নিজস্ব ঘর নেই দেড়শোর বেশি শিশু শিক্ষাকেন্দ্রের
অ্যাসবেসটসের ভাঙাচোরা ছাউনি দেওয়া একটি মাত্র ঘর। নেই কোনও বেঞ্চ, টেবিল। মেঝেয় আসন পেতে বসেছে শিশুশ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত মোট ১৮ পড়ুয়া। চারটি ক্লাসের পড়ুয়াদের জন্য রয়েছেন মাত্র একজন শিক্ষিকা, বেলা মাইতি। পড়ানো থেকে অন্য কাজ সবই সামলান তিনি।
এ ভাবেই চলছে প্রাথমিক পড়ুয়াদের পাঠদান। কোন প্রত্যন্ত এলাকা নয় পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাট তাপবিদ্যুত্‌ কেন্দ্র লাগোয়া আমলহান্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব বহলা শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে এ ভাবেই পড়াশোনা চলছে গত ১১ বছর ধরে। পূর্ব বহলা গ্রামের তাপবিদ্যুত্‌ কেন্দ্রের ছাইখাদানের পাশে এক চিলতে জলাজমি ভরাট করার পর ‘দখল’ করে চলছে ওই শিশুশিক্ষা কেন্দ্র। শুধু কোলাঘাটের পূর্ব বহলা নয়, কোথাও একচিলতে ক্লাব ঘরে, কোথাও মন্দির চত্বরে, কোথাওবা ব্যক্তিগত বসত বাড়ির একাংশ নিয়ে চলছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ১৫৪টি শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের পড়াশোনা। একইভাবে জেলার ১৩টি মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের নিজস্ব জমিতে ঘর নেই। ফলে ওই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির প্রাথমিক পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষার অধিকার আইন বলবত্‌ হয়েছে গোটা দেশে। কিন্তু এ রাজ্যের বহু স্থানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পড়ুয়াদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে প্রাথমিক পরিকাঠামোর বেহাল দশা যে এখনও ঘোচেনি পূর্ব মেদিনীপুর জেলা শিক্ষা দফতরের রিপোর্টই তাঁর প্রমাণ মিলেছে। জেলা শিক্ষা দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী, জেলায় শিশু পড়ুয়ায়দের পড়শোনার জন্য জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের অধীনে ৩২৫৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এ ছাড়াও প্রাথমিক বিদ্যালয়বিহীন এলাকায় পঞ্চায়েত দফতরের অধীনে ১৪৪৩টি শিশুশিক্ষা কেন্দ্র রয়েছে।

মেচেদার পূর্ব বহলা শিশু শিক্ষা কেন্দ্র। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতই এই সব শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে শিশুশ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনার ব্যবস্থা রয়েছে। অথচ, প্রায় দশ বছরের বেশি সময় ধরে এই সব শিশুশিক্ষা কেন্দ্রগুলি চলার পরও জেলার প্রায় দেড়শোর বেশি শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের নিজস্ব জমিতে বিদ্যালয়ভবন নেই। সেগুলির কোথাও চলছে স্থানীয় ক্লাবঘরে, কোথাও ব্যক্তিগত বাড়িতে বা মন্দিরচত্বরে।
একই ভাবে জেলার বিভিন্ন এলাকায় পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত মাধ্যমিক পড়ুয়াদের জন্য ১৫৩টি শিক্ষাকেন্দ্র চালু করা হলেও ১৩টি মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের নিজস্ব জায়গায় বিদ্যালয় ভবন নেই। নিজস্ব জায়গা না থাকায় সর্বশিক্ষা মিশনের আর্থিক বরাদ্দও পাচ্ছে না শিক্ষাকেন্দ্রগুলি। ফলে দিনের পর দিন প্রাথমিক পরিকাঠামো ছাড়াই চলছে ওই সব বিদ্যালয়। পাশাপাশি নেই ক্লাসপিছু আলাদা ঘর, পর্যাপ্ত শিক্ষিকা, বেঞ্চে বসার সুযোগ। তা সত্ত্বেও দিনের পর দিন বিভিন্ন স্থানে এই সব শিশু ও মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রগুলি