অন্য দিনের মতোই সকাল সকাল টিউশনে গিয়েছিল পড়ুয়ারা। শিক্ষকের বাড়ির দরজা ছিল খোলা। ভিতরে ঢুকে তারা দেখে, মেঝেতে পড়ে রয়েছে শিক্ষকের রক্তাক্ত দেহ।
সোমবার সকালে কাঁকসার গোপালপুরে নিহত ওই গৃহশিক্ষকের নাম সমীর দাস (৩২)। পুলিশ জানায়, ঘরের ভিতরে আলমারি খোলা ছিল। টাকা-পয়সা হাতানোর লোভেই তাঁকে খুন করা হয়েছে বলে পুলিশের অনুমান। সমীরবাবু তাঁদের দলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন জানিয়ে তৃণমূলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি অপূর্ব মুখোপাধ্যায় বলেন, “কেন খুন, পুলিশ তদন্ত করে দেখুক।” পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা জানান, তদন্ত চলছে। শীঘ্রই কিনারা হবে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সমীরবাবু তাঁর নির্মীয়মাণ বাড়িতে থাকতেন। সেখানে ঘরের দরজা লাগানো হয়েছে। তবে জানলায় এখনও কোনও গ্রিল লাগানো হয়নি। পরিবার সূত্রে জানা যায়, সমীরবাবু তাঁর টাকা ও নানা সামগ্রী আলমারিতে তালা দিয়ে রাখতেন। সকাল ৬টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ষষ্ঠ থেকে একাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের পড়াতেন তিনি। এ দিন সকালে জনা সাতেক পড়ুয়া গিয়ে দেখেন, সমীরবাবুর দেহ পড়ে রয়েছে। গলার নলি কাটা। অষ্টম শ্রেণির বর্ষা দাস, ঋতুজা সিংহেরা জানায়, ভয়ে তারা চিত্কার করতে থাকে। তা শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন। খবর দেওয়া হয় কাঁকসা থানায়। |
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে সমীরবাবু টিউশন করছিলেন। এলাকায় বেশ জনপ্রিয়ও ছিলেন। পাশেই একতলা বাড়ি সমীরবাবুর দাদা, বেসরকারি কারখানার কর্মী শঙ্খ দাসের। সমীরবাবুর বাড়ির কাজ এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। তিনি পাড়ার ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। একটি স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। পড়শিদের দাবি, দুর্গাপুজোর পরে বেঁচে যাওয়া ক্লাবের টাকা ছিল সমীরবাবুর কাছে। তা ছাড়া স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর টাকা-পয়সাও থাকত তাঁর কাছেই। বাড়ির কাজ সম্পূর্ণ করতে তিনি ব্যাঙ্ক থেকে কিছু টাকাও তুলেছিলেন। বাসিন্দাদের অনুমান, সব মিলিয়ে বেশ কিছু টাকা ছিল সমীরবাবুর আলমারিতে। সেই আলমারি এ দিন লণ্ডভণ্ড অবস্থায় পাওয়া যায়। পুলিশ জানায়, সম্ভবত টাকা-পয়সার লোভেই সমীরবাবুকে খুন করে আততায়ী।
পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে এলাকাবাসী দাবি করেন, কুকুর এনে তদন্ত করতে হবে। কিছুক্ষণ পরে কুকুর আনে পুলিশ। সেই কুকুর সমীরবাবুর ঘর থেকে প্রথমে যায় স্থানীয় একটি ক্লাবে। পুলিশ ক্লাবের দরজা খোলার ব্যবস্থা করে। কুকুর সেখান থেকে যায় পাশের একটি ঝোপের কাছে। সেখান থেকে উদ্ধার হয় একটি গামছা, একটি বঁটি ও একটি ছুরি। বঁটিতে সামান্য রক্তের ছোপ ছিল। কুকুর এর বেশি আর কিছু পায়নি। পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “রাতে বৃষ্টি হয়েছে। ফলে সূত্র ধুয়ে গিয়েছে।”
ঘটনাস্থলে যান বিধায়ক অপূর্ববাবু ও জেলা পরিষদ সদস্য দেবদাস বক্সী। পুলিশের অনুমান, আততায়ী সম্ভবত সমীরবাবুর পরিচিত। তাকে চিনে ফেলায় সমীরবাবুকে খুন হতে হয়। তাঁর দাদা শঙ্খবাবু বলেন, “পাশেই থাকি। ভাই দুষ্কৃতীকে বাধা দিলে সাড়াশব্দ হত। অন্য বাসিন্দারাও টের পেতেন। এত বড় ঘটনা ঘটে গেল, টুঁ শব্দ পেলাম না! আশ্চর্য লাগছে।” কাঁকসার ওসি বিশ্বজিত্ মুখোপাধ্যায় বলেন, “প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, সমীরবাবুকে কোনও ভাবে বেহুঁশ করে খুন করা হয়েছে। ময়না-তদন্ত রিপোর্ট পেলে বিষয়টি কিছুটা পরিষ্কার হবে।” |