|
|
|
|
বৃষ্টির ব্যাংককে জাতিস্মর
সেখানে হাজির সৃজিত। সঙ্গে যিশু ও আবির। ব্যাংকক থেকে শ্যুটিংয়ের ডায়েরি লিখলেন অরিজিৎ চক্রবর্তী |
ব্যাংককের আবহাওয়া যে মোটেই শুটিংয়ের অনুকূল নয় তার খবর নতুন করে দেওয়ার কিছু ছিল না।
‘ওয়েদার অ্যাপস’টা ওপেন করলেই স্পষ্ট জানা যাবে। কিন্তু কতটা প্রতিকূল তার মাত্রাটা ধরা পড়বে না।
সুবর্ণভূমি বিমানবন্দরে প্লেন নামার আগে প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে যে এয়ার টারবুলেন্স চলল, কেবিন ক্রুরা এর আগে কত বার এমন আবহাওয়া গোলযোগের সম্মুখীন হয়েছেন তা নিয়ে সন্দেহ হতেই পারে। না হলে তিন তিন বার সময় ভুল বলবেন অভিজ্ঞ ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট। ল্যান্ড করার পর অবশেষে সময়ের ভুল শোধরালেন তিনি।
তবু ‘বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল’ এই পূর্বাভাসেই গত চার দিন ধরে সৃজিত মুখোপাধ্যায় ‘জাতিস্মর’য়ের শেষ শ্যুট করেছেন ব্যাংককে। ‘মিশর রহস্য’র সেলিব্রেশন হিসেবে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ডাকনাম ঋজু নিয়ে ফেসবুক পিন্টারেস্টে সত্যজিৎ- ঋতু-ঋজু ট্র্যাডিশনের ওপর ভূরি ভূরি কমেন্টের বন্যা বয়ে যাচ্ছে!
কিন্তু তাতে কী? সৃজিতের ফোকাস এখন শুধুই ‘জাতিস্মর’।
এটা ইউনিভার্সিটি
আগে তিন দিন শ্যুটিং হয়ে গিয়েছে। এয়ারপোর্ট থেকে লাইব্রেরি অনেক জায়গায় শ্যুট করে, রিলায়্যান্স এন্টারটেনমেন্টের ‘জাতিস্মর’য়ের শেষ দিনের শ্যুটিং ছিল ব্যাংককের অ্যাসাম্পশন ইউনিভার্সিটিতে। এয়ারপোর্ট থেকে ক্যাম্পাস যাওয়ার পথের চারিদিকে প্রতিকূল আবহাওয়ার অনেক নিদর্শন ছড়িয়ে ছিটিয়ে। রাস্তাঘাট বাস্তবিকই ‘নদীদের স্বরলিপি’। কোথাও কোথাও জমা জল বেহালার জলজমাকেও বলে বলে ছ’ গোল দেবে। তবে আসল চমকটা যে ইউনিভার্সিটিতে তার কোনও আন্দাজ ছিল না।
|
|
ব্যাংককের অ্যাসাম্পশন ইউনিভার্সিটিতে শ্যুটিং করছেন যিশু সেনগুপ্ত। ছবি: অমল কুণ্ডু। |
৪৪ বছর আগে তৈরি এই ইউনিভার্সিটিকে ইউনিভার্সিটি না বলে ইউনিভার্সিটি কমপ্লেক্স বলাই ভাল। বা চাইলে ইউনিভার্সিটির আগে একটা লাক্সারি প্রিফিক্সও জুড়ে দেওয়া যেতে পারেন। গির্জা, বাস্কেটবল কোর্ট, লেক তো আছেই যেমনটা অনেক ইউনিভার্সিটিতেই থাকে। কিন্তু গিফ্ট শপ, স্পা কোন ইউনিভার্সিটিতে পাবেন? এখানেই ছিল এ দিনের লোকেশন। অবশ্য এমন লাক্সারি ইউনিভার্সিটির ট্রেলর কিন্তু এয়ারপোর্ট থেকে ইউনিভার্সিটি যাওয়ার পথে পঁচিশ কিলোমিটারের মধ্যে অঢেল ছিল। ছিল কুড়ি হাজার ভাট মাসিক মূল্যের লাক্সারি কন্ডো থেকে পেন্টহাউজ।
