|
|
|
|
|
|
|
আইনি তাবিজ |
|
ফ্ল্যাট কিনছেন। কিন্তু সব দিক ভেবে তো? শুরুতেই খোঁজ নিয়েছেন কি আইনি খুঁটিনাটির?
নইলে কিন্তু গৃহপ্রবেশে নিমন্ত্রণ থাকবে উটকো ঝামেলারও লিখছেন অমিতাভ গুহ সরকার |
জমানা বদলেছে। আগে চুল না-পাকতেই বাড়ি কেনার কথা ভাবতে পারতেন খুব কম সংখ্যক মানুষ। কর্মজীবনের একেবারে শেষ প্রান্তে পৌঁছে বরং বাড়ি তৈরির কাজে হাত দেওয়ার সাহস পেতেন তাঁরা। অনেকে আবার তাতে ঝাঁপাতেন অবসরের টাকা হাতে পাওয়ার পর। সারা জীবনের কষ্টের সঞ্চয়ে মাথার উপর ছাদ দাঁড় করাতে পারলেই জীবন সার্থক মনে হত।
আর এখন? কাজের জগতে প্রবেশের কয়েক বছরের মধ্যেই ফ্ল্যাট বা বাড়ি কেনার অভিযানে নেমে পড়ছে নতুন প্রজন্ম। আবার একখানা কিনেই ক্ষান্ত থাকছে না। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে বেতন বাড়লে দু’কামরার ফ্ল্যাট ছেড়ে উঠে যাচ্ছে তিন কামরায়। কিংবা কিনে ফেলছে বাংলো। অনেক সময় নিজের বাড়ি থাকতেও নিখাদ লাভজনক লগ্নি হিসেবে জমি-বাড়ি-ফ্ল্যাটে টাকা ঢালছেন অনেকে। আর হবে না-ই বা কেন? এখন তো ফ্ল্যাট বা বাড়ি কেনার জন্য ঋণের ডালি সাজিয়ে বসে আছে ব্যাঙ্ক এবং গৃহঋণ সংস্থাগুলি। ফলে শুধু ডাউনপেমেন্টের টাকা জোগাড় করতে পারলেই হল। বাকিটা মিটিয়ে দেওয়া যাচ্ছে মাসিক কিস্তিতে। ফলে বাড়ি কেনাও আর আকাশের চাঁদ ধরার মতো ব্যাপার থাকছে না।
|
|
শুভস্য শীঘ্রম |
তাড়াতাড়ি বাড়ি কেনার সুবিধা অনেক (অবশ্যই যদি ঋণের কিস্তি আপনার কাছে বোঝা হয়ে না-দাঁড়ায়)। যেমন, যাঁরা ভাড়া বাড়িতে থাকেন, তাঁরা প্রতি মাসে মোটা টাকা ভাড়া দেওয়ার বদলে, তা দিয়ে ইএমআই (গৃহঋণের মাসিক কিস্তি) মেটাতে পারেন। তাতে মাথার উপর ছাদও জুটল। আবার নিজের নামে সম্পদও তৈরি হল। ১৫/২০ বছর ধরে কিস্তি দেওয়ার পর ধার শোধ হলে তার মালিকানা আপনার হাতে এসে যাবে।
তা ছাড়া, যৌথ পরিবার এখন এক রকম ইতিহাসের পাতায়। হয়তো এ কথা মাথায় রেখেই সন্তান/ সন্তানদের জন্য আলাদা ফ্ল্যাট কিনে রাখছেন বাবা-মায়েরা।
লগ্নির জায়গা হিসেবেও জমি-বাড়ি-ফ্ল্যাট বেশ লাভজনক। অবশ্যই যদি সিদ্ধান্ত সঠিক হয়। খেয়াল করে দেখবেন, অনেক বহুতলে বেশ কিছু ফ্ল্যাটের দরজা-জানালা কোনও দিনই খোলে না। কারণ, তা কেনাই হয়েছে লগ্নির জায়গা হিসেবে। পরে দাম বাড়লে, সময়-সুযোগ বুঝে বিক্রি করার জন্য। ঠিক এই একই কারণে জমিও কিনে রাখেন অনেকে।
ফ্ল্যাট বা বাড়ির আর একটা সুবিধা আছে। তা হল, সম্পত্তি লগ্নি হিসেবে কিনলে, তা ভাড়াও দিতে পারবেন আপনি। ইএমআইয়ের অনেকটা টাকা উঠে আসতে পারে সেখান থেকেও। |
