বছর তেরো আগে মহকুমা হিসাবে স্বীকৃতি মিলেছে। যদিও, চাঁচলের বাসিন্দাদের অভিযোগ, স্বীকৃতি শুধু ঘোষণাতেই আটকে, পরিষেবার উন্নতি হয়নি।
বাসিন্দাদের দীর্ঘ আন্দোলনের পর, মালদহের ৬টি ব্লক এবং ৪৯টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে ১ এপ্রিল ২০০১ চাঁচল মহকুমা গঠিত হয়। সেই মতো স্বাস্থ্য থেকে কৃষি সব দফতরেরই মহকুমা অফিস চাঁচলে তৈরি হবে বলে ঘোষণা করা হয়। যদিও ঘোষণার ১৩ বছর পরে চাঁচল মহকুমার প্রশাসনিক এবং নাগরিক পরিষেবা নিয়ে বাসিন্দাদের ক্ষোভের অন্ত নেই। মহকুমা ঘোষণার পরে চাঁচল স্বাস্থ্যকেন্দ্র মহকুমা হাসপাতালে উন্নীত হলেও চিকিৎসকের সংখ্যা আগের মতো ৫ জনই রয়ে গিয়েছে। পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় ৬৮ শয্যার হাসপাতালে ভর্তি রোগীর চিকিৎসা যথাযথ ভাবে হয় না বলে অভিযোগ। সামান্য জটিল রোগেও মালদহ হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া হয়। একই ভাবে, পাঁচ বছর আগে চাঁচলে ট্রেজারি চালু হলেও পেনশন বিভাগ এখনও চালু হয়নি। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মীদের মালদহে যাতায়াত ছাড়া বিকল্প উপায় নেই। মহকুমা খাদ্য দফতর এবং পরিবহণ দফতরের কাজও শুরু হয়নি চাঁচলে।
মহকুমার পরিকাঠামো নিয়ে নানা সমস্যা রয়েছে প্রশাসনের অন্দরেও। দেড় বছর আগে মহকুমা আদালতের কাজ শুরু হয়েছে চাঁচলে। যদিও মহকুমা সংশোধনাগার চালু না হওয়ায়, আদালতে জামিন না পাওয়া বন্দিদের প্রতিদিন মালদহে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হয় মহকুমা পুলিশ প্রশাসনকে। এতে গাড়ির তেল ও নিরাপত্তার খরচ বেড়েছে। পাশাপাশি মহকুমা সদরের পরিষেবার মান বাড়াতে চাঁচলকে পুরসভার মর্যাদা দেওয়ার প্রস্তাব নেওয়া হলেও তা এখনও রূপায়িত না হওয়ায় বাসিন্দাদের ক্ষোভ বেড়েছে।
মালদহের জেলাশাসক গোদালা কিরণকুমার বলেন, “চাঁচলে মহকুমা হাসপাতাল সহ অতিরিক্ত আঞ্চলিক পরিবহণ অফিস চালুর জন্য মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। প্রশাসনও উদ্যোগী হয়েছে। অন্য দফতরও যাতে চালু হয় সেই প্রস্তাব পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
সঙ্গে চলছে রাজনৈতিক তরজাও। কংগ্রেসের দাবি, প্রাক্তন সাংসদ তথা মন্ত্রী প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি কেন্দ্রের বরাদ্দ এনে চাঁচলে স্টেডিয়াম তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন। তিনি অসুস্থ হওয়ার পরে সে কাজ বরাদ্দের অভাবে বন্ধ। সিপিএমের চাঁচল জোনাল কমিটি সম্পাদক হামেদুর রহমান বলেন, “বাম সরকারই চাঁচলকে পুরসভা ঘোষণা করেছিল। পুরসভা হলেই নাগরিক পরিষেবার হাল ফিরত। কিন্তু বর্তমান সরকারের সেই সদিচ্ছা আছে বলে মনে হচ্ছে না।” চাঁচলের কংগ্রেস বিধায়ক আসিফ মেহবুব বলেন, “বিধানসভায় একাধিকবার চাঁচলের পরিকাঠামো উন্নতির দাবিতে সরব হয়েছি। বামেদের মতোই বর্তমান সরকারেরও হেলদোল দেখছি না।”
তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা নারী ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র বলেন, “৩৪ বছর বামেরা চাঁচলকে বঞ্চিত করে রেখেছিল। বর্তমান সরকার কাজ শুরুর পরেই চাঁচলের পরিকাঠামো উন্নতির কাজ শুরু করেছে। কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে বাসিন্দাদের, আশা করি তার পরে এ নিয়ে আর অভিযোগ থাকবে না।” |
একনজরে |
থেকেও নেই |
তৈরিই হয়নি |
• মহকুমা আদালত ( মূল
তথা অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট
জজ কোর্ট চালু হয়নি)
• ট্রেজারি (পেনশন বিভাগ
চালু হয়নি)
• অ্যাডিশনাল রিজিওনাল
ট্রান্সপোর্ট অফিস (দফতর
আছে, কাজ চালু হয়নি)
• সংখ্যালঘু বিত্ত উন্নয়ন
নিগম (সুপারভাইজার
আছেন, আধিকারিক নেই) |
• মহকুমা হাসাপাতাল
• জেলখানা
• সাবডিভিশনাল ফুড এন্ড
কন্ট্রোলার অফিস
• স্টেডিয়াম (মাঝপথে বন্ধ)
• বাস টার্মিনাস
• সুষ্ঠ নিকাশি ব্যবস্থা
• পুরসভা
• আদালত ও মহকুমা
শাসকের দফতরের কর্মী
ও আধিকারিক-আবাসন |
|