এলাকায় পোস্ত চাষ হচ্ছে জেনেও নিষ্ক্রিয় থাকার অভিযোগে সিপিএমের এক প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কালীচরণ মাঝি নামে ওই নেতা বর্ধমানের কুড়মুন-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ছিলেন। রাজ্যে এই ধরনের গ্রেফতারির নজির বিশেষ নেই।
বর্ধমান থানা সূত্রে দাবি করা হয়েছে, পঞ্চায়েত ভোটের আগেই প্রধানের বিরুদ্ধে নারকোটিক ড্রাগস অ্যান্ড সাইকোট্রপিক সাবস্ট্যান্স (এনডিপিসি) আইনে মামলা রুজু হয়েছিল। তিনি এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দেন। পুলিশ তৃতীয় জেলা বিশেষ আদালতে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি ও অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার আবেদন জানিয়েছিল। সেই আবেদন মঞ্জুর হতেই রবিবার রাতে বাড়ি থেকে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। তবে সোমবার আদালতে তোলা হলে বিচারক মধুসূদন মণ্ডল তাঁর জামিন মঞ্জুর করে।
|
জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “এনডিপিসি আইনের নতুন ধারায় বলা হয়েছে, কঠোর হাতে আফিম বা পোস্তর চাষ রুখতে হবে। কারণ, আফিম থেকে নানা ধরনের মাদক তৈরি হয়। তৈরি হয় গাঁজাও। পোস্ত চাষের নামে ওই গুল্মের চাষ গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে। নতুন আইনেই বলা হয়েছে, যদি কোনও পঞ্চায়েতপ্রধান তাঁর এলাকায় অবৈধ পোস্ত চাষের খবর পেয়েও তা পুলিশ-প্রশাসনকে না জানান, তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই মতোই গত ২ জুলাই কালীপদবাবুর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছিল।”
গত ২ জুলাই বর্ধমান থানায় খবর আসে, কুড়মুন গ্রামে প্রচুর চোলাই মদের পাশাপাশি অনেকখানি জায়গা জুড়ে পোস্ত গাছেরও চাষ হয়েছে। ভোরে পুলিশ গ্রামে হানা দেয়। সেই সময়ে একটি বাড়িতে চোলাই তৈরি হচ্ছিল। ওই বাড়ি এবং তার আশপাশের কয়েকটি বাড়িতে হানা দিয়ে পুলিশ ১৭ জনকে গ্রেফতার করে। গ্রামেরই ঝড়ু মাঝির বাড়ি থেকে ১ কেজি ৬০০ গ্রাম গাঁজা পাওয়া যায়। সাধন দাস নামে এক জনের বাড়ি আরও ১ কেজি ৪০০ গ্রাম গাঁজা মেলে। এই গাঁজা কোথা থেকে এল, তা নিয়ে পুলিশ জেরা শুরু করলে গ্রামবাসী তাদের স্থানীয় ছোটশীল পুকুরের পাড়ে নিয়ে যান। সেখানে প্রচুর আফিম বা পোস্ত গাছের চাষ হয়েছে। পুলিশ প্রায় তিন কুইন্ট্যাল পোস্ত গাছ নষ্ট করে।
|
পুলিশের দাবি, পঞ্চায়েতপ্রধান কালীচরণবাবু ওই পুকুরপাড়ে প্রচুর পোস্ত চাষ এবং তা নিয়ে অবৈধ কারবারের কথা জানতেন। কিন্তু চাষে বাধা দেননি, পুলিশ-প্রশাসনকেও জানাননি। সে দিন প্রধানের বাড়িতে গিয়ে তাঁর দেখা পায়নি। ধৃত ১৭ জন, যে জমিতে পোস্ত চাষ হয়েছিল সেটির মালিক এবং প্রধানের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়। গ্রেফতার এড়াতে কালীচরণবাবু হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু হাইকোর্ট তা নাকচ করে দেয়।
সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদক অমল হালদার অবশ্য দাবি করেন, “প্রধান পোস্ত চাষের খবর দেননি বলে তাঁকে ধরতে হবে, এটা শুধুই অজুহাত। আসলে নানা অজুহাতে আমাদের কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। আগে আগ্নেয়াস্ত্র রাখার মিথ্যে মামলা সাজিয়ে ধরা হচ্ছিল। এখন পোস্তচাষের আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে।” তাঁর প্রশ্ন, “আমাদের জেলায় যত জায়গায় পোস্ত চাষ হয়, সেই সব এলাকার বর্তমান তৃণমূল প্রধানেরা একই আইনে গ্রেফতার হবেন তো?” পুলিশ সুপার বলেন, “আইনের চোখে সবাই সমান। কোনও এলাকায় বেআইনি পোস্ত চাষের খবর পেলেই পঞ্চায়েতপ্রধানের জবাবদিহি চাওয়া হবে। প্রয়োজনে গ্রেফতার করা হবে।” |