নামছে জমা জল
ঝড়-জলে পশ্চিমে ক্ষতি সাড়ে ৪০০ কোটি
সাম্প্রতিক দুর্যোগে পশ্চিম মেদিনীপুরে ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা। সোমবার জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট আসেনি। কৃষি, সেচ, পূর্ত-সহ বিভিন্ন দফতর থেকে আসা প্রাথমিক রিপোর্টের প্রেক্ষিতেই ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে কৃষি ক্ষেত্রে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২৮৫ কোটি, উদ্যান পালনে ১০৮ কোটি, ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৪১ কোটি টাকার। রবিবার রাত থেকে নতুন করে জেলার একাংশে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হচ্ছে। নতুন করে দুর্যোগের ফলে ঘাটাল, চন্দ্রকোনা-২, দাসপুর-১ ব্লকে ফের ১৬টি বাড়ি সম্পূর্ণ এবং ৫৩টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলা প্রশাসন মনে করছে, বৃষ্টি চললে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
সাত দিন কেটে গেলেও জল নামছে অত্যন্ত ধীরে। তমলুকে ৪১ নম্বর জাতীয়
সড়কের ধারে ত্রাণের খাবার নিতে যাওয়ার ছবিটি তুলেছেন পার্থপ্রতিম দাস।
এক নাগাড়ে বৃষ্টি এবং জলাধার থেকে প্রচুর পরিমান জল ছাড়ার ফলে গত সপ্তাহে পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। জেলার ২৯টি ব্লকের মধ্যে ২৬টি ব্লকেই কমবেশি দুর্যোগের প্রভাব পড়ে। এরমধ্যে জলমগ্ন হয়ে পড়ে ১১- ১২টি ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা। ক্ষতিগ্রস্ত ব্লকগুলোর মধ্যে রয়েছে গোপীবল্লভপুর- ১ এবং ২, সাঁকরাইল, নয়াগ্রাম, কেশিয়াড়ি, দাঁতন- ১, মোহনপুর। সুবর্ণরেখা নদী ছাপিয়ে এই সব ব্লকে জল ঢুকে। অন্যদিকে, কংসাবতী নদী ছাপিয়ে প্লাবিত হয় ঘাটাল, দাসপুর- ১, খড়্গপুর- ২, মেদিনীপুর সদর, কেশপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা। জলের তোড়ে বেশ কয়েকটি বাঁধ ভাঙে। ফলে, পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হতে শুরু করে। একের পর এক এলাকায় হু হু করে জল ঢুকে পড়ে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, দুর্যোগে এখনও পর্যন্ত জেলায় ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির মোকাবিলায় শুরুতে সবমিলিয়ে ১০৪টি ত্রাণ শিবির খুলতে হয়েছিল। সোমবার জেলায় ২টি ত্রাণ শিবির চালু ছিল। ২টি শিবিরই রয়েছে গোপীবল্লভপুর- ২ তে।
কেশপুরে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে সেচ কর্মাধ্যক্ষ।
পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) সুশান্ত চক্রবর্তী বলেন, “আগের থেকে পরিস্থিতির অনেকখানি উন্নতি হয়েছে। গত সপ্তাহের শুরুতে প্রচুর মানুষ ত্রাণ শিবিরে ছিলেন। তবে, জল নামতে শুরু করায় অনেকেই শিবির থেকে বাড়ি ফিরেছেন।” বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতিতে ব্লকস্তরেও সমস্ত দফতরের কাজকর্মের উপর নিয়মিত নজরদারি রাখার নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক গুলাম আলি আনসারি। জেলার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সোমবারও জেলাশাসকের সঙ্গে অতিরিক্ত জেলাশাসকের (সাধারণ) দফায় দফায় আলোচনা হয়। শুরুতে সবমিলিয়ে ৫১টি মেডিক্যাল ক্যাম্প খুলতে হয়েছিল। সোমবার জেলায় ২৮টি ক্যাম্প চালু ছিল। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত সব এলাকাতেই পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছনো হয়েছে। ত্রাণ বিলির কাজ এখনও চলছে। সোমবার পর্যন্ত ১২১ মেট্রিক টন চাল বিলি হয়েছে। ধুতি- শাড়ি- শিশুদের পোষাক মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার পোষাক বিলি হয়েছে। প্রায় ৫ হাজার বিশেষ ত্রাণের প্যাকেট বিলি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মতো যে প্যাকেটে ১০ কেজি চাল, ৫ কেজি আলু, ১ কেজি চিঁড়ে, ৫০০ গ্রাম গুড়, ৫০০ গ্রাম মুড়ি প্রভৃতি সামগ্রী ছিল। সবমিলিয়ে প্রায় ৪৮ হাজার ত্রিপল বিলি হয়েছে। দুর্গত এলাকায় ৩ লক্ষ ২০ হাজার জলের পাউচ বিলি হয়েছে।
জল নামতেই বাড়ির চালে ত্রিপল চাপা দিচ্ছেন গোবিন্দপুরের এক বাসিন্দা। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ
পাশাপাশি, ৭১ মেট্রিক টন গো- খাদ্য বিলি হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতিতে জেলায় ১২০টি পশু চিকিৎসা শিবিরও খুলতে হয়েছিল। যে সব শিবিরে প্রায় ৪২ হাজার গরুর চিকিৎসা করা হয়েছে। অন্যদিকে, কেশপুরের গোবিন্দপুরে বাঁধ ভেঙে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। বহু ঘরবাড়ি নদীগর্ভে চলে যায়। সোমবার ওই এলাকায় ত্রাণ বিলি করেন জেলা পরিষদের কৃষি- সেচ কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ। জেলা প্রশাসন মনে করছে, নতুন করে ভারী বৃষ্টি না হলে পরিস্থিতির আর অবনতি হবে না। জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) বলেন, “আগের থেকে পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। প্রায় সর্বত্রই জল নেমে গিয়েছে। এ বার পুনর্গঠনের কাজ শুরু হবে। ইতিমধ্যে কিছু সিদ্ধান্তও হয়েছে। রবিবার থেকে কিছু এলাকায় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতির উপরই নজর রাখা হয়েছে।”

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.