উত্তরের চিঠি

কাঠামোগুলি আদৌ উঠবে তো?
শেষ বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের মরসুম। হিসেবি নয়, শুধুই বেহিসেবি হওয়ার দিন। এক লাগাম ছাড়া আনন্দে ভেসে যাওয়ার দিন। তবে আনন্দের ফাঁক গলেই কিন্তু ঢুকে পড়ে বিপদ। আনন্দের মুহূর্তেই দায়িত্ব-কর্তব্য একটু শিথিল করতে পছন্দ করি আমরা। আর সেই শিথিলতার সুযোগেই পুজোর হাত ধরে ঢুকে পড়ে শব্দবাজির দানব। তার দাপটে কান ঝালাপালা হয় আমাদের। ঢুকে পড়ে ‘ডিজে’র মতো শব্দদানব। বয়স্কদের অবস্থা কতটা সঙ্গীন হয়, তাঁরা কী ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন, কী ভাবে তাঁদের হার্ট অ্যাটাকের কবলে পড়তে হয়এ সব উপেক্ষা করি। ভারতীয় সংবিধান শান্তিতে থাকা ও ঘুমোনোর অধিকারকে স্বীকৃতি দিলেও ও-সবকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখাই আমরা। দেখিয়ে আনন্দ পাই। আমাদের ছোটদের জন্যও যে শব্দদূষণ কী ভাবে ক্ষতি ডেকে আনছে, লাগামহীন নানা ধরনের আনন্দকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে সে-সব ভুলে থাকি আমরা। শব্দের মাত্রা ৯০ ডেসিবল কিংবা তার বেশি কেন হল, তা নিয়ে মাথা ঘামাই না। এ সবে মাথা ঘামাই না বলেই পুজোর হাত ধরে আরও একটি বিপদ আমাদের সামনে হাজির হয়। তা হল জলদূষণ। প্রশ্ন, কী করে?
সোজা উত্তর, প্রতিমা সাজানোর সৌজন্যে। যে-সব রং দিয়ে প্রতিমাকে সুন্দর দেখানো হয়, তারই বদান্যতায়। প্রতিমা সাজাতে যে-সব রং ব্যবহৃত হয়, তাতে থাকে ক্ষতিকর রাসায়নিক। প্রতিমা বিসর্জনের পরে এই ক্ষতিকারক রাসায়নিকগুলি প্রতিমার গা থেকে নদী, পুকুর, জলে মিশে জলে-দ্রবীভূত অক্সিজেনের চাহিদার সমস্যা তৈরি করে। জলদূষণ ঘটায়। জল পরিবেশে যে সমস্ত উদ্ভিদ ও প্রাণী-প্রজাতি থাকে, তাদের বসবাসযোগ্য পরিবেশ হারিয়ে যায়। দেশীয় মাছ প্রজাতির অস্তিত্ব সংকটের এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। এ বারও কাঠামোগুলি উত্তরবঙ্গের সমস্ত নদী জলাশয় ও পুকুর থেকে সঠিক সময়ে উঠবে তো? আত্রেয়ী বিষে ভরে যাবে না তো? এই কাজটি মূলত পুরসভা-প্রশাসনের। কোনও প্রতিষ্ঠান কিংবা পরিবেশপ্রেমী সংগঠন সাহায্য বা সহযোগিতা করতে পারে মাত্র। বর্তমানে বালুরঘাটের ক্ষেত্রে সদর মহকুমাশাসকের কাছে সনির্বন্ধ অনুরোধ এ-বিষয়টির দিকে খেয়াল রাখার জন্য। আসলে উত্তরবঙ্গের সর্বত্র মৃৎশিল্পীরা পরিবেশ-বান্ধব রং ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন নন। পুজো উদ্যোক্তারাও বিষয়টি সম্পর্কে তেমন ওয়াকিবহাল নন। এ বার দেখা গেল, কলকাতার বাইরে শিলিগুড়িতে পরিবেশ-বান্ধব রঙের ব্যবহার নিয়ে একটি কর্মশালা হয়ে গেল। আসলে ছড়াতে হবে তো সর্বত্র। পুজোতে বাঙালি আনন্দে মাতবে, তা বড়ই আনন্দদায়ক। কিন্তু পরিবেশের ক্ষতি করে মোটেই নয়।
শহরবাসীরা একটু ভাবুন