তবে সাবধান! |
এই পর্যন্ত পড়ে যদি মনে হয় হাতে টাকা থাকলে এক্ষুণি ঝপ করে একখানা ফ্ল্যাট বা বাড়ি কিনে ফেলাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে, তা কিন্তু একেবারেই নয়। কারণ, ভাল সম্পত্তি কেনা অত সহজ নয়। তার জন্য অনেক আগে থেকে সঠিক পরিকল্পনা জরুরি। বহু বিষয় খুঁটিয়ে দেখা প্রয়োজন। নইলে কিন্তু পরে পস্তাতে হতে পারে।
মনে রাখবেন, সম্পত্তি কেনায় খুঁত থাকলে মস্ত বিপদ। কারণ, জমি-বাড়ি-ফ্ল্যাট দু’পাঁচ দিনের জন্য কেনা হয় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কেনা হয় সারা জীবনের জন্য। এবং তা-ও বিপুল টাকা ঢেলে। তাই যখন-তখন গাড়ি পাল্টে ফেলা যতটা সহজ, বাড়ি বদলানো তার তুলনায় অনেক বেশি শক্ত। ত্রুটিযুক্ত সম্পত্তি বিক্রি করতেও বিস্তর ঝামেলা পোহাতে হতে পারে।
আর সেই কারণেই সম্পত্তিতে মোটা টাকা ঢালার
আগে অনেক বিষয় দেখে নেওয়া জরুরি। অন্তত চারটি দিক তো বটেই। এগুলি হল
(১) বসবাসে সুবিধার দিক
(২) বাণিজ্যিক দিক
(৩) আইনগত বা মালিকানা সংক্রান্ত দিক
(৪) কর সংক্রান্ত দিক
কিন্তু সত্যিই দেখি কি?
উপরে যে-চারটি দিকের কথা বললাম, তার মধ্যে প্রথম দু’টি তা-ও মোটামুটি খুঁটিয়ে দেখি আমরা। বসবাসের সুবিধা খুঁজতে গিয়ে দেখি সেখানে যথেষ্ট আলো-বাতাস আসে কি না। কিংবা সেখান থেকে স্কুল-কলেজ-বাজার-হাসপাতাল কতটা দূরে। খেয়াল করি রাস্তা চওড়া কি না, ইত্যাদি।
কিছুটা অন্তত মাথায় রাখি বাণিজ্যিক দিকের কথাও। যে-কারণে কোথাও বাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনার আগে চিন্তা করি, পরে তা বেচলে আদৌ বেশি দাম মিলবে কি না। কিনতে চাই এমন জায়গায়, যেখানে মেট্রো রেল আসছে কিংবা তৈরি হচ্ছে নতুন রাস্তা। চেষ্টা করি, একই আয়তনের হলেও, দু’কামরার বদলে তিন কামরার ফ্ল্যাট কেনার। যেহেতু পরে তা বেচে তুলনায় বেশি দাম পাওয়ার সম্ভাবনা।
কিন্তু সেখানে আইনি বিষয়গুলিকে কেমন জানি পাশ কাটিয়ে যাই আমরা। হয়তো খুদে হরফের লেখা পড়ে দেখতে তেমন ভাল লাগে না। কিংবা বিরক্তি আসে আইনের কচকচিতে। কিন্তু এটা মস্ত বড় ভুল। বাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনার সময়ে আইনি ব্যাপারগুলি খুঁটিয়ে দেখা উচিত আমাদের। জানা দরকার কর সংক্রান্ত বিষয়ও। নইলে পরে নানা সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা। আর সেই কারণেই এই দু’টি দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব আমরা। বিশেষত আইনের খুঁটিনাটি নিয়ে।
|
আইনি কবচ |
