এখনও নামকরণ হয়নি। গত ১৫ অক্টোবর শামুকতলার রহিমাবাদ চা বাগানের জলাধার থেকে উদ্ধার করা হয়েছে তাকে। মা হারা মাস দু’য়েকের হস্তিশাবকটির ঠিকানা এখন জলদাপাড়া জঙ্গলের মালঙ্গি বিটে। এখানেই সে চম্পাকলির কন্যা আম্রপালির দুধ খেয়ে বড় হচ্ছে। আম্রপালিরও দু’ মাসের একটি শাবক রয়েছে। নিজের সন্তানের সঙ্গে উদ্ধার হওয়া ওই শাবকটিকেও দুধ খাওয়াতে আম্রপালি আপত্তি নেই।
এক সঙ্গে দুই শাবককে দুধ খাইয়ে বড় করছে মা আম্রপালি। কখনও শাবকদের শুঁড় দিয়ে আদর করছে। দুই শাবক পেয়ে হাবভাবে সে যেন গবির্ত। আম্রপালি যখন জঙ্গলে যায়, তখন বিট অফিসের নীচে ঘেরা দেওয়া জায়গায় শাবক দুটি দুই বোনের মতো খেলায় মেতে ওঠে। শুঁড় উচিয়ে একে অপরের দিকে এগিয়ে যায়। চলতে থাকে খুনসুটি, নানা খেলা। তাতেই বেলা গড়িয়ে যায়। তখন অধীর আগ্রহে আম্রপালির ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে দুই বোন। মা আম্রপালির জঙ্গল থেকে ফিরতে দেরি হলে শাবকরা অর্ধৈয্য হয়ে পড়ে। শুঁড় তুলে ডাকতে থাকে। তখন শাবকদের ল্যাকটোজেন খাইয়ে শান্ত রাখেন দেখভালের দায়িত্বে থাকা মাহুত বিকাশ খাড়িয়া বা অখিল নারজারিরা। আম্রপালি না ফেরা পর্যন্ত তাতেও স্বস্তি নেই। জঙ্গলের দিকে তাকিয়ে কখনও ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে শাবকরা। কখনও অধৈর্য হয়ে ঘোরাফোরা শুরু করে বিট অফিস চত্বরে। আম্রপালি ফিরলে দুই শাবক তার পায়ের কাছে গা ঘেষে দাঁড়ালে তবে শান্তি। |
দিদির সঙ্গে। জলদাপাড়া জঙ্গলের মালঙ্গি বিটেতোলা নিজস্ব চিত্র। |
গত চার পাঁচ বছর থেকে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে দল ছুট অসহায় হস্তিশাবকদের বড় করে তোলার কাজ করছে বন দফতর। তার মধ্যে মালঙ্গি বিট ওই কাজের আদর্শ জায়গা হয়ে উঠেছে। ওই বিটের চম্পাকলি, সুন্দরমণি, আম্রপালিরা আদর্শ মা হয়ে উঠেছে দলছুট শাবকদের কাছেও। উদ্ধার হওয়া হস্তিশাবক বালাসুন্দর, তোর্ষা, তিথিরা চম্পাকলি ও সুন্দরমণির দুধ খেয়ে বড় হয়েছে। এখন কুনকি হওয়ার প্রশিক্ষণ নিতে জলদাপাড়ার বিভিন্ন বিটে রাখা হয়েছে তাদের।
রহিমাবাদ চা বাগান থেকে উদ্ধার হওয়া শাবকের বয়স ২ মাস আর আম্রপালির অপর শাবক উর্মির বয়স দু’ বছর। তাই উর্মিকে এখনও মালঙ্গি বিটে রাখা হয়েছে। তবে, গত জুন মাসে বাঁকুড়া থেকে মালঙ্গি বিটে আনা অসুস্থ শাবক কে অনেক চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারেননি বনকর্মীরা। তবে রহিমাবাদ চা বাগানের শাবকটিকে বড় করতে পারা নিয়ে আশাবাদী বন দফতরের আধিকারিকরাও। জলদাপাড়া পূর্ব রেঞ্জের আধিকারিক সুরঞ্জন সরকার বলেন, “শাবকটি সুস্থ রয়েছে। আম্রপালিও তাকে মেনে নিয়েছে। তাই সমস্যা হওয়ার কথা হয়। আম্রপালি না থাকলে ল্যাকটোজেন খাওয়ানো হয়। বন দফতরের পশু চিকিৎসকরা তাকে প্রয়োজন মতো পরীক্ষা করছে।”
|