অক্টোবরও শেষ হতে চলল, কিন্তু বৃষ্টির বিরাম নেই। পুজোর ক’টা দিনও অসময়ের এই বৃষ্টি আর বাতাসের স্যাঁতস্যাঁতে ভাব বিরক্তির কারণ হয়ে উঠেছিল। কিন্তু এ বার নানা ধরনের শারীরিক সমস্যারও কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে অস্বস্তিকর এই আবহাওয়া। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, এই আবহাওয়ায় নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়া সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তার জেরে জ্বর, গা-হাত-পায়ে ব্যথা তো বটেই, ত্বকেও নানা সংক্রমণ ঘটছে। এ ধরনের অসুস্থতাকে হেলাফেলা না করে তাই দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
চর্মরোগ চিকিৎসকেরা জানান, প্রতি বছরই বর্ষার সময়ে নানা ধরনের ‘ফাঙ্গাল ইনফেকশন’ (ছত্রাক সংক্রমণ) দেখা দেয়। কিন্তু এ বারের ‘পরিবর্ধিত বর্ষা’য় তার রেশ অনেক বেশি। সংক্রমণ শরীরের অনেকটা অংশ জুড়ে হচ্ছে এবং বহু ক্ষেত্রেই ওষুধে চট করে সারছে না। বিশেষ করে ডায়াবিটিস রোগীদের ক্ষেত্রে ত্বকের এই সংক্রমণ গুরুতর আকার নিচ্ছে। চর্মরোগ চিকিৎসক সঞ্জয় ঘোষ বললেন, “শুধু ছত্রাক নয়, ‘মোল্ডস’ নামে এক ধরনের পরজীবীও ত্বকে আক্রমণ করছে। সেই সংক্রমণ ওষুধে সারছে না, বা সারলেও অল্প কয়েক দিনের ব্যবধানে আবার তা ফিরে আসছে। চামড়ায়, নখে সংক্রমণের জেরে সব বয়সের মানুষই জেরবার।”
দফায় দফায় বৃষ্টিতে রাস্তায় জল জমছে। সেই জলে পা ভিজে অনেকেরই পায়ে এক ধরনের সংক্রমণ হচ্ছে বলে জানান ডাক্তারেরা। পুজোর সময়ে ভিজে পায়ে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে অনেকেই পায়ে সংক্রমণ হয়েছে। ‘সেলুলাইটিস’ নামে এক ধরনের সংক্রমণ এতটাই কাবু করছে যে তার জেরে অনেককে হাসপাতালে ভর্তি পর্যন্ত হতে হয়েছে। তাই ত্বককে যতটা সম্ভব শুকনো রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। বৃষ্টির জলে পা ভিজলেও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঈষদুষ্ণ জলে পা ধুয়ে শুকনো করে মুছে নিতে বলছেন তাঁরা।
তাপমাত্রার তারতম্য বর্ষার বিভিন্ন অসুখের মেয়াদ বাড়িয়ে তুলছে অনেকটাই। জন্ডিস, টাইফয়েড, পেটের নানা সংক্রমণ থেকেই যাচ্ছে। চিকিৎসক সুব্রত মৈত্র বললেন, “ঋতু কিংবা জলবায়ু পরিবর্তনের সময়ে ওই সব ভাইরাস অতি সক্রিয় হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা বাতাসের সঙ্গে মিশে শরীরে ঢোকে। এক ধরনের ভাইরাস ঘটিত জ্বর ও সর্দিকাশি তো থাকছেই। পাশাপাশি জলবাহিত নানা রোগও পাওয়া যাচ্ছে, অন্য বছর এই সময়ে যেটা প্রায় থাকে না বললেই চলে।”
শহরের বিভিন্ন চিকিৎসক এবং জীবাণু বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, সব চেয়ে বেশি সমস্যা শিশুদের নিয়ে। বেশির ভাগেরই স্কুল খুলে গিয়েছে। বাইরে বেরোতেই হচ্ছে। খেলা বা স্কুল থেকে ফিরে অনেকেই ফ্রিজের জল বা ঠান্ডা পানীয় খাচ্ছে। তা থেকেই হচ্ছে সর্দি-কাশি, জ্বর। রাস্তায় কেনা সরবত থেকে পেটের নানা সমস্যাও হচ্ছে যা সহজে সারছে না।
এ দিকে, বৃষ্টির জল জমে মশার লার্ভা জন্মানোর সুযোগ বেড়ে গিয়েছে। পরজীবী বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দীর কথায়, “আবহাওয়ার এমন খামখেয়ালিপনা শরীরের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। ম্যালেরিয়ার রোগী অন্য বছরের তুলনায় বেশি পাচ্ছি। ডেঙ্গির ক্ষেত্রেও তাই। তবে গত বছর ম্যালেরিয়া এমন প্রবল আকার নিয়েছিল যে বহু মানুষের শরীরে কিছুটা প্রতিরোধ ক্ষমতা চলে এসেছে। এ বছর তাই ম্যালেরিয়া হলেও সেটা খুব ভয়াবহ আকার হয়তো নেবে না। একমাত্র আশার কথা সেটাই।” |