আমার মতে, বাড়ি বা ফ্ল্যাট কেনার সময়ে আইনি বিষয়েই সব থেকে বেশি গুরুত্ব আরোপ করা জরুরি। দেখে নেওয়া উচিত সংশ্লিষ্ট সম্পত্তিতে যেন কোনও আইনি ত্রুটি না-থাকে। বিক্রেতার মালিকানার ব্যাপারটিও যেন স্বচ্ছ ও স্পষ্ট হয়। নইলে গৃহপ্রবেশে কিন্তু নিমন্ত্রণ থাকবে উটকো ঝামেলারও।
এখানে একটা কথা বলে রাখি। বড় নামী প্রকল্পগুলি অনেক ক্ষেত্রেই আইনগত ব্যাপারে কোনও ব্যাঙ্ক বা গৃহঋণ সংস্থা দ্বারা অনুমোদিত হয়। কারণ তবেই ওই সব ফ্ল্যাট কিনতে ধার দেয় ব্যাঙ্কগুলি। তাই এই ধরনের প্রকল্পে লগ্নি কিছুটা কম ঝক্কির। তা বলে চোখ-কান বুজে টাকা ঢালার প্রশ্ন নেই। নিজে বুঝে এবং প্রয়োজনে আইনজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে তবেই এগোন। আর অনেক বেশি সজাগ এবং সতর্ক থাকুন ছোট প্রকল্পে বা স্ট্যান্ড-অ্যালোন (যেখানে একটিই বিল্ডিং তৈরি হচ্ছে) ফ্ল্যাট কেনার পথে এগোলে।
সুতরাং আইনি ঝক্কি এড়াতে সম্পত্তি পছন্দ হওয়ার পর নীচের বিষয়গুলি দেখে নিতে ভুলবেন না। |
দেখতেই হবে |
• সম্পত্তির বিক্রেতা, নির্মাতা এবং মালিক কারা? এঁরা কি একই ব্যক্তি? নইলে এঁদের নিজেদের মধ্যে চুক্তির কপি শুরুতেই চেয়ে নিন। ডায়েরিতে লিখে রাখুন এঁদের ঠিকানা ও ফোন নম্বর। ওয়েবসাইট থাকলে, তা ভাল করে খুঁটিয়ে দেখতে ভুলবেন না।
• দেখে নিন জমি ফ্রি-হোল্ড কি না। জমি লিজে নেওয়া হলে, তার মেয়াদও ভাল করে দেখে নিন।
• বিক্রেতার স্বত্ব যাচাই করুন। দেখে নিন, তাঁর কাছে ওই জমি কী ভাবে এসেছে। কেনা, উত্তরাধিকার সূত্র, বিভাজন বা দানপত্রের মাধ্যমে বিক্রেতা জমি পেতে পারেন। এ জন্য দলিল যাচাই করে দেখুন।
• যৌথ উদ্যোগের ক্ষেত্রে চুক্তি দেখে নিন। প্রয়োজনে আসল দলিল (অরিজিনাল) দেখতে ভুলবেন না।
• জমির পরচা (রেকর্ডস অব রাইট) যাচাই করুন। দেখুন, সরকারের খাতায় তা বিক্রেতার নামেই নথিবদ্ধ আছে কি না। জমির অন্যান্য তথ্যও সেখানে দেখে নিতে পারেন।
• সম্প্রতি দেওয়া খাজনার রসিদের কপি সংগ্রহ করুন। দেখে নিন খাজনা বিক্রেতার নামেই জমা পড়েছে কি না।
• পরচা অথবা বিএলআরও অফিস থেকে জমির চরিত্র সম্পর্কে খোঁজ নিন। ওই জমি চাষ জমি, বিল, বাস্তু জমি বা খাস জমি হতে পারে।
• গোড়াতেই দেখে নিতে হবে যে, জমি কেনা-বেচার উপর কোনও সরকারি নিষেধাজ্ঞা আছে কি না। বিএলআরও, রেজিস্ট্রার, সাব রেজিস্ট্রারের দফতরে যথাযথ সার্চ করিয়ে তবেই জমি সম্পর্কে নিশ্চিন্ত হওয়ার কথা ভাববেন।
• জমি নিয়ে কোনও মামলা আছে কি না, তা জানতে ‘কোর্ট সার্চ’ করাতে ভুলবেন না। সাধারণত ৩০ বছরের সার্চ করাতে হয়। এ জন্য যেতে হবে এলাকার সংশ্লিষ্ট আদালতে।
