সম্পাদকীয় ২...
গণিতের অভিমান
ম্যাথমেটিশিয়ান’স অ্যাপোলজি’ গ্রন্থে গণিতজ্ঞ গডফ্রে হ্যারল্ড হার্ডি ঘোষণা করিয়াছিলেন, ‘আমি কদাচ কাজে লাগিবার মতো কোনও গণিতচর্চা করি নাই। আমার কোনও আবিষ্কারে প্রত্যক্ষে বা পরোক্ষে জগতের ভাল বা মন্দ হয় নাই বা হইবে না।’ ঘোষণাটি শুনিলে বিনয়বচন বলিয়া ভ্রম হওয়া স্বাভাবিক, তবে গ্রন্থখানির পাঠকমাত্র জানেন, ওই মন্তব্যে হার্ডি যাহা ব্যক্ত করিয়াছিলেন, তাহা বিষাদ নহে, বরং অহং। বৃদ্ধ বয়সে হার্ডি গ্রন্থটি রচনায় প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন শুধুই গণিতের মাহাত্ম্য প্রচারে। এবং, হার্ডির দৃষ্টিতে, সে মাহাত্ম্য নিহিত ছিল গণিতের বিমূর্ত চরিত্রে। তিনি জানাইয়াছিলেন, গণিত সৃষ্টিমূলক শিল্প বলিয়াই তিনি ওই বিষয়ে গবেষণায় আগ্রহী। হার্ডির মতে, গণিতজ্ঞের কর্মের উপাদান রং বা শব্দ নহে, চিন্তা। ফলে গণিতজ্ঞের সৃষ্টি শিল্পী বা কবির অবদানের অপেক্ষা বেশি স্থায়ী। এই যুক্তিবলে হার্ডির দাবি: গ্রিক নাট্যকার ইসকাইলাস বিস্মৃত হইলেও আর্কিমিদিস অমর রহিবেন, কেননা ভাষা চিরস্থায়ী নহে, গণিত অবিনশ্বর। এ হেন ধারণায় আস্থাবান হার্ডির মতে, লেনার্ড অয়লার, কার্ল ফ্রেডরিক গাউস কিংবা শ্রীনিবাস রামানুজনের মতো পণ্ডিতেরা যে গণিতের চর্চা করেন, তাহা সেতু বানাইবার উপযোগী গণিতের ন্যায় নিম্নমানের নহে।
গত শতাব্দীর মধ্যভাগে প্রয়াত হার্ডির কথা মনে পড়িল এ যুগের বিখ্যাত গণিতজ্ঞ অ্যানড্রু ওয়াইল্সের সাম্প্রতিক মন্তব্যে। ওয়াইল্স ১৯৯৫ সালে সংবাদের শিরোনামে আসেন বিশুদ্ধ গণিতে ৩৫০ বছরের পুরানো একটি ধাঁধার সমাধান করিয়া। তাঁহার অর্জিত সাফল্যে বাজারে চালডালের মূল্য কিছুমাত্র কমে নাই, যদিও বিশ্বব্যাপী পণ্ডিতেরা কৃতিত্বটিতে ধন্য ধন্য করিয়াছেন। সেই অর্থে, ওয়াইল্স হার্ডির যোগ্য উত্তরসূরি। তিনি দুঃখ প্রকাশ করিয়াছেন এই কারণে যে, এখন শেয়ার বাজারে টাকা কামাইতে, সাইবার দুনিয়ায় কেলেঙ্কারি ঘটাইতে, এমনকী সন্ত্রাসবাদ কায়েম করিতেও গণিত ব্যবহৃত হইতেছে। এই পরিস্থিতি চরম নিন্দনীয়। দুঃখভরে ওয়াইল্স ইঙ্গিত দিয়াছেন, এই শতাব্দীতে গণিত যেন গত শতাব্দীতে পদার্থবিদ্যার ন্যায় রাহুগ্রস্ত। গত শতাব্দীতে পদার্থবিদরা প্রমাণ করিয়াছিলেন, প্রয়োজনে তাঁহারা ন্যায়নীতি বিসর্জন দিতে প্রস্তুত। গণিত তখনও জীবনের রূঢ় বাস্তব হইতে দূরবর্তী ছিল, এখন সে পঙ্কের নিকটবর্তী। হার্ডির গর্ব বা ওয়াইল্সের খেদ বুঝিতে পারা যায়। কিন্তু এ সত্য অগ্রাহ্য করা কঠিন যে, গবেষণা বিশুদ্ধে আর ফলিতে, ভেদ রাখে না। সংখ্যাতত্ত্বের গবেষক হিসাবে হার্ডি গর্ব করিয়াছিলেন এই আস্থায় যে, সংখ্যার চর্চা কখনও কাহারও কোনও কাজে লাগিবে না। সে বিশ্বাস ভ্রান্তিবিলাস, সংখ্যাতত্ত্বের প্রয়োগ এখন ই-মেল বা ই-ব্যাঙ্কিং, সর্বত্র বিস্তৃত। পাটিগণিতের প্রাথমিক তত্ত্বের প্রয়োগে ইহা সম্ভব হইয়াছে। পদার্থবিদ্যায়ও তেমনটাই ঘটিয়াছিল। ১৯৫৪ সালে পরমাণু বোমার জনক রবার্ট ওপেনহাইমার ঘোষণা করিয়াছিলেন, মারণাস্ত্রটি তাঁহাদের নিকট শুধু একটি চ্যালেঞ্জ হিসাবেই গণ্য হইয়াছিল। এবং গবেষক হিসাবে সেই চ্যালেঞ্জ লোভনীয় মনে হইয়াছিল। মারণাস্ত্র কী কাজে লাগিবে, শুরুতে গবেষকেরা তাহা ভাবেন নাই। পরমাণু বোমার কদর্য প্রয়োগে অনুতপ্ত ওপেনহাইমার যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যানকে জানান যে, পদার্থবিজ্ঞানীদের হাত রক্তমাখা, তখন ট্রুম্যান নিজের রুমাল তাঁহাকে দিয়াছিলেন, রক্ত মুছিয়া লইতে। পদার্থবিদ্যা সত্য, সত্য রক্ত বা রুমালও। সবই মানবজীবনের অঙ্গ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.