|
|
|
|
‘অরুন্ধতী’-র ফার্স্ট লুক
আনন্দplus এক্সক্লুসিভ |
|
রণং দেহি |
তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় ছবি শুরু হতে মাত্র দু’দিন। যে ছবির জন্য ‘সোর্ড ফাইটিং’
আর ঘোড়ায় চড়ার তালিম নিতে হচ্ছে তাঁকে। ছবির নাম ‘অরুন্ধতী’। তার ফার্স্ট লুক এবং গল্প নিয়ে
একমাত্র আনন্দplus-এ মুখ খুললেন কোয়েল মল্লিক। সামনে ইন্দ্রনীল রায় |
শুক্রবার সন্ধেবেলা বাড়িতে লক্ষ্মীপুজো হয়েছে। তার পর তিন দিনের ছুটি নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। বর নিসপাল সিংহ রাণের সঙ্গে। শুধুই তিন দিন।
এবং শুক্রবার সারা দিন ঘরের ও বাইরের নানা ব্যস্ততার কারণে তিনি শুধু ফোন করছেন, আর সময় পিছোচ্ছেন। কর্মব্যস্ততা আর ঘরকন্না...এ যেন সম্পূর্ণ এক নারী।
অবশেষে এয়ারপোর্টে যাওয়ার পথে একটু জানালা খোলার সুযোগ পেলেন তিনি। শুরু হল আড্ডা। ফোনেই। বেশ জমিয়ে। ছুটির মেজাজ। রিল্যাক্সড।
‘রংবাজ’ সুপারহিট। বিয়ের পর প্রথম পুজো। শ্বশুরবাড়ি, বাপের বাড়ির সব দায়িত্ব মিটিয়ে শুধু তিন দিনের ছুটি। এর কোনও মানে হয়?
“কী আর করব, এইটুকুই সময় বের করতে পেরেছি। ফিরে এসেই তো জীবনের সবচেয়ে বড় কাজ করতে চলেছি আমি। ইট ইজ দ্য বিগেস্ট ফিল্ম অব মাই কেরিয়ার,” বেশ গম্ভীর হয়েই বলেন কোয়েল মল্লিক। ছুটির মেজাজের সঙ্গে তখন এই গাম্ভীর্য একেবারে বেমানান।
এই ছবিটার প্রসঙ্গেই তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চাওয়া। টালিগঞ্জে এ বছরই দু’টো বিশাল বাজেটের ছবি তৈরি হয়েছে। ‘মিশর রহস্য’ এবং ‘চাঁদের পাহাড়’। তার পর হতে চলেছে এই ছবি, যার মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করতে চলেছেন কোয়েল।
ছবির নাম ‘অরুন্ধতী’। নাম-ভূমিকায় রঞ্জিত মল্লিকের কন্যা, নিসপাল-জায়া, যিনি নিজগুণে টালিগঞ্জের আদরের নায়িকা। অন্যান্য মুখ্য চরিত্রে রয়েছেন ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, রাহুল এবং দেবশঙ্কর হালদার।
এই ছবির কারণেই শুধু তিন দিন ছুটি। এই ছবির টানেই আবার শহরে ফেরা তাঁর। |
|
‘অরুন্ধতী’ যৌথ ভাবে প্রযোজনা করছেন মণি-শ্রীকান্তের ভেঙ্কটেশ ফিল্মস ও নিসপালের সুরিন্দর ফিল্মস। শ্যুটিং শুরু ২৪ অক্টোবর থেকে। শ্যুটিং হবে কলকাতায় ও বোলপুরে। কেউ মুখে কিছু না বললেও ‘অরুন্ধতী’রও বাজেট ৬-৭ কোটির কাছাকাছি বলে মনে করছে টলিউড। বড় প্রযোজনা, যাকে বলে বিগ বাজেট ফিল্ম। অনেক দিন পর এত বিগ বাজেটের একটা ছবি টলিউডে। অথচ প্রায় পুরোটাই কলকাতাতে শ্যুটিং হচ্ছে। আর বাকিটা বোলপুর। বাজেট থাকা সত্ত্বেও বিদেশে শু্যটিং করার কোনও পরিকল্পনাই নেই। বিগ বাজেট মানেই তো বিদেশ যাত্রা তাই তো সবাই মনে করেন...