চালানো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে খোদ রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের এক বৈঠকে নিজস্ব জায়গায় বিদ্যালয়বিহীন শিশু ও মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রগুলির জন্য দ্রুত জায়গার সংস্থান করতে না পারলে ওই সব শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের অনুমোদন বাতিল করার হুশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। আর তারপরই নড়েচড়ে বসেছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদ ও জেলা শিক্ষা দফতর। জেলা শিক্ষা দফতর জেলার শিশু ও মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রগুলি নিয়ে সমীক্ষা করে একটি রিপোর্ট তৈরি করেছে। আর ওই রিপোর্টেই উঠে এসেছে জেলার প্রায় ১৫৪টি শিশুশিক্ষা কেন্দ্র, ১৩টি মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের বেহাল পরিকাঠামোর ছবি।
জেলা শিক্ষা দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী কোলাঘাট ব্লকের আমলহান্ডা পঞ্চায়েতের পূর্ব বহলা শিশু শিক্ষাকেন্দ্র ছাড়াও গোপালনগর পঞ্চায়েতের কেশাই শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের নিজস্ব জায়গা নেই, পাঁশকুড়া ব্লকের উত্তর পলসা, শ্রীকৃষ্ণপুর শিশুশিক্ষা কেন্দ্র, পটাশপুর ১ ব্লকের হরিদাসপুর, এগরা ২ ব্লকের কুলটিকরি, নন্দীগ্রাম ২ ব্লকের খোদামবাড়ি বারিক পল্লি ও টাকাপুরা সুশীলা শিশু শিক্ষাকেন্দ্র অন্যের বাড়িতে চলছে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ মামুদ হোসেন বলেন, “জেলার বিভিন্ন এলাকায় ১৫৪টি ও ১৩টি মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের নিজস্ব জায়গা নেই বলে জানতে পারা গিয়েছে। ফলে ওই শিক্ষাকেন্দ্রগুলির জন্য উন্নয়নের জন্য টাকা বরাদ্দ করা যাচ্ছে না। সম্প্রতি রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর জানিয়েছে অবিলম্বে ওই সব শিশু ও মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের নিজস্ব জায়গার ব্যবস্থা করতে না পারলে সেগুলির অনুমোদন বাতিল করা হবে। বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত সমিতিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।”
কোলাঘাটের পূর্ব বহলার শিশুশিক্ষা কেন্দ্রটি ২০০২ সালে অনুমোদন পেয়েছিল। ওই শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের একমাত্র শিক্ষিকা বেলা মাইতি বলেন, “গ্রামে কোনও প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। তাই ২০০২ সালে এই শিশুশিক্ষা কেন্দ্র অনুমোদনের পর প্রথমে আমার বাড়িতেই চলছিল। ২০০৬ সাল থেকে তাপবিদ্যুত্‌ কেন্দ্রের এই জমিতে গ্রামবাসীরা এই স্কুল চালু করে। গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে টাকা দিয়ে ক্লাসঘর, রান্নাঘর ও শৌচাগার করে দিয়েছে। কিন্তু এখনও স্কুলের নিজস্ব জায়গা না থাকায় বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য অর্থ বরাদ্দ পেতে সমস্যা হচ্ছে।” গ্রামের তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য সুরাইয়া খাতুন বলেন, “তাপবিদ্যুত্‌ কেন্দ্র ও মেচেদা বাজার সংলগ্ন হওয়ায় এখানে জায়গার দাম অনেক বেশি। তাই স্কুলের জন্য জায়গা কিনে দেওয়া মুশকিল। আমরা তাপবিদ্যুত্‌ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কাছে স্কুলের জন্য বর্তমান জায়গাটি চেয়ে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু কোন সাড়া মেলেনি। ”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.