• বিক্রেতা যদি কোনও লিমিটেড কোম্পানি হয়, তবে রেজিস্ট্রার অফ কোম্পানিজের দফতরে যেতে হবে। সার্চ করিয়ে জানতে হবে সেই জমি কোথাও মর্টগেজ করা (বন্ধক দেওয়া) আছে কি না।
• পাওয়ার অফ অ্যাটর্নির মাধ্যমে সম্পত্তি বিক্রি করা হলে, তা রেজিস্টার্ড পাওয়ার হওয়া উচিত। সে ক্ষেত্রে আসল পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি অবশ্যই দেখতে হবে।
• বেশির ভাগ সময়েই সম্পত্তি সরাসরি কেনা হয় না। আগে তা বায়না করা হয় বায়নাপত্রে (এগ্রিমেন্ট ফর সেল) সই করে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জমি/ফ্ল্যাট সম্পর্কে যাবতীয় খোঁজখবর নিয়ে সন্তুষ্ট হলে, তবেই পুরো টাকা মিটিয়ে দলিল সই করা হয়। তাই গোড়া থেকেই সাবধান হওয়া প্রয়োজন। সুতরাং সই করার আগে বায়নাপত্র অবশ্যই ভাল করে পড়া উচিত। খুঁটিয়ে দেখা উচিত যাবতীয় শর্ত। ওই সব শর্তের ভিত্তিতেই পরে মূল দলিল (সেল ডিড) তৈরি করা হয়।
• জমি কোনও জাতীয় সড়ক (ন্যাশনাল হাইওয়ে) কিংবা বাইপাস সংলগ্ন হলে সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে জেনে নিতে হবে যে, তা কেনা-বেচা অথবা সেখানে নির্মাণের উপর নিষেধাজ্ঞা আছে কি না। ওই জমিতে সরকারের রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা আছে কি না, জেনে রাখুন সে কথাও।
• সম্পত্তি কলকাতা কর্পোরেশন অথবা অন্য কোনও পুরসভার অধীনে হলে দেখে নিতে হবে তা বিক্রেতার নামে মিউটেশন করানো আছে কি না। |
|
বাড়তি সতর্কতা |
কোনও নির্মীয়মাণ প্রকল্পে ফ্ল্যাট কেনার পরিকল্পনা থাকলে, উপরের বিষয়গুলি ছাড়াও কিছু জিনিস দেখে নেওয়া জরুরি। যেমন
• কর্পোরেশন/পুরসভা কর্তৃক অনুমোদিত প্ল্যান।
• বায়নার শর্ত। বিজ্ঞাপনে ও বিক্রয়-পুস্তিকাতে যে সব সুযোগ-সুবিধার কথা ফলাও করে লেখা হয়, বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায়, তার অনেক কিছুরই উল্লেখ বায়নাপত্রে থাকে না। এই বিষয়ে সতর্ক থাকুন। মনে রাখবেন, বিজ্ঞাপনে থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। বায়নাপত্রে থাকলে, তবেই ক্রেতা হিসেবে কোনও কিছুর উপর আইনগত অধিকার জন্মাবে আপনার।
• বায়নাপত্র থেকেই দেখে নিতে হবে ফ্ল্যাট কেনার পর জমির আনুপাতিক মালিকানা আপনার হাতে আসছে কি না। নির্মাতার আরও নির্মাণের স্বত্ব থাকছে কি না, তা-ও যাচাই করুন।
