট ছোট রথযাত্রা বের করে মেরুকরণের জন্য তাঁরা ঘাম ঝরাচ্ছেন। মোদীর সেই কৌশলটাই ভেস্তে দিতে চেয়েছেন রাহুল।
যেমন, উত্তরপ্রদেশের মুজফ্ফরনগরের সাম্প্রতিক দাঙ্গা নিয়ে আজ সরাসরি বিজেপি-র বিরুদ্ধে আঙুল তুলছেন রাহুল। সেই প্রসঙ্গেই এনেছেন বাবা-ঠাকুরমার হত্যার কথা। জানিয়েছেন, ঠাকুরমা ইন্দিরা গাঁধীকে মেরেছিলেন যে দু’জন, তাঁদের মধ্যে বিয়ন্ত সিংহের কাছে ব্যাডমিন্টন খেলা শিখেছেন রাহুল। ঠাকুরমা খুন হওয়ার পরে সেই বিয়ন্তের উপরে তীব্র রাগ হয় তাঁর। সেই রাগ কমতে পনেরো বছর লেগে গিয়েছে। এ কথা বলেই রাহুল মুজফ্ফরনগরের প্রসঙ্গে চলে আসেন। বলেন, “সেই একই রাগ মুজফ্ফরনগরে গিয়ে দেখেছি। সেই রাগ ও ঘৃণা ঢেলে দেওয়া হচ্ছে তাঁদের মধ্যে। বিজেপি এই ঘৃণার রাজনীতি করছে। কখনও গুজরাতে, কখনও উত্তরপ্রদেশে আগুন জ্বালাচ্ছে। তাতে নিরীহ হিন্দু ও মুসলমান উভয়েরই প্রাণ যাচ্ছে।”
স্বাভাবিক ভাবেই রাহুলের আক্রমণে প্রবল চটেছে বিজেপি।
বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, গত পাঁচ বছরে ইউপিএ সরকারের সাফল্য বলে বিশেষ কিছু নেই। বরং দুর্নীতি ও লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মানুষ প্রবল ক্ষুব্ধ। এই পরিস্থিতিতে গাঁধী পরিবারকে নিয়ে আবেগকেই পুঁজি করতে চাইছেন রাহুল। দলের মুখপাত্র মীনাক্ষী লেখি বলেন, “ভুললে চলবে না, ভেদাভেদের রাজনীতির জন্ম দিয়েছে কংগ্রেসই। ইন্দিরা হত্যার পর শিখ দাঙ্গার নেতৃত্ব দিয়েছেন স্বয়ং রাজীব গাঁধী।”
বিজেপি যা-ই বলুক, রাজস্থানের দুই সভা থেকেই আজ পরোক্ষে মোদীকেই নিশানা করেন রাহুল। সাম্প্রদায়িকতার পাশাপাশি উন্নয়নের প্রশ্নেও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। তাঁর কথায়, “রাজস্থানে কংগ্রেস জিতলে তা শিল্পপতিদের সরকার হবে না। মানুষের জন্য শিল্প প্রয়োজন। কিন্তু মানুষের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে শিল্প হবে না। এমন ভাবে শিল্প হবে, যাতে সাধারণ মানুষ ও শিল্পপতি উভয়ের স্বার্থ বজায় থাকে।” |
|
|
|
|
|