যাই হোক এই অ্যাসাম্পশন ইউনিভার্সিটির লেকেই শ্যুটিং চলল সারাদিন। লেকের পার দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন যিশু সেনগুপ্ত। পারে একটা পাথরের ওপর হলুদ টি শার্ট পরে বসে সৃজিত মুখোপাধ্যায়। ফোকাস ঠিক করতে ব্যস্ত ডিরেক্টর অব ফোটোগ্রাফি সৌমিক হালদার। কিন্তু চমকটা ও পাশেও ছিল। তিনি আবির চট্টোপাধ্যায়। হ্যাঁ, আবির চট্টোপাধ্যায়ও আছেন ‘জাতিস্মর’য়ে। যিশুর বন্ধুর ভূমিকায়। তার মানে অবশেষে ব্যোমকেশ এলেন ব্যাংককে। “হা হা, আমার চরিত্রটা নিয়ে আসলে তেমন কেউই জানেন না। চরিত্রটাও অবশ্য খুব একটা বড় কিছু নয়। খুব ছোট একটা রোল। যিশুর বন্ধুর ভূমিকায় অভিনয় করছি আমি। আজকেই ফিরে যাব। এই সিনটা শ্যুট হয়ে গেলেই চলে যাব সোজা এয়ারপোর্ট,” বলছিলেন আবির।
কেন যে ইংলিশটা শেখে না!
শ্যুটিং লোকেশন থেকেই সোজা এয়ারপোর্ট যাওয়ার প্ল্যান ছিল যিশু সেনগুপ্তরও। কিন্তু শ্যুটিংয়ে কোনটাই বা পরিকল্পনা মাফিক হতে পারে! আক্ষরিক অর্থে দৌড়তে দৌড়তে এয়ারপোর্ট পৌঁছোন যিশু। লাগেজ আর একজন নিয়ে আসেন এয়ারপোর্টে। সুবর্ণভূমি না গিয়ে যে দনমুয়াং যাবেন, সেটা বোঝাতেই তো দোভাষীর শরণাপন্ন হতে হচ্ছে। ড্রাইভার থেকে লোকাল স্পটবয় কেউই ইংরাজি জানেন না। ব্যাংককের মিলিয়ন ডলার প্রশ্নটা যিশুই করলেন, “এত ট্যুরিস্ট। ইকনমির বেশির ভাগটাই তো ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রি থেকে আসে। তবু কেন যে এরা ইংরাজিটা শেখে না কে জানে!”
পরের দিন সকালে আর একটা শ্যুটিংয়ের কলটাইম সকাল ৭টা। তাই মেয়ের জন্য শপিং নয়, যিশু সেনগুপ্তর গন্তব্য কলকাতা।
অবশ্য শুধু ড্রাইভার বা স্পট বয় নয়, বাদবাকি কেউই ইংরাজিটা জানে না। অ্যাসাম্পশন ইউনিভার্সিটির ছাত্রছাত্রীদের দোভাষীর কাজে লাগাবেন, তারও উপায় নেই। তাদের ইংলিশ আপনার তাই ভাষার চেয়েও খারাপ! এমনকী শ্যুটিং কোঅর্ডিনেটরের অবস্থাও তাই। জুনিয়র আর্টিস্টদের অবস্থাও তথৈবচ। স্পট বয়রা তো বটেই, জিমি জিব-এর সিকোয়েন্স বোঝাতেই তো এনার্জি অর্ধেক শেষ। তাদের বুঝিয়ে চা নেওয়ার চাইতে দার্জিলিং থেকে নিয়ে আসা সহজ। সব সময় মুখে হাসি লেগে থাকায় ধৈর্যটা ধরছে সবাই। না হলে এখানেই ফাটাফাটি হয়ে যেত আর কী! |
|
‘অ্যান্টনি’ হোয়াট?
