সম্পাদকীয় ১...
কুবাতাস
হরের বাতাসে ক্যান্সারের আশঙ্কা ভাসিতেছে। গোটা তৃতীয় বিশ্বেই, ভারতেও। দেশের শহরগুলির মধ্যে আবার সর্বাপেক্ষা বিপজ্জনক কুবাতাস কলিকাতায়। কেন, সেই প্রশ্নের উত্তরও এই দূষিত বাতাসেই ভাসিতেছে। কারণ, কলিকাতা হউক বা বেঙ্গালুরু অথবা বেজিং, তৃতীয় বিশ্বের বহু মহানগরই অদূরদর্শী। বৎসরের পর বৎসর ঋতু পরিবর্তনের সময় বেজিং ধোঁয়াশায় ঢাকা পড়িয়া থাকে। এখনও আছে। এই শহরগুলিতে বিবিধ নির্মাণের জায়গা করিয়া দিতে সবুজ মুছিয়া ফেলা হইয়াছে। নগরবাসীর আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্যের প্রতীক হিসাবে ব্যক্তিগত পরিবহণ রাস্তার দখল লইয়াছে। তৃতীয় বিশ্বের বহু শহরই আজ চাকচিক্যে চোখ ধাঁধাইয়া দিতে পারে কলিকাতার হতশ্রী দেখিয়া মুম্বই বা সাংহাই-এর ঔজ্জ্বল্য অনুমান করা যাইবে না। কিন্তু, প্রথম বিশ্বের সহিত এই শহরগুলির ফারাক মূলগত। প্রথম বিশ্ব পরিবেশকে অস্বীকার করে নাই। যেমন, বহু সভ্য শহরে ব্যক্তিগত গাড়ি চড়িয়া ঘোরা কার্যত এক অভাবনীয় বিলাসিতা গাড়ি চালাইবার অনুমতি হইতে শহরের কেন্দ্রে প্রবেশ করিবার কর অথবা পার্কিং ফি, সবই অত্যন্ত চড়া। তবে, ডিজেল গাড়ির রমরমা, তৃতীয় বিশ্বেই সর্বাধিক হইলেও, গোটা দুনিয়ারই সমস্যা।
শহরের বায়ুতে কার্সিনোজেন-এর পরিমাণ বৃদ্ধি এক সার্বিক ব্যর্থতার ফল। শহর গড়িয়া তুলিবার ব্যর্থতা। কলিকাতার কথাই ধরা যাক। এই শহরে স্বস্তিতে যাতায়াত করিতে হইলে একমাত্র ভরসা নিজের গাড়ি। কারণ, গণপরিবহণের হাল করুণ। তাহার একটি কারণ বাজারের নিয়ম জলাঞ্জলি দিয়া ভাড়া না বাড়াইবার সরকারি জেদ। অন্য কারণ, গণপরিবহণের প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে নেতাদের অজ্ঞানতা। শহরের রাস্তা যত, গাড়ির পরিমাণ তাহার তুলনায় অনেক বেশি। ফলে, এক দিকে শহরের রাস্তায় সব গাড়িই বহু ক্ষণ দাঁড়াইয়া থাকিতে বাধ্য হয় এবং তাহাতে দূষণের মাত্রা বাড়ে, আর অন্য দিকে সাইকেলের ন্যায় পরিবেশবান্ধব যান নিষিদ্ধ করা ভিন্ন আর উপায় থাকে না। এই জট ছাড়াইবার একমাত্র উপায়, গণপরিবহণ ব্যবস্থাকে ঢালিয়া সাজা। বাসের সংখ্যাবৃদ্ধি করা এবং বাসগুলিকে ভদ্রজনের ব্যবহারের যোগ্য করিয়া তোলা; ট্রামরাস্তাগুলির পুনরুজ্জীবন; মেট্রো রেলের আধুনিকীকরণ, নদী পরিবহণে জোর দেওয়া। তাহার পরবর্তী ধাপ, শহরের প্রাণকেন্দ্রে ব্যক্তিগত পরিবহণ নিষিদ্ধ করা অথবা প্রবেশের উপর বিপুল কর আরোপ করা। অন্য দিকে, ফুটপাত দখলমুক্ত করা প্রয়োজন, যাহাতে পথচারীর ভিড় রাস্তায় না নামিয়া আসে। রাস্তা ফাঁকা হইলে সাইকেলের জন্য পৃথক পথ করিয়া দেওয়া। একেবারে শিকড় ধরিয়া টান না মারিলে এই রোগ সারিবে না।
বায়ুদূষণের এই বিপদকে ঠেকাইতে এক দিকে যেমন পরিবহণসঞ্জাত দূষণ কমাইবার কথা ভাবিতে হইবে, অন্য দিকে শুদ্ধ বায়ুর জোগান বাড়াইতেও হইবে বইকী। প্রথম কথা, শহরে অনেক বেশি গাছ প্রয়োজন। তৃতীয় বিশ্বের সব শহরের ক্ষেত্রেই কথাটি সত্য। গত কুড়ি বৎসরে দিল্লি এই পথে অনেক দূর হাঁটিয়াছে। তাহার সুফলও মিলিয়াছে। সেই সুফল পরিসংখ্যানেও প্রতিফলিত, নাগরিকদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতাতেও। শহরকে কেন্দ্রের দিকে না টানিয়া প্রান্তের দিকে ঠেলাও আর একটি পথ। বিবাদী বাগ বা ধর্মতলার বদলে যত বেশি সংস্থা বা দফতর রাজারহাট, বারাসত বা সোনারপুরে সরিয়া যাইবে, কলিকাতার উপর চাপও তত কমিবে। শহরতলি বা তাহারও দূরবর্তী অঞ্চলকে গণপরিবহণের আওতায় আনিয়া ফেলিতে পারিলে দূষণের ঘনত্ব কমে। উন্নত দুনিয়া এই পথেই হাঁটিতেছে। কলিকাতা হাঁটিবে কি? না কি, (পরিবেশ)বিপ্লবের পথ বেজিং হইয়া কলিকাতায় চলিতেছে এবং চলিবে? চিনের ধোঁয়াশা আমাদের ধোঁয়াশা?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.