হোয়াইট হাউসের সামনের রোজ গার্ডেন তখন রীতিমতো ভিড়ে ঠাসা। মোটে পাঁচ দিন আগেই প্রায় খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে মার্কিন প্রশাসন। প্রেসিডেন্ট ওবামার সাধের প্রকল্প ওবামা কেয়ার (অল্প খরচে সকলের জন্য স্বাস্থ্য বিমা) নিয়ে মতানৈক্যে আমেরিকায় দু’সপ্তাহের জন্য বন্ধ হয়ে যায় সমস্ত প্রশাসনিক কাজকর্ম। গত বুধবার তালা খোলার পর সোমবারই স্বাস্থ্য বিমা নিয়ে বক্তব্য রাখছিলেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। ঠিক পিছনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন কার্মেল অ্যালিসন নামে এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলা। প্রেসিডেন্টের বক্তৃতার মাঝে আচমকাই মাথা ঘুরে যায় তাঁর। মাটিতে পড়ে যাবেন এমন সময়ই এগিয়ে এল সাহায্যের হাত। এবং হাতের মালিক খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
ওবামার এই বিচক্ষণতায় তত ক্ষণে হাততালির রোল উঠেছে রোজ গার্ডেনে। তার মাঝে ওবামা নিজেই ঠাট্টা করে বললেন, “আমি বেশি ক্ষণ কথা বললে বুঝি এ রকমটাই হয়!” |
আমেরিকার এক ডায়াবেটিক সংস্থার পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্টের বক্তৃতা শুনতে হোয়াইট হাউসে গিয়েছিলেন কার্মেল। সেই ন’বছর বয়স থেকেই তাঁর সঙ্গী এই রোগ। পরে অ্যালিসন টুইট করে জানান, “আমাকে ধরে ফেলার জন্য প্রেসিডেন্টকে অসংখ্য ধন্যবাদ। রোদে দাঁড়িয়েছিলাম বলে মাথাটা একটু ঘুরে গিয়েছিল। পড়ে গেলে কী লজ্জারই না ব্যাপার হতো।” তবে প্রেসিডেন্টের ছোঁয়া পেয়ে খুশিতে ডগমগ সান দিয়েগোর এই তরুণী। অ্যালিসনকে পরে হোয়াইট হাউসের চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে দেখেন। এখন দিব্যি আছেন এই হবু মা।
কার্মেল অ্যালিসন জানিয়েছেন, ছোট বেলায় ডায়াবেটিস ধরা পড়ার আগেই ভাগ্যিস তাঁর স্বাস্থ্য বিমা করানো হয়ে গিয়েছিল। এতগুলো বছর ধরে সেটাই চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। কারণ নতুন কোনও বিমা করাতে গেলে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়াত এই রোগ। ফলে এত দিন হন্যে হয়ে অল্প দামের স্বাস্থ্য বিমা খুঁজলেও নাগাল মেলেনি তার। প্রেসিডেন্টের দৌলতে কম খরচে স্বাস্থ্য বিমা চালু হওয়ায় তাঁর মতো আরও অনেকে উপকৃত হবেন বলে আশা কার্মেলের। |
এই স্বাস্থ্য বিমা চালু করতে অবশ্য কম মাসুল দিতে হয়নি ওবামা প্রশাসনকে। রিপাবলিকান-ডেমোক্র্যাটদের লড়াইয়ের জেরে নতুন আর্থিক বছর শুরুর আগে পাশ করানো যায়নি বাজেট। তবু শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত হাল ছাড়েননি বারাক ওবামা। অচলাবস্থা কাটার পর একই উৎসাহ নিয়ে লেগে রয়েছেন স্বাস্থ্য বিমা নিয়ে। সোমবার তিনি জানান, “ব্যাপারটা ভালই এগোচ্ছে, দামও বেশ সস্তা।” প্রেসিডেন্টের কপালে চিন্তার ভাঁজ বাড়িয়েছে কেবল একটাই বিষয়, কাজ করছে না এই সংক্রান্ত ওয়েবসাইটটা। নিজেই জানালেন, “এটা নিয়ে আমার থেকে বেশি মাথা খারাপ আর কারও হচ্ছে না।” তবে এত সমস্যা যখন পেরোনো গিয়েছে, এটাও যাবে ওবামাচিত দৃঢ়তায় জানিয়েছেন সেই কথাও।
|