|
|
|
|
বর্ষার ঝোড়ো ইনিংস, জেলায় রেকর্ড বৃষ্টিপাত
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
মোহালির মাঠে শনিবার মহেন্দ্র সিংহ ধোনি যখন একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে রেকর্ড গড়ছেন, তার আগেই বৃষ্টির পরিমাণে রেকর্ড সৃষ্টি করে ফেলেছে পশ্চিম মেদিনীপুর। গত শুক্রবার পর্যন্ত চলতি বছরে জেলায় বৃষ্টি হয়েছে ২১১১ মিলিমিটার। গত দু’দশকে কোনও বছরই এত বৃষ্টি হয়নি। সব থেকে বেশি বৃষ্টি হয়েছিল ২০০৭ সালে, ২১০৬ মিলিমিটার। তা-ও জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর, পুরো বছর জুড়ে। ওই বছর জেলায় বন্যাও হয়। এ বার সবে অক্টোবর চলছে। তার আগেই পুরনো রেকর্ড ছাপিয়ে গিয়েছে বর্ষা! জেলাশাসক গুলাম আলি আনসারি বলেন, “এ বার প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। জেলায় বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমান যেখানে ১৫৩৮ মিলিমিটার, সেখানে ইতিমধ্যে দু’হাজার মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টি হয়েছে।”
বেশি বৃষ্টিপাতের ফলে মাটির নীচের জলস্তর কিছুটা উঠবে বলেই ধারণা। গত কয়েক বছর ধরে জলস্তর ক্রমশ নামছিল। ফলে, সামান্য গরমেও বহু এলাকায় জলকষ্ট দেখা দেয়। বিনপুর-২ (বেলপাহাড়ি) ব্লকে এমন এলাকাও রয়েছে, যেখানে ১৪০-১৫০ মিটার গভীরে পাইপ লাইন নিয়ে গেলেও সে ভাবে জলস্তর মেলে না। পাথুরে জমিতে জল প্রকল্প করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। জেলায় বৃষ্টির জল ধরে রাখতে ‘জল ধরো, জল ভরো’ প্রকল্পে পুকুর, চেক ড্যাম তৈরি হচ্ছে। ‘ইন্টিগ্রেটেড ওয়াটার শেড ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্টের’ কাজও শুরু হয়েছে। এর ফলে, উঁচু এলাকা থেকে গড়িয়ে আসা জল ধরে রাখা যাবে। বর্ষার পরে এই জল নানা কাজে ব্যবহার হতে পারে। সঙ্গে ভূমিক্ষয় রোধ হবে। অতিবৃষ্টি হওয়ায় আগামী দিনে এই সব প্রকল্পের সুফল মিলবে। |
বর্ষার সাতকাহন |
শেষ ৭ বছরে পশ্চিমে বৃষ্টিপাত |
সাল |
বৃষ্টির পরিমাণ |
• ২০০৭ |
২১০৬ |
• ২০০৮ |
১৭৮০ |
• ২০০৯ |
১২৭০ |
• ২০১০ |
১০০১ |
• ২০১১ |
১৭১৭ |
• ২০১২ |
১১১৩ |
• ২০১৩ |
২১১১ |
(১৮ অক্টোবর পর্যন্ত) বৃষ্টির পরিমাণ মিলিমিটারে * |
|
টানা বৃষ্টি এবং জলাধার থেকে প্রচুর জল ছাড়ায় গত সপ্তাহে পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়। জলাধারের ছাড়া জল সুবর্ণরেখা এবং কাঁসাই ছাপিয়ে ২৬টি ব্লকের ৫ হাজারেরও বেশি গ্রামের প্রায় ৯ লক্ষ মানুষকে জলবন্দি করে ফেলে। বাড়ি ভেঙে, চাষজমি জুবে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। বর্ষার ইনিংস যে এ বার ঝোড়ো হতে চলেছে, তা বছরের গোড়ায় বোঝা যায়নি। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৫৩৮ মিলিমিটার। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসের গড় ১৫ মিলিমিটার। ফেব্রুয়ারিতে ২৮ মিলিমিটার, মার্চে ৩৮, এপ্রিলে ৪৮, মে মাসে ১৩৮, জুনে ২৪২ মিলিমিটার। জুলাই মাসে গড়ে বৃষ্টি হয় ৩২৩ মিলিমিটার, অগস্টে ৩১২, সেপ্টেম্বরে ২৩৬, অক্টোবরে ১২৫, নভেম্বরে ২৮ ও ডিসেম্বরে ৫ মিলিমিটার। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এক ফোঁটাও বৃষ্টি হয়নি। ফেব্রুয়ারিতে মাত্র ৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। মার্চে ৩ মিলিমিটার। এপ্রিলে বৃষ্টি হয় ৬৩ মিলিমিটার। এরপরই বৃষ্টির মাত্রা বাড়ে। জুলাই মাসে একদিনেই ২৮৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়! জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, “শেষ পর্যন্ত বৃষ্টির পরিমাণ কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, সেটাই দেখার।” |
|
|
|
|
|