স্বামী অসুস্থ। সেই কারণে মূলত ওষুধ রাখার জন্য নামী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে ফ্রিজ কিনেছিলেন হুগলির ডানকুনির গৃহবধূ দীপা সাহা। দিন কয়েক পরেই তিনি দেখতে পান, ফ্রিজের কিছুটা অংশ ফাটা। মাস দু’য়েকের মধ্যে ফ্রিজটাই বিকল হয়ে যায়। অনেক আবেদন-নিবেদনেও তা বদলে দেয়নি ওই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং ফ্রিজ প্রস্তুতকারক সংস্থা। কোনও উপায় না দেখে জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হন দীপাদেবী। আদালতের নির্দেশে কয়েক দিন আগে জরিমানা-সহ ফ্রিজের দাম ফেরত পেয়েছেন তিনি।
স্বামী অসীমবাবু এবং দুই সন্তানকে নিয়ে ডানকুনির সরকারি আবাসনে থাকেন দীপাদেবী। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে উত্তরপাড়া খেয়াঘাট এলাকায় জিটি রোডের ধারের একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে তাঁরা ২৪০ লিটারের ডবল ডোরের ফ্রিজ কেনেন ১৭ হাজার ৬০০ টাকায়। দু’দিন পরে দীপাদেবী লক্ষ্য করেন, ডিপ ফ্রিজের জায়গায় অনেকটা অংশ ফাটা। বিষয়টি তিনি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে ফোনে জানান। অভিযোগ, কয়েক দফায় ওই প্রতিষ্ঠান এবং ফ্রিজ প্রস্তুকারক সংস্থার তরফে লোক পাঠানো হলেও ফাটা অংশ সারানো হয়নি। এপ্রিল মাসে ফ্রিজটি খারাপ হয়। ফের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেন দীপাদেবী। ফের লোক পাঠানো হয়। অভিযোগ, নিখরচায় ফ্রিজ সারানোর কথা থাকলেও টাকা চাওয়া হয়।
দীপাদেবী বলেন, “স্বামীর সুগার। নিয়মিত ইনসুলিন নিতে হয়। মূলত ওষুধ রাখতেই জরুরি ভিত্তিতে ফ্রিজটা কিনেছিলাম। পরে স্বামীর কিডনির সংক্রমণেরও ওষুধ রাখার প্রয়োজন হয়। ফ্রিজটি খারাপ হওয়ায় খুব সমস্যায় পড়ি। বার বার সে কথা দু’পক্ষকেই জানাই। শেষে ফ্রিজ প্রস্তুতকারক সংস্থা খারাপ ফ্রিজ বদলে একটি ভাল অবস্থায় থাকা পুরনো ফ্রিজ দেওয়ার কথা বললে রাজি হয়ে যাই। কিন্তু সে কথা রাখা হয়নি।”
গত বছরের অগস্ট মাসে জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হন দীপাদেবীর স্বামী অসীমবাবু। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখে ওই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং ফ্রিজ প্রস্তুতকারক সংস্থাকে ভর্ৎসনা করে আদালত। গত মার্চ মাসে আদালতের প্রধান বিচারক নারায়ণচন্দ্র চক্রবর্তী মামলার রায়ে ওই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং ফ্রিজ প্রস্তুতকারক সংস্থাকে নির্দেশ দেন, হয় নতুন ফ্রিজ বা কেনা ফ্রিজের পুরো দাম ফেরত দিতে হবে। পাশাপাশি, দম্পতিকে সঠিক পরিষেবা না দেওয়া এবং সেই কারণে মানসিক হয়রানির জন্য জরিমানারও নির্দেশ দেন। এক মাসের মধ্যে আদালত ওই টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিলেও সংস্থাদু’টি তা মানছিল না বলে অভিযোগ। সেই কারণে গত অগস্ট মাসে ফের আদালতকে বিষয়টি জানায় ওই পরিবার। আদালত দ্রুত ওই নির্দেশ মানতে বলে সংশ্লিষ্ট দু’পক্ষকে।
দিন কয়েক আগে আদালতে হাজির হয়ে জরিমানা-সহ মোট ৩৩ হাজার ৪০০ টাকার চেক দীপাদেবীর হাতে তুলে দেন দু’পক্ষের লোকজন। টাকা ফেরত পেয়ে দীপাদেবী খুশি। তিনি বলেন, “ওরা আমাদের মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত করে ছেড়েছিল। আদালতের ভূমিকায় স্বস্তি পেয়েছি।” |