সাত মাস আগে শিলান্যাস হয়েছে। কিন্তু কাজ এগোয়নি এতটুকু। যেখানে নতুন ভবন তৈরির কথা, সেখানে পুরনো যে কাঠামো রয়েছে তা ভাঙার অনুমতিই আসেনি এখনও। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রস্তাবিত ‘মা ও শিশু সুরক্ষা কেন্দ্র’ কার্যত বিশবাঁও জলে। অথচ, অর্থের জন্য যে কাজ আটকে রয়েছে, এমন নয়। চার তলা ভবনের জন্য ইতিমধ্যে ১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
কেন এই পরিস্থিতি? গত মাসেই মেদিনীপুর মেডিক্যালের স্বাস্থ্য সমিতির সরকার মনোনীত সদস্য হয়েছেন বিধায়ক মৃগেন মাইতি। রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যানের পাশাপাশি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতিও তিনি। তাঁর আশ্বাস, “এ বার কাজ শুরু হবে।” হাসপাতাল সূত্রে খবর, আগামী ৩ নভেম্বর রোগী কল্যাণ সমিতির বৈঠক রয়েছে। ওই বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। রাজ্যের মধ্যে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই প্রথম ‘মা ও শিশু সুরক্ষা কেন্দ্র’ তৈরি হওয়ার কথা। অর্থ বরাদ্দ হওয়ার পরও এমন প্রকল্পের ক্ষেত্রে গড়িমসি চলতে থাকায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে বিভিন্ন মহলে। |
মেদিনীপুর মেডিক্যালে শিশু ও মহিলা বিভাগের পরিষেবা নিয়ে হামেশাই অভিযোগ ওঠে। কখনও কখনও চিকিৎসার গাফিলতিতে প্রসূতি কিংবা সদ্যোজাতের মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। হাসপাতাল কর্মীদের সঙ্গে রোগীর পরিবারের লোকজন বচসায় জড়িয়ে পড়েন। এমন পরিস্থিতির জেরে অন্য রোগীদের সমস্যায় পড়তে হয়। শয্যার অভাবে একই শয্যায় দু’জনকে থাকতে হয়। হাসপাতালে শিশু ও মহিলা বিভাগগুলো রয়েছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। মূলত, একই ছাদের তলায় শিশু ও মহিলা বিভাগকে নিয়ে আসতেই নতুন ভবন তৈরির ভাবনা। নতুন ভবন তৈরির জন্য প্রায় ১ হাজার ৮০০ বর্গমিটার জায়গা প্রয়োজন। হাসপাতাল চত্বরেই এই পরিমাণ জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। আপাতত, চারতলা ভবন তৈরি হওয়ার কথা। এ জন্য বরাদ্দ হয়েছে ১৬ কোটি টাকা টাকা। অর্থ সাহায্য করেছে ন্যাশনাল রুরাল হেলথ মিশন। নতুন ভবনে একশোটিরও বেশি শয্যা থাকবে। সঙ্গে কয়েকটি বিভাগও থাকবে। ইতিমধ্যে মেদিনীপুর মেডিক্যালে এসএনসিইউ চালু হয়েছে। এখানে ১২টি শয্যা রয়েছে। এসএনসিইউ চালুর ফলে ‘সঙ্কটজনক’ শিশুদের উপর বিশেষ নজর রাখা সম্ভব হচ্ছে। নতুন ভবন তৈরি হলে শয্যা সংখ্যা বাড়বে। ফলে, চাপ কিছুটা কমবে। পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো জেলায় গ্রামীণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ততটা উন্নত হয়। এ ক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। সামান্য কিছু হলে ব্লক হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে শিশু এবং মায়েদের জেলা সদরে ‘রেফার’ করে দেওয়া হয়। মেদিনীপুর মেডিক্যালের এক আধিকারিকের কথায়, “প্রস্তাবিত কেন্দ্র তৈরি হলে সমস্ত দিক থেকে সুবিধে। কারণ, একই ছাদের তলায় শিশু ও মহিলা বিভাগগুলো চলে আসবে। ফলে, রোগীর পরিবারের লোকেদেরও সুবিধে হবে। আসলে, মা ও শিশু একে অপরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত। দু’টি বিভাগ এক জায়গাতেই থাকা উচিত।”
চলতি বছরের ১৫ মার্চ প্রস্তাবিত নতুন ভবন প্রকল্পের শিলান্যাস হয়। শিলান্যাস করেন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। সেই ফলক এখনও জ্বলজ্বল করছে। কিন্তু, এই সময়ের মধ্যে একটি ইঁটও গাঁথা হয়নি। ভবন তৈরি তো দূরঅস্ত্। হাসপাতাল সূত্রে খবর, এখনও চিঠি দেওয়া-নেওয়ার কাজ চলছে। কেমন? নতুন ভবন তৈরির কাজটি করবে পূর্ত দফতরের মেদিনীপুর ডিভিশন। যেখানে নতুন ভবন তৈরি হবে, সেখানে পুরনো কয়েকটি ঘর রয়েছে। কাজ শুরুর আগে ঘরগুলো ভাঙা দরকার। এ ক্ষেত্রে রাজ্যের অনুমতি লাগে। পূর্ত দফতর ইতিমধ্যে অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে। হাসপাতাল মারফৎ ওই আবেদনপত্র গিয়েছে রাজ্যে। কিন্তু, এখনও পুরনো ঘর ভাঙার অনুমতি আসেনি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি থমকে নেই। প্রক্রিয়া চলছে। হাসপাতাল সুপার যুগল কর বলেন, “কাজ শুরুর প্রক্রিয়া চলছে। ভবন তৈরির কাজ শুরু হবে।” পূর্ত দফতরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার শ্যামল প্রতিহার বলেন, “যেখানে নতুন ভবন তৈরি হবে, সেখানে পুরনো কয়েকটি ঘর রয়েছে। কাজ শুরুর আগে ওই ঘরগুলো ভাঙা দরকার। ইতিমধ্যে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। অনুমতি পেলেই কাজ শুরু হবে।” মেদিনীপুর মেডিক্যালে দিনপিছু গড়ে দু’টি করে শিশুর মৃত্যু হয়। ‘সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট’ (এসএনসিইউ) চালুর পরও এই পরিসংখ্যানের তেমন হেরফের হয়নি। মৃত্যু ঘিরে চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগও ওঠে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মতে, অত্যধিক কম ওজন, ফুসফুসে সংক্রমণ ও শ্বাসকষ্টজনিত কারণেই শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। মেদিনীপুর মেডিক্যালের এক আধিকারিকের কথায়, “চেষ্টা করেও কম ওজনের শিশুকে অনেক সময় বাঁচানো যায় না। কয়েক দিন আগে ৫০০ গ্রাম ওজনের একটি শিশু জন্মায়। এত কম ওজনের শিশুকে বাঁচিয়ে রাখা সত্যিই অসম্ভব।” এই পরিস্থিতিতে নতুন ভবন তৈরি হলে আরও উন্নত পরিষেবা মিলবে। শিশু মৃত্যুর হারও কমতে পারে। এমন প্রকল্পের ক্ষেত্রেও গড়িমসি। সাত মাস আগে শিলান্যাস হয়েছে। অথচ, এখনও কাজই শুরু হল না। |