“হ্যাঁ, এটা ঠিক যে আমরা ধরেই নিই, বিগ বাজেট ছবি মানেই বিদেশে শ্যুটিং। এই ছবিতে আমরা সেটা ইচ্ছে করেই করিনি। ইচ্ছে করেই শুধু বাংলার মাটিতে শ্যুট করছি আমরা। গ্রামবাংলার ফিল-টা আমরা রাখতে চাই পুরো ছবিতে,” বলেন নিসপাল।
প্রসঙ্গত বলা যায় এই ছবিটা মূলত তেলুগু ভাষায় বানানো হয়েছিল। সে ছবি ব্লকবাস্টার হওয়ার পর বাংলা রাইটস কিনে নিয়েছেন প্রযোজক। এ বার বাংলা ভাষায় বানানো হচ্ছে ছবিটা। পরিচালক সুজিত মণ্ডল। শোনা যায়, প্রথমে বাংলা রাইটসের জন্য তেলুগু প্রযোজক প্রায় দু’কোটি টাকা চেয়েছিলেন। হাজারো মিটিংয়ের পর রাইটসের দাম কমানো হয়।
তবে এ সব নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাতে চান না কোয়েল। স্বামী নিসপালের ডিপার্টমেন্ট সেটা। নায়িকার চোখ এখন শুধু ‘অরুন্ধতী’ চরিত্রের দিকে। ‘অরুন্ধতী’কে সঙ্গে নিয়েই তিনি চললেন হংকং-সিঙ্গাপুর। কোয়েলের থেকে এখন ‘অরুন্ধতী’কে আলাদা করাই মুশকিল।
“আমাকে শ্রীকান্ত প্রায় এক বছর ধরে বলছে ‘অরুন্ধতী’ শুরু করবে। কিন্তু আমি তখন ঠিক রেডি ছিলাম না। এ রকম একটা ওম্যান ওরিয়েন্টেড ছবি করার আগে একটা মেন্টাল প্রিপারেশনের তো দরকার হয়, তাই না? সেটার জন্যই ওয়েট করছিলাম। টুডে আই অ্যাম রেডি!” এক নিশ্বাসে বলেন কোয়েল।
মনে হল, যেন বিয়ের পর তাঁর নারীত্ব কোথাও একটা পরিপূর্ণতা পেয়ে তাঁকে আরও বেশি প্রস্তুত করে তুলেছে। তাই যে মেয়ে এত দিন রেডি ছিলেন না, তিনিই আজ বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যেই এত গভীর ভাবে এই নারীচরিত্রে মগ্ন হয়ে উঠেছেন। |
এ রকম একটা ওম্যান ওরিয়েন্টেড ছবি করার আগে
একটা মেন্টাল প্রিপারেশনের তো দরকার হয়,
তাই না? সেটার জন্যই ওয়েট করছিলাম
কোয়েল মল্লিক |
আমি এতটা ইনভলভড্ হতে কোনও
নায়িকাকে দেখিনি। প্রত্যেকটা খুঁটিনাটি
বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করছে ও
সুজিত মণ্ডল |
|
এই ছবিটার প্রায় আশি শতাংশ দৃশ্যে রয়েছেন তিনি। তবে সবচেয়ে বড় নিউজ পয়েন্ট অন্য জায়গায়।
ছবিতে কোয়েলকে হর্স রাইডিং এবং সোর্ড ফাইটিং-এর ট্রেনিং নিতে হচ্ছে। “হর্স রাইডিং আর সোর্ড ফাইটিং-এর আগে আমাকে আমার ফিটনেস লেভেলটা ১০০ শতাংশ করতে হয়েছে। ডায়েট থেকে এক্সারসাইজ পুরোটাই চলছে বেশ কয়েক মাস ধরে। অসম্ভব শক্ত কিছু স্টান্ট আছে এই ছবিতে। তবে তার ড্রেস রিহার্সাল হয়ে গিয়েছে ‘রংবাজ’ ছবিতেই! ওখানেও কিছু সাঙ্ঘাতিক স্টান্ট করে আজ আমি কনফিডেন্ট,” গর্ব করে বললেন কোয়েল।
ডায়েট, ফিটনেস এক্সারসাইজ তো চলেছেই। তার পাশাপাশি কি হর্স রাইডিং এবং সোর্ড ফাইটিং-এর ট্রেনিংও শুরু হয়ে গিয়েছে তাঁর?
