ট্রেনের শৌচাগার থেকে পড়েও অক্ষত সদ্যোজাত
ন্মের পরে নরম কাঁথা নয়। ট্রেনের শৌচাগারের পাইপ গলে সোজা রেললাইনের শক্ত খোওয়া-পাথরের উপরে। চোখ খুলে মায়ের মুখ নয়, সে দেখেছে তার উপরে একটা অন্ধকার ছায়া। লোকে যেটাকে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনের কামরা বলবে। তাই তারস্বরে কান্না।
মঙ্গলবার পূর্ব রেলের কৃষ্ণনগর-লালগোলা শাখার পলাশি স্টেশনে এই কাণ্ডের পরে প্ল্যাটফর্ম থেকে লাফিয়ে, পাগলের মতো ট্রেনের কামরার তলায় ঢুকে পড়েন মা। পরম মমতায় সদ্যোজাত অক্ষত শিশুকে বুকে আঁকড়ে ট্রেনের তলা থেকে বেরিয়েও আসেন। কান্না থামিয়ে তখন মায়ের কোলে পরম নিশ্চিন্তে পিটপিট করে তাকাচ্ছে ‘বিস্ময়’। ঘটনা জেনে নিত্যযাত্রীরা ফুটফুটে ছেলেটাকে এই নামেই ডেকেছেন।
ট্রেনের শৌচাগারে প্রসব এবং শৌচাগারের পাইপ গলে ট্রেন লাইনে পড়ে গিয়েও বাচ্চার অক্ষত থাকার ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। ২০০৯-র অক্টোবরে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের চক্রধরপুর এবং গামারিয়া স্টেশনের মাঝে ছাপরাগামী টাটানগর এক্সপ্রেসের যাত্রী এক বধূরও একই অভিজ্ঞতা হয়েছিল। তবে সে ট্রেনটি চলন্ত ছিল।
সদ্যোজাতের সঙ্গে মা। —নিজস্ব চিত্র।
সে কথা অবশ্য জানা ছিল না বেলডাঙার ঝুনকা গ্রামের বড় বকুলতলার রেহেনা খাতুনের। বছর তিনেক বিয়ে হয়েছে। স্বামী কর্মসূত্রে ভিন্রাজ্যে থাকেন। এ দিন সকালে শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করাতে বছর কুড়ির রেহেনাকে মাজদিয়ার ভরতপুরের এক কবিরাজের বাড়ি নিয়ে যান তাঁর মা আফরোজা বিবি। সেখান থেকেই সন্ধ্যায় লালগোলা প্যাসেঞ্জারে বেলডাঙায় ফিরছিলেন তাঁরা। রেহেনা বলেন, “ট্রেন পলাশি ঢোকার আগে থেকেই পেটে অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয়। শৌচাগারে যাই। সেখানে এক মুহূর্ত জ্ঞান ছিল না। হুঁশ ফিরতে বুঝলাম, বাচ্চা হয়ে গিয়েছে। সে পড়েও গিয়েছে শৌচাগারের পাইপ দিয়ে ট্রেনের তলায়!”
আফরোজা বিবি বলেন, “মেয়ের ন’মাসের গর্ভ। তাই সতর্ক ছিলাম। ট্রেনের বাথরুম থেকে মেয়ে যখন ডুকরে উঠল, তখনই বুঝেছি মারাত্মক কিছু একটা হয়েছে। ভাগ্যিস ট্রেনটা দাঁড়িয়েছিল! রাখে রহিম মারে কে!”
বাচ্চা কোলে রেহেনা এবং আফরোজাকে পলাশির মিরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন রেলকর্মী এবং নিত্যযাত্রীরা। প্রত্যক্ষদর্শী মনোজ পান্ডে বলেন, “এ রকম ঘটনা শুনেছি। চোখে দেখলাম এই প্রথম। সবথেকে স্বস্তির ব্যাপার, বাচ্চাটা ঠিক ছিল।” কৃষ্ণনগর রেল পুলিশের ওসি কৃষ্ণগোপাল মালাকার বলেন, “অবিশ্বাস্য। কিন্তু দারুণ ব্যাপার।”
মিরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক পলাশ বিশ্বাস বলেন, “ট্রেনের শৌচাগারের পাইপ দিয়ে সদ্যোজাত বাচ্চা পড়ে যেতেই পারে। নাড়ি ছিঁড়ে সব সমেত পড়েছে। বাচ্চাটার ওজন প্রায় আড়াই কিলো। মা ও শিশু দু’জনেই সুস্থ। পাথরের উপরে পড়েও বাচ্চাটার গায়ে আঁচড়ও লাগেনি, এতে আমি বিস্মিত।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.