পুজো কাটতে না কাটতেই ফের বানভাসি হাওড়া। বর্ষার মরসুমে এই নিয়ে তৃতীয় বার।
রবিবারের রাতের বাঁধভাঙা বৃষ্টিতে এ বারেও জল জমে যায় হাওড়া পুর-এলাকার ৫০টি ওয়ার্ডের মধ্যে কমপক্ষে ২০টিতে। নর্দমা উপচে রাস্তার জমা পাঁকজল ঢুকে পড়ে কলকারখানা, ঘরবাড়ি, দোকানের মধ্যে। বহু এলাকায় সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সেই জল নামেনি। ফলে দিনভর চূড়ান্ত নাজেহাল হন বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। পুরসভার পক্ষ থেকে স্বীকার করা হয়েছে, পাম্প চালিয়েও এখনও অনেক ওয়ার্ড থেকে জল নামানো যায়নি। জল না নামার কারণ হিসেবে মেয়র মমতা জায়সবালের যুক্তি হল, নদী-নালা, খালবিল সব জলে ভরে রয়েছে। পাম্প করে জল ফেলার জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। তাই জল নামানো যাচ্ছে না বহু এলাকা থেকে।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার রাতের টানা বৃষ্টিতে উত্তর হাওড়া, মধ্য হাওড়া-সহ পুরসভার সংযুক্ত এলাকার রাস্তাঘাটে প্রায় এক হাঁটু জল জমে যায়। জল ঢুকে যায় বাড়িঘরে, উঠোনে। সব থেকে করুণ অবস্থা ছিল পুরসভার সংযুক্ত এলাকার ৪৮, ৩৯ এবং ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের ভুতবাগান, পেয়ারাবাগান, বালিটিকুরি এলাকায়। অধিকাংশ বাড়িতেই জল ঢোকে। এ দিন দুপুর পর্যন্ত সেই জল নামার লক্ষণ দেখা যায়নি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দিনভর দেখা মেলেনি পুরসভার সাফাইকর্মী ও পুর-অফিসারদের। |
জল-যন্ত্রণা। সোমবার, একটি বাড়ির রান্নাঘরে। —নিজস্ব চিত্র। |
স্থানীয় বাসিন্দা বাবুল ঘোষ বলেন, “রাতভর জমা জলে কাটানোর পরে সকালেও দেখি বাড়ির সামনে হাঁটুজল। পুরসভার কোনও কর্মীকে চোখে পড়েনি। একটা পাম্পও চালানো হয়নি।”
একই অবস্থা উত্তর হাওড়া ও মধ্য হাওড়ার, ২, ৩, ৬, ৭, ৮, ১০, ১৫, ১৯, ২০ এবং ২১ নম্বর ওয়ার্ডের। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, মধ্য হাওড়ার টিকিয়াপাড়া, বেলিলিয়াস রোড ও বেলিলিয়াস লেন এ দিনও ছিল জলমগ্ন। জল নামেনি উত্তর হাওড়ার বেলগাছিয়া, বেনারস রোড, সালকিয়া, নস্করপাড়া রোড, ব্যানার্জিবাগান, ছোটেলাল মিত্র লেন, ঘোষপাড়া, কৈবর্ত্য পাড়া, মৌনাক পোড়েল লেন-সহ আশপাশের বহু এলাকায়। ওই সব এলাকার অলিগলি ভেসে গিয়েছে নর্দমার কালো জলে।
টিকিয়াপাড়ার বাসিন্দা অনিমা খাতুন বলেন, “এখানে নর্দমার জল আর রাস্তার জমা জল এক হয়ে গেছে। সেই পেরিয়েই স্কুল, কলেজ অফিস যেতে হচ্ছে। জানি না কবে এই সমস্যা মিটবে!”
মেয়র জানান, জমা জল সরাতে পুরসভা, কেএমডিএ, কেএমডব্লিইএসএ-র সবক’টি পাম্প চালানো হচ্ছে। কিন্তু জল ফেলার জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, “গঙ্গায় জোয়ার চলায় জলস্তর এখন অনেক উঁচুতে বইছে। ফলে সেখানে জল ফেলে লাভ হবে না। ভাটা হলে সমস্যা কিছুটা মিটবে বলে মনে হয়।” |