অ্যাসাম্পশন ইউনিভার্সিটির মাঝখান দিয়ে বেশ কিছু রাস্তা চলে গিয়েছে। সেখানে গাড়ির যাতায়াতও মন্দ নয়। ইউনিভার্সিটি চার্চ আর সেন্ট মাইকেলস হল-এর কানেক্টিং যে রাস্তা, সেটা দেখলে এনএইচ ৩৪-ও লজ্জা পাবে। এই রাস্তার দু’পাশে টাঙানো রয়েছে নানা দেশের পতাকা। সাউন্ড রেকর্ডিংয়ের একজন সেখান দিয়ে ঘুরে এসে একটা ইন্টারেস্টিং কথা জানালেন। ওই পতাকাগুলোর মধ্যে ভারতীয় পতাকা নেই। সত্যিই নেই। কারণটা বোঝা গেল না। কারণ ওয়েবসাইটের হিসেবে ১১০০ ভারতীয় ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে এই অ্যাসাম্পশন ইউনিভার্সিটিতে। সেন্ট মাইকেল হল-এ দাঁড়িয়ে থেকে তার আন্দাজ পাওয়া যায়।
তখন থার্ড শট-এর তোড়জোড় চলছে। আবির চট্টোপাধ্যায় আর যিশু সেনগুপ্ত আড্ডা দিচ্ছিলেন হলের ডান দিকে দাঁড়িয়ে। বছর তিরিশের এক যুবক যেতে যেতে থমকে দাঁড়িয়ে আবিরকে কীসের শ্যুটিং হচ্ছে জিজ্ঞেস করলেন। অ্যাকসেন্ট আমেরিকান হলেও ভারতীয় বোঝা যায়। যুবকটি দক্ষিণ ভারতীয়। এখানে প্রিন্সিপ্যালস অফিসে চাকরি করেন। উনিই বললেন কিছু দিন আগে নাকি গোবিন্দ শ্যুট করে গিয়েছেন এখানে। তবে ‘জাতিস্মর’য়ের বিষয়টা কী তা বোঝাতে গিয়ে যিশুকে অনেক বার ‘অ্যান্টনি হোয়াট’ শুনতে হল।
তোমাকে চেয়েছিলাম যখন অনেক জন্ম আগে...
প্রেমটা সত্যিই বাতাসে, না ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে! মেসেজ, হোয়াটসঅ্যাপ করার কথা নয়। ফিজিক্যালিও বটে। অবশ্য তাতে ‘জাতিস্মর’য়ের চরিত্রও বাদ নেই। কখনও গল্পে, কখনও বাস্তবে। ছবিতে যিশু আর বিদেশি বান্ধবী তো একটা অংশ। ক্লাসের সিকোয়েন্স যেখানে যিশুর বোর লাগে, মিউজিকের জন্য মন টানে, সেখানে ব্যাক সিটে বসা এক জুনিয়র আর্টিস্ট সমানে ঝারি মেরে যাচ্ছে যিশুকে। সেটা নিয়ে হাসাহাসি, মজা করা সবই চলছিল। মজাগুলো ছিল বলেই কাপ নুডলে স্ন্যাক্স, মেক আপ ভ্যানের অনুপস্থিতি মালুম পড়েনি। হয়তো বা করেছিল, কবীর সুমনের ‘জাতিস্মর’ গানে ছিল না
‘অমরত্বের প্রত্যাশা নেই, নেই কোনও দাবিদাওয়া
এই নশ্বর জীবনের মানে শুধু তোমাকেই চাওয়া।” |
|
|
|
|
|