কুবের উবাচ
মনোজিৎ (২৮) • স্ত্রী কাবেরী (২৮) • ছেলে (১০ মাস) • মা (৫১)
কর্তা রাজ্য সরকারি কর্মী • স্ত্রী বেসরকারি সংস্থায় • গিন্নির অফিসে স্বাস্থ্যবিমা আছে • মায়ের পেনশন আছে •
নিজের বাড়ি • দু’বছরের মধ্যে ফ্ল্যাট ও গাড়ি কেনার ইচ্ছে • ছেলের জন্য সঞ্চয়ে আগ্রহী • লক্ষ্য সচ্ছল অবসর
মাসে নিট আয়
২৫,০০০
২৮,০০০
সঞ্চয় (মাসে)

পিএফ ৫৮৩
রেকারিং ৪,০০০
জীবনবিমা ২,৭২৫

পিএফ ২,৫০০ রেকারিং ৪,০০০
জীবনবিমা ৪,২৯৫ জীবনবিমা ১,৮৭১
(ছেলের, বিমা মূল্য ৫ লক্ষ)
খরচ (মাসে)
সংসার চালাতে ২৬,০০০
ছেলের অন্নপ্রাশনের ঋণের কিস্তি ৬,০০০
স্বাস্থ্যবিমা ৩৯২
সম্পদ
এলআইসি ওয়েলথ প্লাস ১,৫০,০০০
স্থায়ী আমানত ১,১০,০০০
সোনা ৫,০০,০০০
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
পুজোর মরসুম কাটিয়ে আবার কাজের জগতে ঢুকে পড়ছি আমরা। এখনও বাকি কিছু ছুটি, কিন্তু তা-ও সংসারের চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়া শুরু হয়েছে সবারই। বিশেষত উৎসবে খরচের ধাক্কা সামলাতে কোমর বেঁধে নামতে হবে আমাদের। কিন্তু কারই বা মন চায় আবার সেই টাকা-পয়সা নিয়ে ভাবতে? অথচ তা জরুরি। তাই আজকের লেখা শুরু করব, কেন সঞ্চয় করতেই হবে, সেই কথা বলে।
আমি এক দম্পতিকে চিনতাম, যাঁদের মধ্যে কর্তা বেসরকারি সংস্থা থেকে ১৫ বছর আগে অবসর নেন। স্ত্রী গৃহবধূ। মেয়ের বিয়ে দিয়ে, বাড়ি কিনে ওই সময়ে তাঁর হাতে ছিল ২৪ লক্ষ টাকা। যা তিনি নির্দিষ্ট রিটার্ন মেলে, এমন সুরক্ষিত প্রকল্পে লগ্নি করেছিলেন। তা থেকে ১০% সুদ ধরে বছরে ২.৪ লক্ষ টাকা (মাসে ২০ হাজার) পেতেন। ওই সময়ে যা দু’জনের সংসার চালানোর পক্ষে যথেষ্ট বেশি ছিল।
কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জিনিসপত্রের দাম বাড়াতে থাকায় এখন ওই টাকায় আর সংসার ও চিকিৎসার খরচ মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে শেষ পর্যন্ত হাত দিতে হয় মূলধনে। কিন্তু এ ভাবে চলতে থাকলে এক দিন সেই মূলধনও শেষ হতে বাধ্য। তখন কী করবেন, আপাতত সেই চিন্তায় হয়রান তিনি।
এই প্রসঙ্গ তোলার কারণ একটাই। আরও এক বার মনে করিয়ে দেওয়া যে, সময় থাকতেই যেমন নিয়মিত সঞ্চয় শুরু করা জরুরি, তেমনই মাথায় রাখা দরকার মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টাও।
এ বার আমরা চোখ রাখব তরুণ দম্পতি মনোজিৎ ও কাবেরীর সংসারে। ওঁদের দু’জনের এখনও অনেকটা পথ হাঁটা বাকি। মনোজিৎ বিভিন্ন স্বপ্নের কথা বললেও, আমার মতে আপাতত ছেলের ও অবসরের জন্য সঞ্চয়ই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। তার আগে গাড়ি কেনার লক্ষ্যপূরণ হয় কি না দেখব।

গাড়ি কেনা
এখন সংসার খরচ মিটিয়ে মনোজিতের হাতে থাকে ৩,৭১৮ টাকা। ছেলের অন্নপ্রাশনের জন্য নেওয়া ঋণের টাকা শোধ হলে, তাঁদের হাতে প্রতি মাসে ৯,৭১৮ টাকা থাকবে। সেই অর্থ দিয়েই গাড়ি কিনতে পারেন।
৫ লক্ষ টাকা মূল্যের গাড়ি কিনতে প্রায় ১ লক্ষ টাকা ডাউনপেমেন্ট করতে হবে। এ কাজে ব্যবহার করুন স্থায়ী আমানতের টাকা। বাকি টাকা নিতে হবে ঋণ হিসেবে। ৭ বছরের জন্য ৪ লক্ষ টাকা ঋণের মাসিক কিস্তি পড়বে প্রায় ৬,৭৮৭ টাকা (১১% সুদ ধরে)।

