জমি নিয়ে শরিকি বিবাদের জেরে মালদহের কালিয়াচকের বাবলা এলাকায় দু’জন গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনায় ৫ জন মহিলা সহ দু’পরিবারের মোট ১১ জন জখম হয়েছেন। রবিবার রাতে ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকার দুটি পরিবারের মধ্যে জমি সংক্রান্ত বিবাদ মেটাতে রবিবার রাতে গ্রামে সালিশি সভা বসে। সেই সভাতেই সংঘর্ষের সূত্রপাত। দু’পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে বোমা-গুলি নিয়ে হামলার অভিযোগ তুলেছে। গুলিবিদ্ধ ২ জন সহ মালদহ মেডিক্যাল কলেজে মোট ৩ জনকে ভর্তি করানো হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানানো হয়েছে, জখমদের একজনের রাতেই অস্ত্রোপচার করে গুলি বার করা হয়। আর এক জনের গুলির আঘাতে পায়ে ক্ষত হয়েছে। একজনের নাক ধারালো অস্ত্রের কোপে কেটে গিয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে।
মালদহের পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় এ দিন বলেছেন, “জমি নিয়ে পারিবারিক বিবাদের জেরে সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটেছে। জখমদের চিকিৎসা চলছে। সংঘর্ষের ঘটনায় যুক্ত সন্দেহে দুই মহিলা-সহ ৭ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।” পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিবেশী খুড়তুতো দুই ভাই আনসারি মোমিন এবং সোহরাব মোমিনের পরিবারের মধ্যে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে জমি নিয়ে বিবাদ চলছে। ১৩ বছর আগে সোহরাবের থেকে আনসারি ৭৪ হাজার টাকায় প্রায় ২ কাঠা জমি কিনলেও, সেই জমির রেজিস্ট্রি করানো নিয়ে বিবাদ চলছিল বলে অভিযোগ। এলাকাবাসীর দাবি, এর আগেও দু’বার সালিশিসভা বসলেও সমস্যার নিষ্পত্তি হয়নি। রবিবার রাতে ফের সালিশি সভা বসে। ঘণ্টাখানেক সভা চলার পর গোলমাল বেধে যায় বলে গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন। অভিযোগ, দু’পরিবারের লোক একে অপরের বিরুদ্ধে ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। বোমা এবং গুলিও ছোড়া হয়। ঘটনায় গোটা গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সভায় উপস্থিত গ্রামবাসীরাও পালিয়ে যায় বলে জানা গিয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালীন হাসিমুদ্দিন নামে এক ব্যক্তির যৌনাঙ্গে গুলি লাগে। পায়ে গুলি লেগে জখম হল সোহরাব মোমিন। ধারালো অস্ত্রের কোপে নাকে ক্ষত রয়েছে জামশেদ মোমিনের। রাতেই পুলিশ দু’পক্ষের ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে।
সালিশি সভায় স্থানীয় রথবাড়ি পঞ্চায়েতের কোনও সদস্য উপস্থিত না থাকলেও প্রধান নাসিমা আহমেদের স্বামী উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যায়। কংগ্রেসের প্রধান নাসিমা আহমেদ বলেন, “ওই সালিশি সভার সম্পর্কে পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের সম্পর্ক নেই। আমার স্বামী স্থানীয় বাসিন্দা হিসেবে সেখানে উপস্থিত ছিলেন।” প্রধানের স্বামী হাসিমুদ্দিন আহমেদ বলেন, “সালিশি সভা শুরুর পরে আমি বাড়ি ফিরে যাই। সংঘর্ষের খবর পেয়ে ফের সভায় আসি। তখনই পুলিশে খবর দেওয়া হয়।” গুলিবিদ্ধ হাসিমুদ্দিনের স্ত্রী মর্জিনা বিবির অভিযোগ, “সভা ভেস্তে দিতে বাইরে থেকে দুষ্কৃতীদের নিয়ে এসে হামলা চালান সোহরাব।” অন্য দিকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন সোহরাবের অভিযোগ, “জমির দাম নিয়েই সমস্যার শুরু। সভায় মীমাংসা হতে পারত। কিন্তু ওরা সেটা চায় না বলেই হামলা চালায়।” |