প্রতাপদিঘি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র
চিকিৎসক গরহাজির, রোগী দেখছেন ফার্মাসিস্ট
থাকার কথা তিন জন চিকিৎসকের। কিন্তু বাস্তবে উপস্থিত নেই এক জনও। রোগী দেখছেন ফার্মাসিস্ট ও নার্সরা। গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে এ ভাবেই চলছে পটাশপুর-২ ব্লকের দশ শয্যা বিশিষ্ট প্রতাপদিঘি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরের গা ছাড়া মনোভাবে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। বিডিও শুভজিৎ কুণ্ডু বলেন, “এটা বড় সমস্যা। সত্যিই এলাকার মানুষ পরিষেবা পাচ্ছেন না। প্রথম দিনই আমি স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট দিয়েছি। কিন্তু সোমবার পর্যন্ত কোনও চিকিৎসক আসেননি।”
ফার্মাসিস্টই রোগী দেখছেন।
পটাশপুর-২ ব্লক সদরেই অবস্থিত এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি। স্থানীয় মানুষদের দানের জমিতে প্রায় অর্ধশতক আগে এখানে প্রথম গড়ে উঠেছিল স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি। গত দু’দশক ধরে অবহেলায় জীর্ণ এই ভবনে শুধুমাত্র বহির্বিভাগই চালু ছিল। প্রতাপদিঘি হাসপাতাল বাঁচাও কমিটির উদ্যোগে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে লাগাতার আন্দোলনের ফলে হাল ফিরেছিল এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের। ৮৮ লক্ষ টাকায় সরকারি ভাবে দশ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নতুন ভবন নির্মাণও করা হয়। ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর যার উদ্বোধন করেছিলেন সাংসদ শিশির অধিকারী। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৩ জন নার্স, ১ জন ফার্মাসিস্ট, ৩ জন স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন। কিন্তু দেখা নেই চিকিৎসকের। নার্সরা কোনও মন্তব্য করতে না-চাইলেও রোগী দেখার ফাঁকেই ফার্মাসিস্ট ঈশ্বরচন্দ্র ওঝা বলেন, “কী, করব। আমরাই রোগী দেখছি। অন্তর্বিভাগে কাউকে ভর্তি নিচ্ছি না। মানুষ ক্ষোভ জানাচ্ছেন। অন্তত এক জন চিকিৎসক থাকা উচিত ছিল।” তাঁরই দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রতিদিন বহির্বিভাগে গড়ে দেড়শো জন রোগী আসেন। অন্তর্বিভাগে ভর্তি থাকেন ৩-৪ জন। স্থানীয়দের অভিযোগ, চিকিৎসক নিয়ে সমস্যা লেগেই আছে গত সাত মাস ধরে।
বন্ধ পড়ে অন্তর্বিভাগ।
প্রতাপদিঘি হাসপাতাল বাঁচাও কমিটির সম্পাদক সীতারাম পাহাড়ী ও সভাপতি ভার্গবেন্দ্রনাথ জানার বক্তব্য, “অদ্ভুত ভাবে প্রশাসনের তরফে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিকে অবহেলা করা হচ্ছে। আর্থিক ভাবে অনুন্নত প্রত্যন্ত এই এলাকার চারটি গ্রাম পঞ্চায়েতের মানুষ এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরই নিভর্র্রশীল। এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত হওয়ায় এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছাড়া দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত মানুষের গত্যন্তর নেই।” গত এক সপ্তাহ ধরে স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে সমস্যার কথা জানানো হলেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ। গোটা ঘটনায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় শ্রীরামপুর পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের রামচন্দ্র দাসও। তিনি বলেন, “রোগী ভর্তি হতে পারছে না। সবাই ‘দেখছি দেখছি’ বলে এত দিন কাটিয়ে দিলেন। প্রশাসনের দায়বদ্ধতা না-থাকলে রোগী বাঁচবে কী করে।”
গত বৃহস্পতিবার প্রসবের জন্য এক পুত্রবধূকে নিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসেছিলেন জক্তি গ্রামের রাজেন দাস। তাঁর অভিজ্ঞতা ভয়ঙ্কর। তিনি বলেন, “রোগী যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। তাঁকে কুড়ি কিলোমিটার দূরে মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। কিন্তু চিকিৎসক নেই বলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কেউ ভর্তিই নিলেন না। যার ফলে, মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি হতে না-হতেই প্রসব হল। আমরা এ সব মানবই বা কেন?”
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে পাওয়া এর ব্যাখ্যা অনুযায়ী, অনেক দিন ধরেই এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চুক্তিতে আছেন সবংয়ের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক চিকিৎসক তুষারকান্তি লায়া। তিনিই সামলান এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র। কিন্তু সম্প্রতি তিনি অসুস্থ হওয়ায় পনেরো দিনের ছুটিতে আছেন। এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক অনুজিৎ দাস গত ফেব্রুয়ারি মাসে বিভীষণপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ও পরে পটাশপুর-২ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগ দেন। ৮ অক্টোবর থেকে প্রতাপদিঘিতে তাঁর যোগ দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি যোগ দেননি। চিকিৎসক শর্মিলা মজুমদার গত মার্চ মাসেই এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে চলে যান পাঁশকুড়ার পাতন্ডা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। চিকিৎসক দেবাঞ্জন সাহা প্রতাপদিঘিতে জুন মাসে যোগ দিলেও ৭ অক্টোবর চলে যান পটাশপুর-১ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আধিকারিক হিসাবে। তুষারকান্তিবাবু বলেন, “পা ভেঙে পড়ে আছি। পনেরো দিন বিশ্রামের নির্দেশ দিয়েছেন চিকিৎসক। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”
সমস্যা সম্পর্কে প্রথম থেকেই অবহিত জেলাশাসক অন্তরা আচার্য। জেলাশাসক বলেন, “স্থানীয় ভাবে অভিযোগ পেয়েছি। সিএমওএইচ-কে বলেছি। যত দ্রুত সম্ভব ওখানে চিকিৎসক পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপনকুমার ঝারিয়াত জানান, এগরা মহকুমায় চিকিৎসকের সংখ্যা নিয়ে সমস্যা রয়েছে। বিষয়টি স্বাস্থ্যভবনে জানানো হয়েছে। ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্র সম্পর্কে নির্দিষ্ট করে তিনি বলেন, “চিকিৎসক তুষারকান্তি লায়া আমাদের কিছু না জানিয়ে অনুপস্থিত থাকছেন। চিকিৎসক অনুজিৎ দাসকে নির্দেশ দেওয়া হলেও তিনি প্রতাপদিঘি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগ দেননি। মঙ্গলবার তাঁকে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগ দেওয়ার জন্য কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’

ছবি: কৌশিক মিশ্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.