• ভিত/পাইলিং নিয়ম মেনে করা হচ্ছে কি না। ভূমিকম্প রোধক ব্যবস্থা আছে কি না। বিশেষত নদীর ধারে কোনও নির্মাণের জন্য এই বিষয়গুলি আগে যাচাই করা জরুরি। নিজে প্ল্যান দেখে সব সময়ে যে এই বিষয়গুলি বোঝা সম্ভব হয়, এমনটা নয়। সে ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন।
• বাড়ি অনুমোদিত প্ল্যান অনুযায়ীই তৈরি হচ্ছে কি না। না-হলে পরে কমপ্লিশন সার্টিফিকেট পেতে সমস্যা হতে পারে। ভেঙে ফেলতে হতে পারে বেআইনি অংশ।
• প্রযোজ্য ক্ষেত্রে দমকল ও পরিবেশ দফতরের ছাড়পত্র নেওয়া হয়েছে কি না দেখে নিন।
• খেয়াল রাখুন প্রতিশ্রুত ব্র্যান্ডের উপকরণ (সিমেন্ট, রড ইত্যাদি) দিয়েই বাড়ি তৈরি হচ্ছে কি না। প্রতিশ্রুতি মাফিক ফিটিংস লাগানো হচ্ছে কি না, তা-ও দেখে নিন।
• দলিল সই করা এবং ফ্ল্যাট দখলে নেওয়ার পর সাধারণত এক বছর পর্যন্ত ফ্ল্যাটের রক্ষণাবেক্ষণ করেন (খরচ আপনারই) সংশ্লিষ্ট নির্মাতা। এই সময়ে কোনও নির্মাণগত ত্রুটি ধরা পড়লে, তা বিনা খরচে সারিয়ে দেওয়া হয়। সুতরাং ফ্ল্যাটে যদি বসবাস না-ও করেন, তবুও ভাল করে পরীক্ষা করে দেখুন, সব (যেমন, বাথরুমের ঢাল) ঠিকঠাক আছে কি না। নইলে পরে গাঁটের কড়ি খরচ করতে হবে।
|
হাতফেরতার বেলা |
পুরনো ফ্ল্যাট (রিসেল) কেনার ক্ষেত্রে দেখে নিন
• বিক্রেতার আসল দলিল।
• বিক্রেতার নামে মিউটেশন।
• পুরসভায় সাম্প্রতিক কর জমা দেওয়ার রসিদ।
• কো-অপারেটিভ/বিল্ডিং অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সার্টিফিকেট।
• অ্যাসোসিয়েশন থেকে বকেয়া না-থাকার (নো ডিউ) সার্টিফিকেট।
• অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য পদ ছাড়ার এবং তার বদলে ক্রেতাকে সদস্য করার বিষয়ে বিক্রেতার থেকে চিঠি।
• বিক্রেতা যখন ফ্ল্যাট কিনেছিলেন, সেই সময়ের যাবতীয় কাগজপত্র (নির্মাতার সঙ্গে করা চুক্তি-সহ)।
• ফ্ল্যাট ব্যবহারে কোনও বিধিনিষেধ আছে কি না।
• ফ্ল্যাট কিনতে অ্যাসোসিয়েশনকে চাঁদা দিতে হবে কি না, ইত্যাদি। |
|
কর-কর্তব্য |
সম্পত্তি কেনার সময়ে যেমন আইনি বিষয়ে নজর দেওয়া জরুরি, ঠিক তেমনই মন দেওয়া উচিত কর সংক্রান্ত ব্যাপারেও। মনে রাখবেন, সম্পত্তি কিনলে যেমন করের দায় বাড়তে পারে, তেমনই তা কিনে কর সাশ্রয়ও করা সম্ভব। এ নিয়ে নিশ্চিন্ত হতে নীচের বিষয়গুলিতে চোখ বোলান