বাড়ি কেনা
আপাতত মনোজিতের হাতে ফ্ল্যাট কেনার মতো অর্থ নেই। তাই ২ বছরের মধ্যে বেতন হঠাৎ খুব না-বাড়লে, ফ্ল্যাট কেনার কথা না-ভাবাই ভাল। তবে মুষড়ে না-পড়ে এখন থেকেই ফ্ল্যাট কেনার জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্যে টাকা জমাতে শুরু করুন। এ জন্য আলাদা একটা তহবিলে নির্দিষ্ট সময়ে টাকা রাখার পাশাপাশি, যখনই হাতে থোক টাকা আসবে, তা রেখে দিতে পারবেন। ডাউনপেমেন্ট করার মতো টাকা জমলে বাড়ি কেনার কথা ভাবুন।

ছেলের পড়াশোনা
ছেলের পড়াশোনার জন্য এখন থেকেই টাকা রাখা জরুরি। সে জন্য ব্যাঙ্কে রেকারিং, সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান (এসআইপি), এনএসসি-র মতো প্রকল্পে লগ্নি ছড়িয়ে দেওয়ার কথা ভাবুন। প্রয়োজনে এক জন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে লগ্নির অঙ্ক স্থির করুন।

অবসরের সঞ্চয়
৬% মূল্যবৃদ্ধি ধরে নিয়ে কী ভাবে মনোজিৎ অবসরের জন্য সঞ্চয় করতে পারেন, তা-ই দেখাব।


মোট আয়: ৫৩,০০০ টাকা
বছরে মোট আয়: ৫৩,০০০ x ১২= ৬,৩৬,০০০ টাকা
৬% মূল্যবৃদ্ধি ধরে ৩২ বছর পর
প্রতি বছর প্রয়োজন: ৪১,০৪,৩৫৩.৯৩ টাকা
ওই অর্থ পেতে মোট সম্পদের পরিমাণ হতে হবে: ৫,১৩,০৪,৪২৪.১৩ টাকা

মনে হতেই পারে যে, ৫ কোটি টাকা জমানো সম্ভব নয়। কিন্তু ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। আসুন দেখে নিই কী ভাবে ওই লক্ষ্যের কাছাকাছি পৌঁছনো সম্ভব (নীচের তালিকা দেখুন)।
তালিকার প্রথম চারটি প্রকল্পে তাঁরা এখনই লগ্নি করছেন, তা অবসর নেওয়া পর্যন্ত চালিয়ে যান। পাশাপাশি, গাড়ি কেনার পর হাতে থাকা ২,৯০০ টাকা লগ্নি করুন ইক্যুইটি নির্ভর এসআইপিতে। সাত বছর পর গাড়ি ঋণ শোধ হলে, মাসিক কিস্তিও বন্ধ হবে। সেই টাকাও লগ্নি করুন এসআইপিতে। যা অবসর নেওয়া পর্যন্ত চালু রাখুন।
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, বর্তমান লগ্নি ঠিক মতো চালিয়ে গেলে ও হাতে থাকা বাড়তি টাকা ভবিষ্যতে সঠিক প্রকল্পে বিনিয়োগ করলে ওই লক্ষ্যের কাছাকাছি পৌঁছনো যাবে। পাশাপাশি, আগামী ৭ বছর ধরে বেতন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি মাসে আরও ৮,৫০০ টাকা লগ্নি করতে পারেন, তা হলে ওই ৮৩.৩৬ লক্ষ টাকাও সঞ্চয় করা সম্ভব হবে।

অন্যান্য
এর পর মনোজিতের উচিত জীবনবিমা এবং স্বাস্থ্যবিমার দিকে নজর দেওয়া।
• জীবনবিমার ক্ষেত্রে নিতে পারেন বড় অঙ্কের টার্ম পলিসি। যার মেয়াদ শেষে টাকা ফেরত পাওয়া যায় না, কিন্তু জীবনের সুরক্ষা মেলে।
• অবশ্যই স্বাস্থ্য বিমার মূল্য বাড়ান। কাবেরীর অফিসে স্বামী, স্ত্রী ও ছেলে মিলিয়ে তিন জনের ১.৫০ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্যবিমা রয়েছে। কিন্তু তা-ও বলব তাঁকে এবং ছেলেকে ফ্যামিলি ফ্লোটার বিমার আওতায় নিয়ে আসুন।
উৎসবের মরসুমে মনোজিৎ ও কাবেরীর ভবিষ্যতের জন্য আগাম শুভেচ্ছা রইল। আশা করব আগামী দিনে আরও সুন্দর জীবন গড়ে তুলতে পারবেন তাঁরা দু’জনে।
অবসরের লক্ষ্যে
লগ্নির ক্ষেত্র বছর লগ্নির অঙ্ক (মাসে) আনুমানিক রিটার্ন সুদ (%)
৩২ ৮,০০০ ৪৮,০০,০০০
৩২ ৮,৮৯০ ৫০,০০,০০০
৩২ ৩,০৮৩ ৫৫,০৫,৫৭২.৬৫
৩২ ৩,০৮৩ ৫৫,০৫,৫৭২.৬৫
৩২ ২,৯০০ ১,৩০,৭৬,৯৬১.৩৭ ১২
২৫ ৬,৭৮৭ ৯০,৮০,২৬১.৭৯ ১০
   
প্রয়োজন   ৫,১৩,০৪,৪২৪.১৩  
ঘাটতি   ৮৩,৩৬,০৫৫.৬৭  


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.