“না, না। ১০০ শতাংশ ফিট হয়েছি সবে। ফিরে এসে আগে কলকাতার শিডিউল। তখন এতটুকুও সময় পাব না। ট্রেনিংয়ের জন্য নিজের পুরোটা দেওয়া চাই। তাই কলকাতার শিডিউলের পরেই ট্রেনিং শুরু হবে আমার। হর্স রাইডিংয়ের জন্য আলাদা ট্রেনার থাকবেন। আর সোর্ড ফাইটিংটা হবে কেরলের মার্শাল আর্টস কালারিপাত্তুর আদলে। ওইটা আমি খুব মন দিয়ে করতে চাই কারণ ওটায় বডি ল্যাঙ্গোয়েজ হ্যাজ টু বি ভেরি পারফেক্ট,” বেশ উত্তেজিত শোনায় মল্লিকবাড়ির মেয়েকে।
তা, এই ছবির বিষয়বস্তু কী?
“এই ছবিটার থিম পুনর্জন্ম। এ ছাড়াও ছবির একটা বড় দিক হল উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট। আমি দু’টোতেই অসম্ভব বিশ্বাসী। আর দেখবেন, অনেক দিন বাংলায় এ রকম নারীকেন্দ্রিক ছবি কিন্তু হয়নি। এই ছবিতে নারীর একটা ভয়েস আছে যা সচরাচর ছবিতে পাওয়া যায় না। একজন নারী হিসেবে আমার মনে হয় এই এমপাওয়ারমেন্ট-টার খুব প্রয়োজন আছে। আর এটাই ‘অরুন্ধতী’ ছবিটাকে অন্য ছবির থেকে আলাদা করে দেয়,” সাফ জবাব কোয়েলের। |
|
পুনর্জন্ম কি তা হলে টলিউডের নতুন থিম? প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ও ‘অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি’ হয়ে ফিরে এসেছেন ‘জাতিস্মর’-এ। আপনিও পুনর্জন্ম থিমের ছবি করছেন?
“হা হা হা, এটাই টলিউডের নতুন থিম কি না বলতে পারব না। এটা একটা হ্যাপি কোইনসিডেন্স বলতে পারেন। আর ‘জাতিস্মর’ ছবির বিষয় আমি সে ভাবে জানি না। আমি শুধু কনসেনট্রেট করতে চাই ‘অরুন্ধতী’তে। যেন একটা নতুন মাত্রা দিতে পারি চরিত্রকে। নিজেকে যেন নতুন করে দেখাতে পারি আবার,” বলেন তিনি। এই ছবি নিয়ে কোয়েলের অধ্যবসায় দেখে মুগ্ধ পরিচালক সুজিত মণ্ডলও। “আমি এতটা ইনভলভড্ হতে কোনও নায়িকাকে দেখিনি। প্রত্যেকটা খুঁটিনাটি বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করছে ও। এটা আমার জীবনের সবয়ে বড় ছবি তো বটেই,” বলছেন পরিচালক।
ফোন রাখার আগে অবশ্য ‘অরুন্ধতী’ নিয়ে শেষ কথা বলেন কোয়েল নিজেই। “অনেক ছবি করেছি তো জীবনে। কিন্তু এই প্রথম কোনও ছবি করতে গিয়ে মনে হচ্ছে নারী হিসেবে আবার যেন নিজেকে আবিষ্কার করলাম। ‘অরুন্ধতী’ আমার কাছে একটা সেল্ফ ডিসকভারি। নিজেকে নতুন করে নারী হিসেবে আবিষ্কার করার জার্নি,” বেশ আবেগপ্রবণ হয়েই বলেন কোয়েল।
যা তোড়জোড়, যা আয়োজন এবং কোয়েলের যে ইনভলভমেন্ট, তাতে দর্শকদের কাছেও কোয়েলকে নতুন করে আবিষ্কার করার আর এক নামই বোধহয় হতে চলেছে ‘অরুন্ধতী’। |
|
|
|
|
|