স্ট্যাম্প ডিউটি: সেল-ডিড নথিভুক্তির (রেজিস্ট্রেশন) সময়ে নির্ধারিত হারে স্ট্যাম্প ডিউটি দিতে হয়। ডিড-এ সম্পত্তির মূল্য যদি সংশ্লিষ্ট এলাকার জন্য সরকার নির্ধারিত মূল্যের থেকে কম হয়, তবে স্ট্যাম্প ডিউটি ধার্য হবে সরকারি নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী। শহরাঞ্চলে ২৫ লক্ষ টাকা বা তার কম দামের সম্পত্তির উপর স্ট্যাম্প ডিউটি ধার্য হয় ৬% হারে। তার বেশি হলে ডিউটির হার হবে ৭%। তা ছাড়া, রেজিস্ট্রেশন ফি-ও দিতে হবে ১.১% হারে। পঞ্চায়েত এলাকায় স্ট্যাম্প ডিউটি ৫%। এই কারণেই সম্পত্তির দাম মেটানো হয়ে গেলে, দ্রুত রেজিস্ট্রি করা বাঞ্ছনীয়। নইলে সরকারি মূল্যায়ন বাড়ার কারণে স্ট্যাম্প ডিউটিও বেড়ে যেতে পারে।
পরিষেবা কর: বিল্ডার/ প্রোমোটারের তৈরি নতুন ফ্ল্যাট কিনতে পরিষেবা কর গুনতে হবে ফ্ল্যাটের দামের ৩.০৯% হারে। ফ্ল্যাটের আয়তন ২,০০০ বর্গ ফুটের বেশি কিংবা তার দাম এক কোটি টাকার উপর হলে, পরিষেবা করের হার হবে বেশি। সে ক্ষেত্রে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৩.৭১ শতাংশ। কিন্তু মনে রাখবেন, পুরনো ফ্ল্যাট কেনার জন্য এই কর লাগবে না।
ধরে নেওয়া আয়ে (ডিম্ড ইনকাম) কর: যদি একাধিক বাড়ি/ফ্ল্যাট থাকে, তবে একটি বাদে অন্যগুলি ভাড়া দেওয়া না-হলেও তার উপযুক্ত (ফেয়ার) ভাড়া আপনার আয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে। এবং তার উপর প্রযোজ্য হারে কর দিতে হবে।
সম্পত্তি কর: একাধিক সম্পত্তি থাকলে, একটি বাদ দিয়ে অন্যগুলির নিট মূল্য ৩০ লক্ষ টাকার বেশি হলে, তার উপরেও ১% সম্পত্তি কর দিতে হবে আপনাকে।
মূলধনী লাভকর: সম্পত্তি ৩ বছর ধরে রাখার পর বিক্রি করে লাভ হলে, তার উপর ২০% দীর্ঘকালীন মূলধনী লাভকর ধার্য হবে। আর তিন বছর হওয়ার আগেই বিক্রি করে লাভ হলে, তা হবে স্বল্পকালীন মূলধনী লাভ। সে ক্ষেত্রে ওই আয় অন্যান্য সূত্র থেকে আসা আয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে। তার পর কর দিতে হবে প্রযোজ্য হারে।
গৃহঋণে করছাড়: ঋণ নিয়ে ফ্ল্যাট বা বাড়ি কিনলে, শর্তসাপেক্ষে বাৎসরিক ধার শোধ বাবদ ছাড় পাওয়া যায় ৮০-সি ধারায়। আসল (প্রিন্সিপাল) শোধের জন্য বছরে সর্বাধিক এক লক্ষ টাকা ছাড় পেতে পারেন আপনি। জীবনবিমা, পিএফ, পিপিএফ ইত্যাদি মিলিয়ে যে-এক লক্ষ টাকা ছাড় মেলে, তার মধ্যে গৃহঋ
ণের আসলকেও ধরা হয়।
করছাড়ের সুবিধা মেলে সুদ শোধের ক্ষেত্রেও। ধারা-২৪ অনুযায়ী সুদ বাবদ বছরে সর্বাধিক ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কর ছাড়ের সুবিধা মিলতে পারে। তবে খেয়াল রাখবেন, আসল কিংবা সুদ, উভয় ক্ষেত্রেই করছাড়ের সুবিধা পেতে কিছু শর্তপূরণ করতে হয়। তাই গৃহঋণ নিলে, সেই শর্তাবলি অবশ্যই খুঁটিয়ে দেখে নেবেন। |
লেখক বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ (মতামত ব্যক্তিগত) |
|
|
|
|
|