সব্জিতে রোগ এড়াতে সতর্কতার নিদান
টানা বৃষ্টিতে জল জমেছে গাছের গোড়ায়। তার জেরে গোড়াপচা রোগ দেখা দিয়েছে সব্জি গাছে। বৃষ্টি বন্ধের পরে রোদ উঠলে এই রোগ আরও ছড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চাষিরা। এই সম্ভাবনার কথা মেনে নিয়েছেন কৃষি দফতরের আধিকারিকেরাও। গোড়াপচা রোগের প্রকোপ ঠেকাতে নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ প্রয়োগের পরামর্শও দিয়েছেন তাঁরা।
বর্ধমান জেলার নানা এলাকায় সারা বছর ধরে বিভিন্ন সব্জির চাষ হয়। এর মধ্যে পূর্বস্থলীতে প্রচুর সব্জি ফলান চাষিরা। বছরের এই সময়ে ফুলকপি, বাঁধাকপি, পটল, টম্যাটো, বিট, গাজর, ধনেপাতা, বেগুন-সহ নানা সব্জির চাষ হয়। কালনার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে আবার শসা উৎপাদন হয়। এই সব সব্জি চাষিরা ফসল গাড়িতে করে নিয়ে যান জিউধারা, ফলেয়া, কালেখাঁতলা, পারুলিয়ার পাইকারি বাজারগুলিতে। সেখানে আড়তদারের সব্জি কিনে নেন। গাড়ি ভর্তি সব্জি রওনা দেয় শিয়ালদহ, হাওড়া, শেওড়াফুলি, আসনসোলের মতো রাজ্যের নানা বড় বাজারে। কিছু কিছু ট্রাক যায় ঝাড়খণ্ড ও দিল্লিতেও। পাইকারি বাজারগুলি থেকে সব্জি কেনেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও।
কালেখাঁতলা পাইকারি বাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্য বার এই সময়ে প্রায় একশো ট্রাক সব্জি যায় নানা জায়গায়। সেখানে এ বার যাচ্ছে অর্ধেকেরও কম। কালনার জিউধারা এলাকায় পাইকারি বাজারের আড়তদারদের দাবি, উৎপাদন কমে অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। তা ছাড়া, ভাল মানের সব্জি মিলছে কম। ব্যবসায়ীদের দাবি, সব্জির জোগান কমে যাওয়ায় পাইকারি বাজারে দামও বাড়ছে।
সংক্রমণে হলুদ হয়ে যাচ্ছে গাছ, দাবি চাষিদের। —নিজস্ব চিত্র।
পুজোর আগে যেখানে একটি ফুলকপির দাম ছিল ৭-৮ টাকা, এখন তা বেড়ে হয়েছে ১০-১৫ টাকা। বাঁধাকপি প্রতি কেজি ১৫ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ টাকায়। উচ্ছে কেজি প্রতি ২০-২৫ টাকা থেকে এখন দাঁড়িয়েছে ৩৫-৪০ টাকায়। বেগুন বাজারদর ছিল কেজি প্রতি ২৫ টাকা, যা এখন দাঁড়িয়েছে ৪০-৫০ টাকায়। কৃষি কর্তাদের দাবি, পুজোর সময়ে ও তার আগে টানা বৃষ্টির জেরে সব্জির খেতে জল দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। এর ফলে গোড়াপচা রোগের সংক্রমণ দেখা দেয়। বৃষ্টি থামার পরে রোগের সংক্রমণ বড় আকার নেয়। নিচু এলাকায় এই ধরনের রোগের প্রকোপ বেশি হয়। কালনা মহকুমা কৃষি দফতরের সহ-আধিকারিক পার্থ ঘোষ বলেন, “গোড়াপচা রোগের সংক্রমণের ফলে বহু খেতেই সব্জি গাছ হলুদ হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে সব্জির জোগান কমছে।” তাঁর দাবি, এই সময়ে ধারাবাহিক ভাবে নানা সব্জির চাষ করেন চাষিরা। বৃষ্টির কারণে এই মুহূর্তে বহু জমি চাষের উপযোগী নয়। ফলে, নতুন সব্জি গাছ তৈরি করতেও চাষিদের বেশ কিছুটা সময় লাগবে। সব মিলিয়ে চাষিদের ভাল মানের ফলন পেতে অন্তত এক মাস সময় লাগবে।
