বছর ঘুরে আরও একটা টোম্যাটো-লঙ্কার মরসুম দরজায় কড়া নাড়ছে। হলদিবাড়ির কৃষকদের অভিযোগ, ‘প্রতিশ্রুতি’ নিয়ে আরও এক বছর পার হয়ে গেলেও এলাকায় বহুমুখী হিমঘর তৈরি হয়নি। এ বারেও ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কোচবিহার জেলার হলদিবাড়ি সহ লাগোয়া জলপাইগুড়ি জেলার অন্তত ২০ হাজার কৃষক।
কেন এই বারও ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা? প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, হলদিবাড়ি সহ লাগোয়া জলপাইগুড়ির বেরুবাড়ি, মণ্ডলঘাট ও মানিকগঞ্জ মিলিয়ে প্রতি মরসুমে প্রায় ১ লক্ষ টন টোম্যাটো এবং দেড় লক্ষ টন লঙ্কার ফলন হয়। মরসুমের শুরুতেই টোম্যাটো ও লঙ্কার রফতানি শুরু হয় হলদিবাড়ি থেকে। কৃষকদের মতে সমস্যার সূত্রপাত হয় মরসুমের মাঝামাঝি সময় থেকে। ফলন বাড়ার সঙ্গেই রফতানির পরিমাণও কমে যায়। উদ্বৃত্ত টোম্যাটো এবং লঙ্কা সংরক্ষণের মতো বহুমুখী হিমঘর এলাকায় না থাকায় সব ফসলই বাজারে নিয়ে আসতে বাধ্য হন কৃষকরা। যার জেরে ফসলের দাম কমতে শুরু করে। কৃষকদের অভিযোগ, এর ফলে এক দিকে ফসল উৎপাদনের খরচই জোগাড় করা সম্ভব হয় না, প্রচুর ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দ্বিগুণ ক্ষতি হয়।
কৃষি দফতরের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, মোট উৎপাদনের প্রায় ৩০ শতাংশ ফসল সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় ফি বছর নষ্ট হয়হলদিবাড়ির কৃষক বক্সিগঞ্জের বুলবুল হক সরকার এবং বিমল সরকার প্রতি বছর ১৫ বিঘা জমিতে টোম্যাটো এবং পাঁচ বিঘা জমিতে লঙ্কা চাষ করেন। দু’জনেই বললেন, “বহুমুখী হিমঘর থাকলেই সব সমস্যার সমাধান হতে পারত।”
হলদিবাড়ির কৃষি খামারে কৃষি বিপণন দফতর থেকে সরকারিভাবে ছোট একটি হিমঘর তৈরি হয়েছে। যদিও বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে সেই হিমঘর চালু হয়নি। হলদিবাড়ি নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির সম্পাদক সুরজ তামাঙ্গ বলেন, “এই হিমঘরটিতে মাত্র ৫০ টন টোম্যাটো রাখা যেতে পারে। তবে লঙ্কা রাখা যাবে না। কৃষি বিপণন দফতর থেকে আর একটি ছোট হিমঘর তৈরি কথা রয়েছে।” পাশাপাশি গত ৭ মার্চ জলপাইগুড়ি হলদিবাড়ি সড়কের পাশে মণ্ডলঘাট মোড়ে একটি সবজি প্রক্রিয়াকরণ এবং হিমঘর প্রকল্পের শিলান্যাস করা হয়। সেই প্রকল্পও চলতি বছরে রূপায়ণ করা সম্ভব নয় বলেই জানানো হয়েছে।
উত্তরবঙ্গের বেসরকারি হিমঘর মালিকদের সংগঠনের সম্পাদক প্রদীপ প্রসাদ বলেন, “হলদিবাড়িতে বহুমুখী হিমঘর লাভজনক নয়। টোম্যাটোর জন্যে হিমঘর করা গেলেও পরে টোম্যাটো বার করে আনতে গেলে যা খরচ তার থেকে বাজারে অনেক কম দামে টোম্যাটো পাওয়া যাবে। বর্ষা কালে সিকিম ও দার্জিলিং-সহ দেশের অন্যান্য জায়গার টোম্যাটো পাওয়া যায়।” হলদিবাড়ি পাইকারি সবজি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি তরুণ দত্ত বলেন, “হলদিবাড়িতে এখন একটি সবজি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের দরকার। তাহলে টোম্যাটো নষ্ট হবে না। বাজারে বেশি টোম্যাটো এবং লঙ্কা এসে গেলে তা সেই শিল্পে ব্যবহার হবে।” বহুমুখী হিমঘর বা সবজি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প এই নিয়ে প্রতিশ্রুতি-টানাপোড়েনে চলতি মরসুমে ফের ক্ষতির আশঙ্কায় ভুগছেন দুই জেলার কৃষকরা। |