জলপাইগুড়ির আনন্দচন্দ্র কলেজ এবং প্রসন্নদেব মহিলা কলেজে প্রতি বছর ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে ভর্তির সমস্যা বাড়ছেই। এই শহরের দক্ষিণাঞ্চলে, বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত অনেক উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে। ফলে কলেজে ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যাও ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমি এক জন সাধারণ নাগরিক হিসাবে শহরের মাননীয় পুর প্রধান এবং গুণিজনদের প্রতি এই ভর্তির সমস্যা সাময়িক ভাবে হ্রাস করার জন্যে বিশেষ চিন্তাভাবনা এবং নজর দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি। পাণ্ডাপাড়া চেকপোস্ট-এর পূর্ব ও পশ্চিম দুই প্রান্তেই অনেকটাই ফাঁকা জায়গা পড়ে রয়েছে। সেখানে একটি কলেজ তৈরি করার চেষ্টা করা হলে সদর থানার অঞ্চলগুলির এবং শহরাঞ্চলের বহু উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা ছাত্রছাত্রীরা সেখানে ভর্তির ব্যাপারে বিশেষ উপকৃত হবে।
গোর্খাদের দাবি নিয়ে কিছু কথা
দার্জিলিঙের এক ভূমিপুত্র হিসাবে ‘গোর্খাল্যান্ড’ প্রসঙ্গে কিছু কথা বলতে চাই। আমার জন্ম, লেখাপড়া সবই এই দার্জিলিং-এর বুকে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর দার্জিলিং পাহাড়ের ৩ মহকুমা শহরই ছিল এক সময় রাজা মহারাজা ও কিছু বর্ধিষ্ণু পরিবারের গ্রীষ্ম ও শরৎ কালের আবাসস্থল। এই শান্তিভূমিতে তাঁর পদচিহ্ন রেখে গেছেন বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুভাষচন্দ্র বসু, জগদীশচন্দ্র বসু, চিত্তরঞ্জন দাস, মাদার টেরিজা, ভগিনী নিবেদিতা ও অগণিত দেশ বরেণ্য জ্ঞানীগুণী মানুষ জন।
দার্জিলিংঙে বসবাসকারীদের মধ্যে মূলত ভুটানি, লেপচা, তিব্বতি ছাড়া লিম্বু মংগর, গুরুঙ্গ, মেওয়ার, রাই, বাঙালি, বিহারি মারোয়াড়িরা দীর্ঘদিন ধরে বংশ পরম্পরায় বসবাস করছেন।
এর মধ্যে গোর্খা ভাষাভাষী নিয়ে পরিসংখ্যান করতে গেলে দেখা যাবে, দার্জিলিঙের জনসংখ্যার অর্ধেক, বা তার কিছু বেশি মানুষ এর আওতায় আসবে। তথাপি এই বাংলা বিভাজনের চিন্তাধারা বা বাঙালি বিদ্বেষ নতুন নয়। ১৯৬৮ সালে এক বার এই বিদ্বেষ দেখা দেয় ও এর ফলে বাংলায় লেখা সাইনবোর্ডে আলকাতরা লেপে দেওয়া হয় এবং বাছাই করে বাঙালির বাড়ি ভাঙচুর হয়। প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ নেওয়ায় তা অচিরেই স্তব্ধ হয়। ১৯৮৭ থেকে আবার পৃথক রাজ্যের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। সে সময় দার্জিলিং গোর্খা হিল কাউন্সিলের দ্বারা প্রশমিত করা হলেও আন্দোলন চলাকালীন বাঙালি বিদ্বেষ প্রকট হয়। সেই বিদ্বেষ থেকেই কোচবিহার মহারাজার অবসর যাপনের রাজপ্রাসাদটি অধিগ্রহণ করে ডি জি এইচ সি-র (দার্জিলিং গোর্খা হিল কাউন্সিল) কার্যালয়ে রূপান্তরিত করা হয়। যা বর্তমানে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার কার্যালয়। এ সব স্মৃতি রোমন্থন করা কষ্টের জেনেও বর্তমান রাজনীতির ডামাডোলে কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষের ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করবার প্রয়াসে যে বিভাজন সৃষ্টির চক্রান্ত চলেছে তা আজ পাহাড়বাসী এবং সমস্ত ভাষাভাষী মানুষের কাছেই চরম এক দুশ্চিন্তার বাতাবরণ সৃষ্টি করে চলেছে।
তাই ভবিষ্যতে বাঙালি তথা অন্য ভাষাভাষী যাঁরা দীর্ঘদিন বংশপরম্পরায় পাহাড়ে বসবাস করছেন তাঁদের স্থান কোথায় হচ্ছে সেই ব্যাপারে তারা সন্ধিহান ও যারপরনাই বিব্রত।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.