গোড়াপচা রোগে গাছ নষ্ট হওয়া নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন সব্জি চাষিরা। পূর্বস্থলী ২ ব্লকের সাজিয়ারার রহিম শেখের কথায়, “৮ বিঘা জমিতে বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি চাষ করেছি। তবে পুজোর পর থেকে খেতে ফলন বেশ কমে গিয়েছে। গোড়াপচা রোগ থেকে গাছ বাঁচানোই মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।” তাঁর দাবি, সার ও বীজের দাম এবং মজুরি বাড়ার ফলে এ বার চাষের খরচ এমনিই বেড়েছে। এর উপরে রোগ ঠেকাতে বেশি দামের ওষুধ স্প্রে করতে হচ্ছে। ফলে, ফসল বিক্রি করে লাভের মুখ দেখা যাচ্ছে না। কালনার বাঘনাপাড়ার চাষি সনাতন মাঝির বক্তব্য, “গোড়াপচা রোগে ঝিঙে ও করলার খেত নষ্ট হয়েছে। নতুন করে জমি তৈরির চেষ্টা করছি।”
গোড়াপচার দাওয়াই
প্রতি লিটার জলে এক গ্রাম কার্বেনডাজিমের মিশ্রণ স্প্রে।
ম্যাঙ্কোজেবের দুই থেকে আড়াই গ্রাম মিশ্রণ কাজ দিতে পারে।
মেটালক্সিল ও ম্যাঙ্কোজেবের দুই গ্রামের মিশ্রণ স্প্রে করলেও ভাল ফল মিলবে।
স্প্রে করার আগে মিশ্রণে যোগ করতে হবে আঠা।
কৃষি বিশেষজ্ঞেরা জানান, গোড়াপচা রোগের সংক্রমণ ঠেকাতে কার্বেনডাজিম প্রতি লিটার জলে এক গ্রাম বা ম্যাঙ্কোজেবের দুই থেকে আড়াই গ্রাম অথবা মেটালক্সিল ও ম্যাঙ্কোজেবের মিশ্রণ ২ গ্রাম স্প্রে করলে ভাল ফল মিলবে। পার্থবাবুর কথায়, “স্প্রে করার আগে কিছুটা আঠা গুলে নিতে হবে, যাতে স্প্রে করা ওষুধ গাছ থেকে সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে পড়ে না যায়।”
কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, শুধু সব্জি নয়, টানা বৃষ্টি পিছিয়ে দিয়েছে পিঁয়াজ, তৈলবীজ ও ডালশস্যের চাষও। কৃষি দফতর সূত্রে খবর, কালনা মহকুমায় প্রায় এক হাজার হেক্টর জমিতে পিঁয়াজ চাষ হয়। সুখসাগর প্রজাতির পিঁয়াজ চাষের জন্য বহু এলাকার চাষিরা এখনও বীজ ফেলার কাজই করতে পারেননি। সর্ষে ও নানা ডালশস্যের চাষও জমি তৈরি না হওয়ায় শুরু করা যায়নি অধিকাংশ জায়গায়। তবে শীতের আগে এই বৃষ্টিতে কিছু কিছু লাভও হয়েছে বলে কৃষিকর্তারা জানান। তাঁদের দাবি, আমন ধানে বাদামি শোষক পোকার হামলা অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে সাম্প্রতিক এই বৃষ্টি। তা ছাড়া, জলস্তর বাড়ায় চলতি মরসুমে মাটির তলার ও উপরিভাগের জলের জোগান পাবেন চাষিরা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.