বেহাল ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের কারণে মুর্শিদাবাদ জেলায় বাড়ছে পথ দুর্ঘটনা। সেই সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। এমনটাই মত জেলা পুলিশ প্রশাসনের। সোমবার তিনটে পৃথক পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে চার জনের। জখম ১০ জন। এদিন বহরমপুর থানার মানকরার কাছে বাস ও ফতেপুরের কাছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে অ্যাম্বুলেন্স দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। সেই সঙ্গে নবগ্রাম থানা এলাকায় পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে এক বালিকার।
জেলা পুলিশ প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদ জেলায় বেলডাঙা, বহরমপুর, নবগ্রাম, সাগরদিঘি, রঘুনাথগঞ্জ, সুতি, সামশেরগঞ্জ ও ফরাক্কা থানা এলাকায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক বেহাল হয়ে পড়েছে। গত তিন মাসে ওই ৮টি থানা এলাকায় শতাধিক পথ দুর্ঘটনা ঘটেছে। মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৭৫ জনের। জখম হন প্রায় দুই শতাধিক। যদিও জাতীয় সড়ক সংস্কারের ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি কর্তৃপক্ষের কোনও হেলদোল নেই। ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটির মালদহ ডিভিশনের প্রকল্প অধিকর্তা মহম্মদ সাইফুল অবশ্য বলেন, “শহর এলাকার জাতীয় সড়কের উপরে বিভিন্ন ধরণের যানবাহনের চাপ থাকে বেশি। এতে রাস্তার ক্ষতিও বেশি হয়। আমি দ্রুত ওই রাস্তা সংস্কারের কথা বলেছি। কিন্তু বৃষ্টি হওয়ায় এখন জাতীয় সড়কের উপরে বিভিন্ন খানা-খন্দে জল দাঁড়িয়ে থাকায় পিচ ফেলে রাস্তা সংস্কারের কাজ করা যাচ্ছে না।” |
প্রাণ হাতে নিয়ে এভাবেই চলে যাতায়াত।—নিজস্ব চিত্র। |
উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের আমডাঙা থেকে ডালখোলা পর্যন্ত বিস্তৃত ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। তার মধ্যে নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের বুক চিরে প্রায় ২৫০ কিমি দীর্ঘ জাতীয় সড়ক চলে গিয়েছে। অভিযোগ, সংস্কারের অভাবে ওই আড়াইশো কিমি জাতীয় সড়ক পথের অধিকাংশই বেহাল হয়ে পড়েছে। এবড়ো-খেবড়ো ও খানা-খন্দে ভরে গিয়েছে। কোথাও পিচের চাদর উঠে গিয়ে বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতে জল দাঁড়িয়ে কোথাও কোথাও পুকুর তৈরি হয়ে যাওয়ায় জাতীয় সড়কে মরন ফাঁদে পরিণত হয়।
ওই আড়াইশো কিমির মধ্যে বড়জাগুলিয়ার পরে থেকে পলাশি-রেজিনগরের মধ্যবর্তী ১৪০ কিমি পথ রয়েছে নদিয়া জেলার মধ্যে। আর পলাশি-রেজিনগরের মধ্যবর্তী থেকে ফরাক্কা পর্যন্ত প্রায় ১১০ কিমি পথ মুর্শিদাবাদ জেলায় পড়ে। এদিকে ফরাক্কার দিক থেকে জাতীয় সড়কের ‘ফোর লেন’ তৈরির কাজ শুরুর পর থেকেই পুরনো জাতীয় সড়কে ‘সংস্কার’ করা ছাড়া অন্য সমস্ত কাজ বন্ধ রয়েছে। পিচ ফেলে কোনও রকমে খানা-খন্দ মেটানোর চেষ্টা হয়েছে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই তা উঠে গিয়ে ফের বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে জাতীয় সড়কে।
ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটির নদিয়া ডিভিশনের প্রকল্প অধিকর্তা জগন্নাথ সামন্তের দাবি, “৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের আমডাঙার কিছু অংশ এবং পলাশি বাসস্ট্যান্ড এলাকা ছাড়া নদিয়া ডিভিশন এলাকায় জাতীয় সড়কের অবস্থা খারাপ নয়। তবে পলাশি বাসস্ট্যান্ড এলাকা চত্বরে জল দাঁড়িয়ে রয়েছে। জল শুকোলে কাজ হবে।”
সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা মুর্শিদাবাদের রেজিনগর থেকে নবগ্রাম পর্যন্ত জাতীয় সড়কের। বিশেষ করে বহরমপুর শহরের বুক চিরে যে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক চলে গিয়েছে, তার অবস্থা অত্যন্ত বেহাল হয়ে পড়েছে। স্বাভাবিক গতিতে যানবাহন চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। বহরমপুর লাগোয়া চুঁয়াপুর থেকে পঞ্চাননতলা রেলগেট ও বহরমপুর গির্জার মোড় থেকে রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী সেতু পর্যন্ত জাতীয় সড়কের পথে কয়েকশো গর্ত তৈরি হয়েছে।
বাস মালিক সংগঠনের পক্ষে তপন অধিকারি বলেন, “জাতীয় সড়কের বেহাল দশার কারণে পরিবহণ শিল্প আর্থিক ক্ষতির মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। বাস মালিকদের কথা না ভাবলেও সাধারণের মানুষের স্বার্থেই অবিলম্বে জাতীয় সড়ক সংস্কার করা উচিত। এই মুহূর্তে জাতীয় সড়কের যা অবস্থা তাতে সব ক্ষতি সামাল দিয়েও আগামী দিন বাস পথে নামানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে।”
মুর্শিদাবাদ জেলা চেম্বার অফ কমার্সে সভাপতি অজয় সিংহ বলেন, “যাত্রী সাধারণের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের কাছেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দীর্ঘ দিন সংস্কার না হওয়ায় এবং বর্ষা মুখে রাস্তা সারাইয়ে উদ্যোগী হলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে, জাতীয় সড়কের বেহাল দশা কিছুতেই কাটছে না। সাধারণ মানুষ ভোগান্তির মুখে পড়ছেন।”
সড়ক নির্মাণকারী সংস্থার জনসংযোগ বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার সন্দীপ সাওয়ান্ত বলেন, “৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক নির্মাণে ৩টি অংশের ক্ষেত্রেই জমি পাওয়া নিয়ে সমস্যার কারণেই কাজ শেষ করা যায়নি। বহরমপুর থেকে ফরাক্কা, ফরাক্কা থেকে রায়গঞ্জ পর্যন্ত ১৫৩ কিলোমিটার সড়কপথের কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। বহরমপুর-ফরাক্কার কাজ খুব শীঘ্র শেষ হবে। কিন্তু জমি না মেলায় রায়গঞ্জ থেকে ডালখোলা ৫০ কিলোমিটার সড়ক পথের কাজ শুরুই করা যায়নি।” |