আকাশছোঁয়া প্রত্যাশার মধ্যে দেশ-বিদেশ জুড়ে যে হাজার হাজার প্রার্থনার প্রদীপ জ্বালানো হচ্ছে, তাতে ট্রেভর মর্গ্যানও সম্মিলিত হলেন! এএফসি কাপে ইস্টবেঙ্গলের সাফল্য কামনা করে পারথ থেকেই শুভেচ্ছা বার্তা ব্রিটিশ কোচের, “ইস্টবেঙ্গলে এখন যে ফুটবলাররা খেলছে, তাদের বেশি ভাগকেই আমি কোচিং করিয়েছি। এ রকম কঠিন পরিস্থিতিতে ওরা আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। আমার বিশ্বাস, ইস্টবেঙ্গল ফাইনালে নিশ্চয় জায়গা পাকা করে নেবে।”
ইস্টবেঙ্গলের খেলা যুবভারতীতে বসে দেখতে পারবেন না বলেও আফসোস মর্গ্যানের। তবে তাঁর উত্তরসূরি মার্কোস ফালোপা কেমন কাজ করছেন, সেটা টিভিতেই মেপে নিতে চান লাল-হলুদের প্রাক্তন কোচ। পারথ থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে তিনি বললেন, “ম্যাচটা দেখার ইচ্ছে আছে। কলকাতায় থাকলে স্টেডিয়ামে বসেই দেখতাম।” মর্গ্যান অবশ্য কোচ কিংবা টিম নিয়ে কোনও মন্তব্য করলেন না। |
অসংখ্য ফুটবল-প্রেমীদের সঙ্গে ‘সাত সমুদ্র তেরো নদী’ পার করে মর্গ্যানের আশীর্বাদ কুয়েত এসসি ম্যাচে কাজে আসে কি না, সে তো সময় বলবে। তবে মেহতাবরা সবচেয়ে বেশি উদ্দীপ্ত প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘অমৃত বাণী’ শুনে। “প্রতিপক্ষ যে-ই হোক না কেন, এক ইঞ্চি জমি ছাড়ব না। ক্লাব র্যাঙ্কিংয়ের বিচারে কুয়েত আমাদের থেকে অনেক এগিয়ে বটে। তবে মাঠে র্যাঙ্কিং নয়, মাথা আর পা কথা বলে।” পরিসংখ্যানের রাস্তায় হাঁটলে, ফাইনালে যেতে হলে ইস্টবেঙ্গলকে অন্তত দু’গোলের ব্যবধানে জিততে হবে। কাজটা কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। বিশ্বাসটা আরও যেন দৃঢ হয়ে গেল, সোমবার সকালে ওপারা-চিডিদের শরীরীভাষা দেখে!
দাঁতের সমস্যার জন্য এ দিনের প্র্যাকটিসে জেমস মোগাকে বিশ্রাম দিয়েছিলেন ফালোপা। তবে বল প্র্যাকটিস না করলেও, সুয়োকার সঙ্গেই ফিটনেস ট্রেনিং ও জিমে সময় কাটালেন সুদানের জাতীয় দলের ফুটবলার। পরে ক্লাব তাঁবু ছাড়ার আগে বলে গেলেন, “তিন বিদেশি নিয়ে খেলব বলে আমাদের দুর্বল ভাবলে কিন্তু বড় ভুল করবে কুয়েত। সুয়োকার কাজটা আমরা সবাই মিলে ভাগ করে নিয়েছি।” মোগা কথার ফুলঝুরি ছোটালেও চিডি-ওপারা মাঠেই জবাব দিতে চান, “যা বলার ম্যাচের পরেই বলব। যে করেই হোক ইস্টবেঙ্গলকে ফাইনালে তুলতে হবে।”
কথায় কথায় ‘নো প্রবলেমো’ বলা লাল-হলুদের ব্রাজিলিয়ান কোচকে অবশ্য এ দিন একটু অন্য মেজাজেই পাওয়া গেল। ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন কোচ ফিলিপ ডি’রাইডারের ঢঙে চোখ টিপে টিপে রসিকতা করতে বেশি পছন্দ করেন ফালোপা। কিন্তু এ দিন হাসি-ঠাট্টার মধ্যে চাপা আতঙ্কের ছায়া যেন ভেসে উঠল তাঁর চোখে-মুখে। সদ্য-সমর্থকদের প্রবল চাহিদার ভারে হাঁপিয়ে উঠছেন না তো? ম্যাচটা যতটা গুরুত্বপূর্ণ ইস্টবেঙ্গলের কাছে, ততটাই জরুরি ভারতে ফালোপার কোচিং কেরিয়ারের জন্য। হারলে লাল-হলুদ কর্তারা আষ্ঠেপৃষ্ঠে চেপে ধরবেন। জিতলে ট্রেভর মর্গ্যানের ছায়া থেকে চিরকালের মুক্তি। ফালোপা বলছিলেন, “ডেম্পো ম্যাচের পরে ফুটবলারদের ফোকাস নষ্ট হতে দিইনি। আন্তর্জাতিক ম্যাচে সাফল্য পেতে হলে শারীরিক বিশ্রামের সঙ্গে মানসিক বিশ্রামটাও প্রয়োজন। তাই প্রত্যেক ফুটবলারকে বেশি করে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে বলেছি। আমি খুব চাপের মধ্যে থাকলে পরিবারের কাছ থেকেই শক্তি সঞ্চয় করি।” |