ডিভিসি-র ছাড়া জলে খানাকুলের দু’টি ব্লকের মাছ চাষের দফারফা তো হয়েছেই, তার সঙ্গে বৃষ্টিতে আরামবাগ মহকুমার অন্যত্রও নানা এলাকার পুকুর ভেসে গিয়েছে। সব মিলিয়ে সাম্প্রতিক দুর্যোগে আরামবাগ মহকুমায় মাছ চাষে ক্ষতির পরিমাণ ৬ কোটি ১৬ লক্ষ টাকারও বেশি বলে জানিয়েছে জেলা মৎস্য দফতর।
জেলার সহ-মৎস্য অধিকর্তা অভিজিৎ সাহা জানিয়েছেন, আরামবাগের চারটি ব্লকের ৮০৯টি পুকুর ভেসে যাওয়ায় প্রায় ৫৩৫ টন মাছ বেরিয়ে গিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৮১২টি মৎস্যজীবী পরিবার। পরবর্তী পুনর্গঠন প্রক্রিয়া হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের যাতে মাছের চারা, মাছের খাবার, পুকুর পরিশোধনের জন্য চুন, জাল, হাঁড়ি ইত্যাদি উপকরণ দেওয়া যায় রাজ্য মৎস্য দফতরে সে ব্যাপারে সুপারিশ করা হয়েছে।
মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্লাবনের জেরে খানাকুল-১ ব্লকের কিশোরপুর-১, খানাকুল-১, অরুন্ডা, ঘোষপুর, ঠাকুরানিচক এবং পোল-১ ও ২ এই সাতটি পঞ্চায়েত এলাকার অধিকাংশ পুকুরই (সব মিলিয়ে ১৫৪ হেক্টর জমি) ডুবে যাওয়ায় মাছ ভেসে গিয়েছে। অন্য দিকে, খানাকুল-২ ব্লকের ১১টি পঞ্চায়েত এলাকা ৫৩টি মৌজার মধ্যে ৪০টি মৌজাই জলমগ্ন হয়। ১১০ হেক্টর পুকুর ডুবে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় ১৪০০ চাষি। টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা।
এ ছাড়া, আরামবাগ ব্লকের ১৫টি পঞ্চায়েতের মধ্যে সাতটি মলয়পুর-১ ও ২, হরিণখোলা-১ ও ২, সালেপুর-১ ও ২ এবং আরান্ডি-২ এলাকায় ৭৫ হেক্টর পুকুর ডুবে যাওয়া প্রায় ১৪০০ কুইন্টাল মাছ ভেসে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হন ১৪২ জন চাষি। পুড়শুড়ায় অবশ্য ক্ষতির পরিমাণ কম। সেখানে আটটি পঞ্চায়েতের মধ্যে চিলাডাঙ্গি, শ্যামপুর এবং শ্রীরামপুর পঞ্চায়েত এলাকার চার হেক্টরের মতো পুকুর ভেসে গিয়েছে। ৪৩ জন চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। গোঘাটের দু’টি ব্লকে অবশ্য ক্ষয়ক্ষতির আঁচ পড়েনি।
খানাকুলে অবশ্য প্রায় প্রতি বছরই প্লাবন বা বন্যায় পুকুর ভেসে যাওয়ায় মাছ চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবু, মাছ চাষকে কেন্দ্র করেই জীবিকা নির্বাহ করে প্রায় ২০ হাজার পরিবার। তাদের মধ্যে অধিকাংশই পুকুর লিজ নিয়ে, ঋণ করে মাছ চাষ করে। খানাকুল-২ ব্লকের মাড়োখানা গ্রামের মাছ চাষি দুখীরাম বায়েন বলেন, “পুকুরে জল ঢুকে মাছ চাষের ক্ষতি তো ফি-বছরই হয়। আমরা ক্রমশ উৎসাহ হারিয়ে ফেলছি।” খানাকুল-১ ব্লকের কিশোরপুরের মাছ-চাষি মাধব মান্না বলেন, “বন্যার পরে মৎস্য দফতর শুধু কিছু মিনিকিট বিতরণ করে। আমরা চাই, বন্যাকে কেন্দ্র করে মাছচাষিদের জন্য সরকার বিশেষ পরিকল্পনা করুক। যেমন, পুকুর সংস্কার, বন্যার ঠিক আগে ন্যায্য দামে মাছ কিনে নেওয়া বা অনুদান-সহ ঋণের ব্যবস্থা করা।”
জেলা সহ-মৎস্য অধিকর্তা বলেন, “সরকারি সব স্কিমই আছে। ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে সব পুকুরই সংস্কার হচ্ছে। এ ছাড়াও পুকুর সংস্কারের অনেক স্কিম আছে। ২৫ শতাংশ অনুদানে ঋণেরও ব্যবস্থা আছে মাছ চাষিদের জন্য।” |