মেছোভেড়ির দখল এবং দাদনের টাকা নিয়ে দু’দল গ্রামবাসীর বোমা-গুলির লড়াইয়ে মৃত্যু হল দু’জনের। গুলিতে জখম হন চার জন। রবিবার ভোরে হাড়োয়ার নজদেপুর গ্রামের ঘটনা। পুলিশ জানায়, ওই লড়াইয়ে বোমার আঘাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান নফের আলি মোল্লা (৪০)। আরজিকর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে মারা যান জামসুর আলি মোল্লা (৪০)। নিহতেরা নজদেপুরের বাসিন্দা।
মেছোভেড়ির দখল নিয়ে হাড়োয়ায় গ্রামবাসীদের লড়াই নতুন নয়। তাতে প্রায়ই রাজনীতির রং-ও লাগে। বাম আমল থেকেই তা চলে আসছে। এ দিন ওই গোলমালের পরে মধ্যমগ্রামে তৃণমূলের জেলা কার্যালয়ে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নেতৃত্বে একটি দলীয় বৈঠক হয়। তৃণমূল সূত্রে খবর, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, মেছোভেড়ি নিয়ে গোলমাল আর বরদাস্ত করা হবে না। কিছু দিন আগে এমনই এক গোলমালে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠায় বৈঠকেই হাড়োয়ার গোপালপুর-২ নম্বর অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি সাহেব মোল্লাকে পদ ও দল থেকে বহিষ্কার করা হয় বলে জানান জ্যোতিপ্রিয়বাবু। বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতার সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নজদেপুরের একটি ভেড়ির দখল নিয়ে নফের আলির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই বিবাদ চলছিল তাঁর জেঠতুতো ভাই ভাঙাডাঙা-নবপল্লির বাসিন্দা সেন্টু গাজির। অন্য দিকে, সম্প্রতি মাছ চাষের জন্য দাদনের টাকা নিয়ে নজদেপুরের কেয়ামত আলির সঙ্গে নবপল্লির ভোদো গাজির গোলমাল বাধে। তা নিয়ে দুই গ্রামে উত্তেজনা ছিলই। কেয়ামত ভোদো গাজির ছেলের সাইকেল কেড়ে নেন বলে অভিযোগ। রবিবার ভোরে ওই ঘটনার জেরে নবপল্লির লোকজন আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে নজদেপুরে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। গুলি চলে, বোমা পড়ে। নবপল্লি থেকে আসা দলটির সঙ্গে এসে সেন্টু গাজি গোলমালের সুযোগে নজের আলির জমি হাতানোর চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। হাতাহাতিও হয়। গুলিবিদ্ধ তিন জনকে আরজিকরে এবং এক জনকে হাড়োয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বসিরহাটের এসডিপিও বিশাল বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন। উত্তেজনা থাকায় গ্রামে পুলিশ পিকেট বসে।
এসডিপিও বলেন, “ঘটনাস্থল থেকে তিন জনকে আটক করা হয়েছে। ২২ জনের বিরুদ্ধে গোলমালের জড়িত থাকার অভিযোগ হয়েছে। অভিযুক্তেরা পলাতক। তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।” অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি তুলেছেন খাদ্যমন্ত্রী।
গোটা ঘটনা তৃণমূলের গোষ্ঠী-সংঘর্ষ বলে দাবি করেছে সিপিএম। নিহত নফের আলির ছেলে বাচ্চু মোল্লা বলেন, “আমরা সকলেই তৃণমূল করি। গ্রামের একজন পাওনা টাকার দাবিতে নবপল্লির একটি ছেলের সাইকেল কেড়ে নেওয়ায় গণ্ডগোলের সূত্রপাত। আমাদের আত্মীয় সেন্টু গাজি সেই সুযোগে লোকজন নিয়ে আমাদের ভেড়ির দখল নিতে এসেছিল।” সেন্টু পলাতক বলে পুলিশ জানিয়েছে। ঘটনাটিকে গোষ্ঠী-সংঘর্ষ বলে মানতে চাননি জ্যোতিপ্রিয়বাবু। তিনি বলেন, “মেছোভেড়ি নিয়ে গণ্ডগোল বরদাস্ত করা হবে না। হাড়োয়ায় বেআইনি মেছোভেড়ির জমি গরিবদের মধ্যে পাট্টা দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত সমিতিকে বলা হয়েছে।” |