সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে জানলার দিকে তাকিয়ে চমকে গিয়েছিলেন উ কাই। এত তাড়াতাড়ি তুষারপাত শুরু হয়ে গিয়েছে? কিন্তু আবহাওয়া দফতর তো কোনও সতর্ক বার্তা জানায়নি? ভাল করে বাইরে তাকিয়ে মাথায় হাত কাইয়ের। কোথায় তুষায়পাত! এ তো ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছে চার পাশ। এতটাই ঘন সেই ধোঁয়ার আস্তরণ যে ৫০ মিটার দূরের কোনও কিছুই দেখা যাচ্ছে না। শুধু উ কাই-ই নন, সোমবার সকালে এই চিত্র দেখে হতবাক চিনের উত্তর-পূর্বের হেলিয়ংজিয়াং প্রদেশের হারবিন শহরের বাসিন্দারা। |
ধোঁয়া থেকে বাঁচতে। উত্তর চিনের হারবিন শহরে সোমবার এপি-র ছবি। |
ধোঁয়ার জেরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে হারবিনের তাইপিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। রাত পর্যন্ত অন্তত ৪০টা বিমান বাতিল হয়েছে। শহরের বেশ কয়েকটা এলাকায় সরকারি বাস পরিষেবা বন্ধ। স্থানীয় প্রশাসনের তরফে শিশু-বৃদ্ধদের ঘরের ভিতরেই থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বন্ধ হয়ে গিয়েছে ছোটদের স্কুল। আমেরিকার জ্যাজ গায়ক প্যাটি অস্টিনের বেজিংয়ে অনুষ্ঠান করার কথা ছিল। কিন্তু তিনি চিনে পৌঁছনোর পরেই শ্বাসকষ্টের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হন। অস্টিনের ম্যানেজার জানিয়েছেন, হাসপাতাল থেকে হোটেলে ফিরে এসেছেন অস্টিন। সম্ভবত ধোঁয়ার কারণেই তিনি শ্বাসকষ্টের সমস্যায় পড়েছিলেন বলেই মনে করা হচ্ছে। এর জেরে বাতিল হয়েছে অস্টিনের কর্মসূচি।
চিনের পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, গত দু’দিনে হারবিনের বাতাসে ধূলি কণার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রতি ঘনমিটারে ৬০০ মাইক্রোগ্রামের মতো। কোথাও কোথাও আবার ১০০০ মাইক্রোগ্রামের তথ্যও পাওয়া গিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র নির্দেশিকা অনুযায়ী, বাতাসে ধূলি কণার পরিমাণ প্রতি ঘনমিটারে ২৫ মাইক্রোগ্রামের থেকে বেশি হওয়া উচিত নয়। অর্থাৎ স্বাভাবিকের থেকে প্রায় ৪০ গুণ বেশি ধূলিকণা মিশে রয়েছে হারবিনের বাতাসে। শুধু হারবিনই নয়, প্রতিবেশী জিলিন, লিয়াওনিংয়ের মতো শহরগুলোও একই সমস্যায় আক্রান্ত।
দেশের সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোতে এই নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন দেশের মানুষ। সেখানকার মানুষের মুখে মুখে ফিরছে দেশের নেতাদের কথা। কী ভাবে তাঁরা দূষণের হাত থেকে রক্ষা পেতে লক্ষ লক্ষ মুদ্রা ব্যয়ে ঘরে বসিয়েছেন অত্যাধুনিক বায়ু পরিশোধনের যন্ত্র। অনেক নেতা আবার জৈব খামারে চাষ করা সব্জি ছাড়া খান না।
প্রতি বছরই শীতের সময়ে চিনে এই ধূলিকণা মেশানো কুয়াশা (যাকে ধোঁয়াশাও বলা হয়)-র সমস্যা দেখা যায়। এর জন্য গত মাসেই চিনের ক্যাবিনেট বায়ুদূষণ কমানোর জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেয়। বলা হয়েছিল শীতের সময় যতটা সম্ভব বড়সড় নির্মাণ কাজ কমাতে হবে। ঘর গরম রাখার জন্য তাপবিদ্যুতের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। খোলা জায়গায় বারবিকিউ রান্না বা বাজি পোড়ানো বন্ধ করতে হবে। সাধারণত প্রতি বছর শীত কালে একটি নির্দিষ্ট দিন থেকে শহরের প্রশাসন ঘর গরম রাখতে বাড়ি বাড়ি বিশেষ বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে। এর জন্য প্রচুর কয়লা পোড়ে। অভিযোগ, হারবিনে গত কালই ছিল সেই বিশেষ দিন। আর তার পরের দিন থেকেই এই বায়ুদূষণের সমস্যা শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি সামলাতে তড়িঘড়ি বৈঠক ডেকেছে স্থানীয় প্রশাসন।
উ কাই জানান, শহরের বেশির ভাগ মানুষই খুব দরকার ছাড়া ঘরের বাইরে বেরোচ্ছেন না। কাইয়ের স্বামীর মতো শহরের সবার মুখেই মাস্ক। রাস্তায় গাড়িঘোড়া চলছে না বললেই চলে। অসুস্থদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে সমস্যায় বাড়ির লোকেরা। দু’হাত দূরের জিনিসও প্রায় দেখা যাচ্ছে না। প্রায় পঙ্গু হারবিন।
কয়েক দিন আগেই হু-র তরফে ঘোষণা করা হয়েছিল, ভারত-সহ তৃতীয় বিশ্বের বেশ কিছু দেশে বায়ুদূষণজনিত ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। ধোঁয়ার জেরে বাড়ছে শ্বাসকষ্টে আক্রান্তের সংখ্যা। পরিস্থিতি সামলাতে অবিলম্বে দূষণ কমানোর পরামর্শ দিয়েছে হু। না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে বলে আশঙ্কা সংস্থার। |