|
বার্ষিক অনুষ্ঠান |
|
ছবিটি তুলেছেন সুদীপ দত্ত। |
জলপাইগুড়ির আনন্দমেলা বার্ষিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছিল মহালয়ার দিন। জাতিধর্মনির্বিশেষে মানুষ হওয়া ও মানুষ গড়ার লক্ষ্যই আনন্দমেলার মূল মন্ত্র। সংস্থার খরচ চলে সাধারণ মানুষের সাহায্যে। ইস্টবেঙ্গল ফ্যান ক্লাব সংস্থাকে সাহায্য করে। মহালয়ার দিন সারা বছর ধরে সংগ্রহ করা বস্ত্র বিতরণ করা হল দুঃস্থদের। বাচ্চাদের দেওয়া হল জুতো, পেনসিল বক্স, খাতা। স্বনির্ভর হওয়ার লক্ষ্যে সংস্থার সদস্যদের শেখানো হয় নানা রকমের হাতের কাজ। সেই সবের প্রদর্শনীরও ছিল। ছিল নাচ ও গান। পাঁচ বছরের এক শিশু সদস্যের ঢাকের বোল এই অনুষ্ঠানটিকে অন্য একটি মাত্রা দেয়। বাদ পড়েনি নাটকও। সংস্থার সদস্যরা উপহার দিল দুটি নাটক শারদ বার্তা এবং অচলায়তন। সংস্থার সম্পাদক ইন্দিরা সেনগুপ্তের বাড়ির এক চিলতে বাগানে আয়োজিত হল সমস্ত অনুষ্ঠান। শীততাপনিয়ন্ত্রিত প্রেক্ষাগৃহের অনুষ্ঠান কি কখনও এতটা মন ছুঁতে পেরেছে?
|
বয়দুলের পুজো |
|
ছবি: শমিত ঘোষ। |
বালুরঘাট থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে পাগলিগঞ্জ। পাগলিগঞ্জ থেকে ডান দিকে একটি পাকা রাস্তা গেছে নাজিরপুরে। প্রায় চার কিমি গেলে বর্ধিষ্ণু বয়দুল গ্রাম। বয়দুলে রয়েছে প্রয়াত জোতদার প্রসন্নলাল চৌধুরীর আদি বাড়ি। প্রায় ২৩টি পরিবার রয়েছে এখানে। চৌধুরী পরিবারের একটি প্রাচীন দুর্গাপুজো রয়েছে। সেটি বয়দুলের অহংকার।
প্রসন্নলাল চৌধুরী ১৩৪৪ বঙ্গাব্দে মারা যান। এর পর চৗধুরী পরিবারের শরিকেরা পালা করে আয়োজন করে থাকেন। এ বছর পুজো ১০৩ বছরে পড়ল। জন্মাষ্টমীতে কাঠামো পুজো দিয়ে চৌধুরী পরিবারের দুর্গাপুজোর সূচনা হয়। বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য কনককান্তি চৌধুরী বললেন যে, এক সময়ে এঁদের ১৪০০ বিঘা জমি ছিল। পরবর্তীতে বামফ্রন্ট সরকার ১৯৭৮ সালে অপারেশন বর্গার নিয়ম বলবত করলে অনেক জমি চলে যায়, বেশ কিছু জমি ‘ভেস্ট’ হয়ে যায় ও অবশেষে ৭৫ বিঘা জমি থাকার ‘সিলিং’-ই স্বীকৃত হয়। তবে এ সব পুজোয় অন্যথা সৃষ্টি করতে পারেনি। চরম সঙ্কটে তাই দুর্গা পুজো বন্ধ হয়নি। চৌধুরীবাড়ির প্রতিমা একচালা। পূর্বপুরুষের আমল থেকে হয়ে-আসা ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত মঙ্গলচণ্ডীর গান পরিবেশিত হয়। অষ্টমীর সন্ধি পুজোয় শূন্যে গুলি ছোড়া হয়। অষ্টমী ও নবমীতে বয়দুল গ্রামে কয়েকশো লোককে পাত পেড়ে খাওয়ানো হয়। অনেকে মানত করেন এবং পূর্ণ হলে মা মহামায়ার হাতে শোলার কদম ফুল বেঁধে দেন। বংশ পরম্পরায় মৃৎশিল্পী হরিপদ মালী ও তাঁর বংশধরেরা এই প্রতিমা গড়ে আসছেন। পরম্পরাগত ভাবে নিয়োজিত পুরোহিত কামদা চক্রবর্তীও চৌধুরীবাড়ির পূজার্চনা করে আসছেন। প্রতি বছর গ্রামের ভিতরে প্রতিষ্ঠিত পুকুরেই এই প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।
|
চোখচুন্দি নাচ |
প্রথা মেনে কালীপুজোর পর দিন উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার রাজবংশী সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী চোখচুন্দি নাচের আসর বসে বিভিন্ন এলাকায়। কুশমণ্ডির রাজবংশী অধ্যুষিত ঊষাহরণ, ফতেপুর, সরলা গ্রামে চোখচুন্দি নাচের আসর বসে। এলাকার ছেলেরা দল করে মেয়েদের নাচের পোশাক পরে ও মেকআপ নিয়ে গানের তালে নাচ করে। গানের বিষয়এলাকার সমস্যা কিংবা সমাজের অন্যান্য নানা খারাপ দিক। বিষয়গুলি রচনা করে, তাতে সুর দেন শিল্পীরা। প্রকাশ্য স্থানে গোল হয়ে তাঁরা পরিবেশন করেন ওই সব গান। আধুনিকতার ছোঁয়ায় তেমন ব্যাপক ভাবে ওই সমাজের লোকজন আর এগিয়ে আসেন না। ফলে নতুন গানও আর রচিত হয় না। চোখচুন্দি গানের বর্ষীয়ান লোকশিল্পী সুরেশ সরকার জানান, ‘আমরা চোখচুন্দির ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছি।’ এ দিন বিভিন্ন এলাকায় নাচগান করে যা অর্থ উপার্জন হয়, তা দিয়ে পরদিন সবাই মিলে খাওয়াদাওয়া হয়।
|
রাজবংশী সমাজের লোকপ্রযুক্তি |
|
—নিজস্ব চিত্র। |
পরিমল বর্মন ‘উত্তরবঙ্গের রাজবংশী সমাজের লোকপ্রযুক্তি’ গ্রন্থটিতে কৃষি নির্ভর সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদানের মাধ্যমে লোকপ্রযুক্তির প্রয়োগ কী ভাবে ঘটেছে, তা দেখাবার চেষ্টা করেছেন। গ্রন্থে ১৫০ লোকপ্রযুক্তির বিবরণ আছে। রয়েছে ৬৮টি লোক প্রযুক্তির রঙিন ছবি। প্রথম অধ্যায়ে স্থান পেয়েছে লোকপ্রযুক্তির তত্ত্ব ও প্রয়োগ সম্পর্কিত আলোচনা। এ থেকে গ্রামীণ অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ধারণা পাওয়া যায়। দ্বিতীয় অধ্যায়ে লোক প্রযুক্তির বর্ণনামূলক বিবরণ চমকপ্রদ। গ্রাম্য পরিবেশ থেকে পাওয়া অতি সাধারণ উপাদানের সাহায্যে রোজকার জীবনে ব্যবহার্য কত রকম জিনিস যে তৈরি করা সম্ভব, তা এই বিবরণ থেকে জানা যাবে। |
|